spot_imgspot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদচট্টগ্রামস্মার্ট যুগে প্রবেশ করছে চসিকের তিন ওয়ার্ড

স্মার্ট যুগে প্রবেশ করছে চসিকের তিন ওয়ার্ড

ইয়াছিন আরাফাত
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

চট্টগ্রামকে দেশের প্রথম স্মার্ট জেলায় রূপান্তরের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে স্মার্ট যুগে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তিন ওয়ার্ড। ওয়ার্ডগুলো হলো— ১৪ নং লালখান বাজার, ১৫ নং বাগমনিরাম এবং ২১ নং জামালখান। স্মার্ট ওয়ার্ডের আওতায় আসা এসব ওয়ার্ডগুলোতে থাকবে না ওভারহেড ক্যাবল বা ঝুলন্ত তার। লাগানো যাবে না কোন পোস্টার। ফুটপাত হবে অবৈধ দখলদারমুক্ত। যাতে থাকবেনা কোন স্থাপনা, দোকানপাট। এছাড়াও স্মার্ট ওয়ার্ডের আওতায় আসা ওয়ার্ডগুলোর সর্বত্রই মনিটরিং করা হবে সিসিটিভির মাধ্যমে। গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা নিশ্চিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের জন্য বিশেষ বুথও স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে এ রূপকল্পের জন্য।

স্মার্ট ওয়ার্ড বাস্তবায়নের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে চসিক। প্রাথমিকভাবে ১০ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে ওভারহেড ক্যাবল অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। স্মাট ওয়ার্ড বাস্তবায়নে পাইপ লাইনের মাধ্যমে ক্যাবলগুলো টানা হবে। আর প্রতি বাসার নিচে বসানো বক্স থেকে বাসা বাড়িতে দেওয়া হবে সংযোগ। এছাড়াও ২১ নং জামালখান ওয়ার্ডে ফুটপাতে বিন দিয়েছে চসিক। স্পন্সর পেলে উৎসে বর্জ্য পৃথক করতে প্রতিটি বাসাবাড়িতে তিনটি করে বিন দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানায় চসিক কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও পুরাতন বিমান অফিস, আলমাস সিনেমা মোড়, জিইসি কভেনশনের পেছনের উন্মুক্ত ডাস্টবিনগুলো সরিয়ে নিবে চসিক।

নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার, স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা এবং নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং, স্মার্ট ইলেক্ট্রিক কেবল ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে একটি স্মার্ট নগরে পরিণত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলাধারাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন, সেই লক্ষ্যে চসিক কাজ করে যাচ্ছে। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে তিনটি ওয়ার্ডকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নিয়েছি। এই তিন ওয়ার্ডকে স্মার্ট ওয়ার্ডে রুপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় সব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নগরবাসী অন্যান্য ওয়ার্ডের সাথে এই ওয়ার্ডের পার্থক্য বুঝতে পারবে। তখন জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হবে। তারাও তাদের ওয়ার্ডকে স্মার্ট করতে আগ্রহী হবে। এভাবে সমগ্র চট্টগ্রামকে আমরা স্মার্ট সিটির আওতায় আনতে পারব।

সিটি কর্পোরেশনের স্মার্ট ওয়ার্ড করার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেন তিন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তারাও নিজেদের ওয়ার্ডকে স্মার্ট করতে চসিককে সহযোগিতা করার ইচ্ছা পোষন করেন। উচ্ছাসের পাশাপাশি সংশয়ও প্রকাশ করেছে অনেকেই। আদৌ সিটি কর্পোরেশন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে নাকি পরিকল্পনা শুধু খাতা কলমেই থেকে যাবে এমনটা নিয়েও ভাবছেন অনেকেই। অনেকের উদ্বেগ,
পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হবে, নাকি অন্যান্য কাজের মতো ধীরগতির হয়ে পড়বে?

কথা হয় ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডের আলমাস মোড় এলাকার একজন রিক্সা চালকের সাথে। তিনি বলেন, এই এলাকায় প্রায় ৭-৮ বছর ধরে রিক্সা চালাই। যখনই এই রাস্তা দিয়ে যাই গন্ধে পেট ভরে যায়৷ যদি তারা ( চসিক কর্তৃপক্ষ) এখানের ময়লাগুলো সরিয়ে ফেলে তারা আমরা গন্ধের হাত থেকে বেঁচে যাব।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হিমেল থাকেন লালখান বাজার ওয়ার্ডে। টিউশনের কারণে দেওয়ান হাট এলাকায় যাতায়াত করতে হয় তাকে। তিনি বলেন, এই এলাকায় অনেক বেশি যানজট। ধুলোবালি তো আছেই। অনেকটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এখানে। যদি সিটি কর্পোরেশন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে জনদুর্ভোগ অনেকাংশে কমে যাবে।

সাফফাত আরা বেগমের সাথে কথা হয় ডা.খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে। অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া সন্তানকে তাকে নিয়ে স্কুলে আসতে হয় নিয়মিত। তিনি জানান, এই এলাকা অনেক মনোরম, চারিদিকের দেয়ালের নান্দনিক সৌন্দর্য দেখতে ভালোই লাগে কিন্তু স্কুল ছুটির পর প্রায় প্রতিদিন এখানে জ্যামে আটকে জীবন থেকে অনেক গুলো সময় হারিয়ে যায়। তাছাড়া যানজটের মধ্যে গাড়ির কালো ধোয়া আর শব্দ দূষণ তো আছেই।

স্মার্ট ওয়ার্ড নিয়ে বাংলাধারার সাথে কথা হয় ১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ডের হাই লেভেল রোডে বসবাসকারী আমিনুল ইসলাম সাজ্জাদের সাথে। তিনি বলেন, মাথার উপর খোলা আকাশ দেখার ইচ্ছা কার না থাকে! কিন্তু বাসা থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকালে মাথার উপর বিভিন্ন ক্যাবল ছাড়া আর কিছুই দেখিনা। রাস্তায় হাটতে গেলে দুর্গন্ধের কারণে দম বন্ধ হয়ে আসে। আমরা এসব থেকে পরিত্রাণ চাই। একটি সুস্থ, সুন্দর ও স্মার্ট ওয়ার্ড সবার কাম্য।

স্মার্ট ওয়ার্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে লালখানবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল বাংলাধারাকে বলেন, নাগরিক সুবিধা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতে একটা অ্যাপস ডেভেলাপ করছি, যেখানে এলাকায় বসবাসকারীদের তথ্য সংগৃহীত থাকবে। পুরো এলাকাকে সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। এছাড়া আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলব এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, জামালখানে খাস্তগীর স্কুল, সেন্ট মেরিস, চিটাগাং আইডিয়াল ও মহসিন স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। স্কুলগুলোতে প্রায় ১০ হাজার স্টুডেন্ট আছে। তাদের সঙ্গে আসে ১০ হাজার অভিভাবক। তাদের বহনকারী গাড়ি, লোকাল গাড়ি এবং পথচারীসহ মিলে পুরো এলাকায় দুই ঘণ্টার জন্য যানজট লেগে থাকে। পুরো এলাকা ব্লক হয়ে থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তণের জন্য আমাদের পরিকল্পনা স্কুলগুলোর শুরু এবং ছুটির সময়ে আলাদা করা। ৩০ মিনিট করে গ্যাপ রাখলে এ সমস্যা নিরসন হবে।

বগিমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন বাংলাধারাকে বলেন, পাখির বাসার মত যে ক্যাবলগুলো আছে সেগুলো আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাবে। স্মার্ট ওয়ার্ড নিয়ে একটা পরিকল্পনা ডিসি অফিসে জমা দিয়েছি। যেখানে ড্রেনেজ প্রকল্প, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যানজট নিরসন, বিজ্ঞাপনের জায়গা নির্ধারণ সহ অন্যান্য উন্নয়নমুলক বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। মানুষের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ