spot_imgspot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদখেলাধূলাদেয়াঙ পাহাড়ের খননকাজ পরিদর্শনে সাংস্কৃতিক সচিব

দেয়াঙ পাহাড়ের খননকাজ পরিদর্শনে সাংস্কৃতিক সচিব

মুহাম্মদ আয়াজ, কর্ণফুলী
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

দেয়াঙ পাহাড়, আনোয়ারা-কর্ণফুলীর মানুষের কাছে খুবই পরিচিত একটি নাম দেয়াঙ পাহাড়। কিছুদিন আগেও অন্য সব পাহাড়ের মতোই একটি সাধারণ পাহাড় হিসেবে বিবেচনা করতেন স্থানীয়রা। কিন্তু ১৬ সেপ্টেম্বর পাহাড়ের জঙ্গল ও গাছপালা কেটে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে চাপা পড়া একের পর এক হাজার বছরের পুরনো— ইটের দেয়াল ও মেঝেরদৃশ্য স্থাপনা। দেয়াঙ পাহাড়কে ঘিরে বর্তমানে সাধারণ মানুষের মনে নানা জল্পনা কল্পনা সৃষ্টি হয়েছে, কি ছিলো হাজার বছর আগে এই দেয়াঙ পাহাড়ে? সত্যি কি ছিলো হাজার বছরের পরনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, নাকি ছিলো রাজার কোনো রাজপ্রাসাদ, নাকি অন্যকিছু এমন হাজারো প্রশ্ন এখন দেয়াঙ পাহাড়কে ঘিরে।

এসব প্রশ্নের সূত্র ধরেই গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দেয়াঙ পাহাড়ে মাটি খনন কাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম। তার থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে একের পর এক চওড়া ইটের দেয়াল ও মেঝেসহ বিভিন্ন স্থাপনার আলামত। দীর্ঘ ২৮ দিন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মাটি খননে বেরিয়ে এলো সেই প্রাচীন নিদর্শন। কিন্তু উন্মোচন করা যায়নি এর রহস্য।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকালে কর্ণফুলী উপজেলার বিশ্বমুড়ায় পত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব,খলিল আহমদ বলেন, কর্ণফুলী উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ে হাজার বছরের পুরনো নিদর্শন পাওয়ায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি, কিন্তু আমাদের চেয়েও বেশি খুশি হওয়ার কথা আপনাদের কারণ এই নিদর্শনটি আপনাদের এলাকায় পাওয়া গিয়েছে। তিনি আরও বলেন আপনারা কেউ বিটা মাঠি ছাড়া হবেন না কারও কথায় আপনারা বিভ্রান্তি হবেন না, বর্তমান সরকার কারও জমি নিয়ে কাজ করলে তাকে তার জমির অধিক মূল্য দিয়ে থাকে। আমরা কাজ করতেছি একের পর এক নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে আশা করা যাচ্ছে আরও খননের পর আরও কিছু বেরিয়ে আসবে আমাদের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে এর রহস্য উন্মোচন হবে। এই স্থাপনা ও নিদর্শন গুলোকে ঘিরে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও মো. মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব রাজিব কুমার সরকার, কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জীনবোধি ভিক্ষু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রতন কুমার, সহযোগী অধ্যাপক ড: ফারজানা রহমান, চট্টগ্রামের জাতিতাত্তিক জাদুঘরের উপপরিচালক ডঃ মোঃ আতাউর রহমান,প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান, কর্ণফুলী উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি পীযূষ কুমার চৌধুরী সহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্র জানায়, জনশ্রুতি মতে কর্ণফুলীর এ দেয়াঙ পাহাড়ে আরাকান রাজাদের বসতি ছিল। এসময় সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা ও অবকাঠামো ছিল। ষোড়শ শতকের দিকে আরাকান রাজার পরাজয়ের পর এসব বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধানের কাজ চলছে। খনন ও অনুসন্ধান শেষে বুঝা যাবে আসলে কি ছিল। কর্ণফুলীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে এটিই প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। দুইজন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে আনা অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও শ্রমিকদের। শ্রমিকরা অতি সতর্কতার সঙ্গে কাজটি করছেন। কাজ শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি চওড়া দেওয়াল আর মেঝের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, আমরা এখনও বুঝতে পারছি না এখানে কি ছিল সেটা। তবে পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে জানা মতে, আরাকান রাজাদের রাজধানী ছিল এ দেয়াঙ। তাদের বসতি ছিল এখানে। খননকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা বলছেন, সতর্ক ও সাবধানতার মধ্যে খনন কাজটি করতে হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। কিছু সন্ধান পেলে আনন্দ লাগে। ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের কাঠামো দেখতে পেলাম। এগুলো হাজার বছরের পুরানো।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ