কক্সবাজারে আন্তঃজেলা সিএনজি অটোরিকশা চোর চক্রের মূলহোতাসহ দু’সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৫। এ সময় চুরির কাজে ব্যবহৃত বিপুল যন্ত্র-সরঞ্জামাদি জব্দসহ চোরাইকৃত একটি সিএনজি অটোরিকশাও উদ্ধার করা হয়।
গত রবিবার (৮ অক্টোবর) কক্সবারের ঈদগাঁও উপজেলার উত্তর পাঁহাশিয়াখালী এলাকায় র্যাব-১৫ এর সিপিএসসি ক্যাম্পের বিশেষ অভিযানে সহযোগীসহ সিএনজি চোর সিন্ডিকেটের মূলহোতা বেলাল ওরফে চোরা বেলাল (২৫) গ্রেপ্তার হবার পর জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার র্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।
তিনি জানান, চোর চক্র আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে দীর্ঘদিন যাবত আন্ত:জেলা সিএনজি চুরির সাথে নিজেরা সম্পৃক্ত। তারা সিএনজি চুরির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্যও দেয়।
চোর চক্র জানায়, যে সিএনজিটি চুরির টার্গেট করা হয় সেটা চুরির স্পট (স্থান) এক সপ্তাহ ধরে রেকি করতেন বেলাল। এ ক্ষেত্রে সাধারণত নতুন সিএনজিই বেশিরভাগ সময় টার্গেট করা হতো। চুরির সময় প্রথমে প্লাস দিয়ে ইঞ্জিন সুইচের কেবল কেটে নতুন ইঞ্জিন সুইচ লাগিয়ে নিয়ে গাড়িটি স্টার্ট দেওয়া হতো। কখনো সময়ের স্বল্পতা থাকলে ধাতব তারের টুকরো দিয়ে নির্মিত ফলস কী দিতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সিএনজি স্টার্ট করে ফেলতেন তারা। এর আগে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে হাতুড়ি দিয়ে সিএনজির দরজার তালাও ভেঙে ফেলতেন তারা। চুরি শেষে সিএনজিটি নিজেদের আস্তানায় নেয়ার পর প্রথমে সিএনজিটির মালিককে মোবাইলে কল দিয়ে তুলনামূলক কম দামে সেটি কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিতেন বেলাল। মালিকের সাড়া না পেলে তখন সেটার নম্বর প্লেট পরিবর্তনসহ নানা কায়দায় পরিচয় মুছে দিয়ে অন্যত্র বিক্রি করতেন।
র্যাব সূত্র জানায়, গত ৩ অক্টোবর উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের দিঘিরবিল এলাকার বাসিন্দা জনৈক মোবারক হোসেনের একটি সিএনজি অটোরিকশা তার নিজ উঠোন থেকে চুরি হয়। পরে অভিযোগের ভিক্তিতে অনুসন্ধানে নেমে চোর চক্রটির সন্ধান পায় র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চুরির ঘটনার ৫ দিনের মাথায় চোর চক্রের সদস্যদেরকে গ্রেপ্তার ও চুরিকৃত সিএনজিটি উদ্ধার করে র্যাব।
সূত্র আরো জানায়, রবিবার রাতে উদ্ধারকৃত সিএনজি অটোরিকশার মালিক মোবারক হোসাইন বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত দুই ব্যক্তি ও পলাতক অপর এক ব্যক্তিকে আসামী করে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আটককৃতদেরকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সিএনজি মালিক মোবারক হোসেন বলেন, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বছরখানেক আগে সিএনজিটি কিনেছিলাম। চুরি হওয়ার পর কিস্তি পরিশোধ কিভাবে করব, সেই চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখছিলাম। এত দ্রুত সিএনজিটা উদ্ধার ও চোর চক্রকে গ্রেফতার করতে পারায় র্যাবকে ধন্যবাদ। আমি অনুরোধ, অপরাধীদেরকে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যেন আর কোনোদিন তারা সিএনজি বা অন্য কিছু চুরি করার সাহস না পায়।
আটককৃত চোর চক্রের সদস্যরা হলেন কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও থানার উত্তর পাহাশিয়াখালী এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ আলমের ছেলে মো. বেলাল (২৫) এবং মো. রেদওয়ান (২১)।
অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া কক্সবাজার র্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ধৃতরা তাদের চক্রের তথ্য দিয়েছে। চুরির ঘটনা প্রতিরোধের পাশাপাশি চোর চক্রের পলাতক ও অপরাপর সদস্যদের গ্রেপ্তারে র্যাব তৎপরতা চালাচ্ছে।