spot_imgspot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদচট্টগ্রামকক্সবাজারহিমছড়ির পাহাড়-সাগর সম্মিলনে বনবিভাগের নতুন পর্যটন স্পট

থাকছে পিকনিক স্পট, কৃত্রিম লেক, ক্যাকটাস ও অর্কিডের সমাহার

হিমছড়ির পাহাড়-সাগর সম্মিলনে বনবিভাগের নতুন পর্যটন স্পট

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

কক্সবাজারের পরিচিত পর্যটন স্পট হিমছড়ি। দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা, সুউচ্চ পাহাড়চূড়া থেকে সাগরের বিশালতা দেখে বিমুগ্ধ হন পর্যটকরা। মেরিন ড্রাইভের রামুর হিমছড়ির এ পর্যটন স্পটকে আরো আকর্ষণীয় ও পর্যটন বিকাশে আরো নতুন উদ্যোগ নিয়েছে তদারকি সংস্থা কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ।

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের অধীনে মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি ঢুকার মুখেই সড়কের পূর্ব পাশে গড়ে তোলা হচ্ছে পাহাড়ের পাদদেশ ঘেষে দৃষ্টি নন্দন পার্ক (নতুন পর্যটন স্পট)। মেরিন ড্রাইভের পশ্চিমে বিশাল সমুদ্রের ঢেউ পূর্ব পাশে কৃত্রিম লেক, ক্যাকটাস, অর্কিডসহ নানান সবুজ গাছে ঘেরা সবুজ প্রকৃতি ভ্রমণ প্রেমীদের বিমোহিত করবে।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হিমছড়ি বিট ও টহল ফাঁড়ি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান শোভন জানান, বনবিভাগের এই জায়গাটি কলাতলী ও হিমছড়ি মধ্যবর্তী। সড়কের পাশে একসময় পরিত্যক্ত প্রায় ৬ একর জায়গা নিয়ে পর্যটকদের জন্য অর্কিড ও ক্যাকটাস হাউস, পাবলিক টয়লেট করা হয়েছে। নতুন পর্যটন স্পটে পিকনিক পার্টি এলে রান্নার সুব্যবস্থাসহ সব ধরনের সুবিধায় পূর্ণ বিনোদন স্থান করা হচ্ছে এটি। নতুন পার্কের বাউন্ডারি, বিশাল গেইট সম্পন্ন হয়েছে। পার্কের ভেতরে ঢুকলেই নজরে আসে সুউচ্চ পাহাড়চূড়া। এর পাদদেশে দক্ষিনে রয়েছে আঁকাবাঁকা লেক। লেকের চারপাশে হাটা ও বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখানে বসেই সুশীতল হওয়ায় পর্যটকরা প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন। পরিবেশ প্রেমিদের জন্য গড়া হচ্ছে ক্যাকটাস ও অর্কিড় হাউস। এ দুটি হাউসে থাকবে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাকটাস ও অর্কিড। নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা অত্যাধুনিক টয়লেট গড়ার পাশাপাশি লাগানো হয়েছে কৃষ্ণচূড়া, রাধাঁচুড়া, জারুল, পলাশ, স্যাতকাঞ্চন, গর্জন, তৈলসুর, গামারী, ঝাউ, বকুলফুল, সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।

পর্যটন উদ্যোক্তা ও তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। এ শিল্পের বিকাশে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়তে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। গতে তুলছে লক্ষকোটি টাকার অর্ধশতাধিক মেগা প্রকল্প। এ উন্নয়ন যজ্ঞের সাথে তাল মিলিয়ে বনবিভাগের হিমছড়িতে নির্মিতব্য নতুন পার্ক পর্যটন শিল্পকে আরো এগিয়ে নিবে আশা করা যায়।

টুয়াক সভাপতি ও ইউনিভার্সেল ট্যুরিজমের স্বত্বাধিকারী মো. রেজাউল করিম রেজা বলেন, কলাতলী হতে টেকনাফ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভের পশ্চিমে নীল জলরাশি পূর্বে সবুজ বনের সম্মিলন সবাইকে বিমোহিত করে। হিমছড়ি, ইনানী ছাড়া সড়কটির অন্য কোথাও তেমন কোন বিনোদন পার্ক গড়ে না উঠায় শহরের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে পর্যটক ও দর্শণার্থীর ভিড় জমে। সৈকতের বেলাভূমি, সাগরে গোসল ছাড়া ঘোরার জায়গা না থাকায় পর্যটকরা একদিন বা দুদিন থেকে চলে যান। এ পরিস্থিতিতে হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের সাথে নতুন পর্যটন স্পট গড়ে উঠলে বিনোদনের লোভে পর্যটকরা হিমছড়ি-ইনানীর দিকে আরো ধাবিত হবে। দুই কিলোমিটার বেলাভূমিতে চাপ কমবে পর্যটকের। পর্যটনে বাড়বে আয়ের খাত।

হিমছড়ি বন সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান গড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো- গবেষণা ও শিক্ষণ, পর্যটন ও বিনোদন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ। এ রক্ষিত বনাঞ্চলে হাতিসহ মায়া হরিণ, বন্যশূকর ও বানরের দেখা মিলে। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী, পাখি, সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী। হিমছড়ি বনাঞ্চল উল্লুকের আবাসস্থল। পাখি প্রেমীদের জন্য হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি আদর্শ স্থান। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে ময়না, ফিঙ্গে ও তাল বাতাসি উল্লেখযোগ্য। ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে হিমছড়িসহ আশপাশে অনেক পর্যটন স্পট দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর হতে ধীরে ধীরে হিমছড়ি অনেক সংস্কার হয়েছে। কয়েকশ’ সিঁড়ি বেয়ে পাহাড় চুঁড়ায় উঠে সাগর, পাহাড় ও কক্সবাজারের নৈসর্গিক সৌর্ন্দয্য অতি সহজে উপভোগ করা যায়।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, স্বাধীনতা উত্তর সময় হতেই কক্সবাজারের পর্যটনকে সমৃদ্ধ করে এসেছে বনবিভাগ। হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী পাথুরে সৈকত তারই নিদর্শন। এখন সময় বিশ্ব পর্যটনের। মেরিন ড্রাইভের সম্পূর্ণ অংশ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে কলাতলীর শেষ সীমানা ও হিমছড়ির শুরুর পরিত্যক্ত প্রায় ৬ একর জায়গা নিয়ে নতুন পর্যটন স্পটটি তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাউন্ডারী ওয়াল, গেইট, ভেতরের সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখানকার পাহাড়ের পাদদেশে লেকটি সব থেকে আকর্ষণীয় হবে। এ লেকে পর্যটকরা প্যাডেল চালিত বোট নিয়ে ঘুরার ব্যবস্থা থাকছে।

তিনি আরো জানান, এখানে বনবিভাগের জন্য প্রটেক্টেড এরিয়া ম্যানেজমেন্ট সেন্টার বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হবে। সুন্দর একটি স্পটে বনবিভাগের প্রশিক্ষনার্থীরা যেন প্রশিক্ষণ নিতে পারে। শুধু তারাই নয় এটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে পর্যায়ক্রমে এ পর্যটন স্পটকে আরো সমৃদ্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম জানান, এটি পার্ক কাম প্রটেক্টেড এরিয়া কো-ম্যানেজমেন্ট সেন্টার হিসাবে থাকবে। এই জায়গা নিয়ে আমরা একটি মাস্টারপ্লান করেছি। আবাসন প্রকল্প, সেমিনার হলসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকবে এখানে। সেই হিসাবে এই স্পটে ইক্যু টুরিজ্যম, বনবিভাগের সহব্যবস্থাপনা কমিটিদের সভা সেমিনার ও থাকার জন্য আবাসন থাকবে। এটি শুধু বনবিভাগের জন্য নয়, সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। সরকারি ফি দিয়ে এই সেন্টারের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে সবাই। আর তাতে একদিকে যেমন পর্যটন উন্নয়নে সহায়ক হবে তেমনি রাজস্বখাতও সমৃদ্ধ হবে।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ