দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতনীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজা। ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে ৫ দিনের ধর্মীয় এ উৎসবের। কক্সবাজারে এবার ঘট ও প্রতিমা মিলে প্রস্তুত করা হয়েছে ৩১৫টি পূজা মন্ডপ।
বছরের শেষ ও শুরুর দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি গড়তে দূর্গাপুজায় হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে এমন শংকার কথা জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারে ক্যাম্পে দূর্গাপূজা পালনে এ আতংক বলে উল্লেখ করেছেন তারা। ক্যাম্প এবং আশপাশের মন্ডপেও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। জেলায় দূর্গাপূজা নিয়ে ১৭ অক্টোবর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে এসব কথা তুলে ধরেন পরিষদ সভাপতি উজ্জ্বল কর ও সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দূর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। ইতোমধ্যে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের একাধিক টিম টেকনাফ-উখিয়া মহাসড়ক, কক্সবাজার সদরের লিংকরোড়, কলাতলী ডলফিন মোড়, শহরের প্রধান সড়ক, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করেছে। টহল বাড়ানো হয়েছে ক্যাম্প এলাকাতেও।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া তথ্য মতে, ২০ অক্টোবর শুরু হয়ে ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দূর্গাপূজা। এবারে জেলায় ১৫১টি প্রতিমা এবং ১৬৪টি ঘট পূজা মন্ডপ রয়েছে। একটি মাত্র পূজা মন্ডপ রয়েছে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে ২০ জন করে তিন হাজার ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। আর মন্ডপ থাকবে সিসি ক্যামরার আওতায়।
জেলা পূজা কমিটির সভাপতি উজ্জল কর বলেন, এতকিছুর পরও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা করছে সবাই। তবে জেলাব্যাপী শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে দূর্গাপূজা উদযাপনের লক্ষ্যে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় সভা করে করণীয় নির্ধারনের চেষ্টা করা হয়েছে।
উজ্জ্বল কর বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি গোষ্ঠী দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। আর দূর্গাপূজাকে ঘিরে বড়ধরনের নাশকতার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছিনা। তাই যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর করণীয় নির্ধারণে শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে আমরা মতবিনিময় করেছি। আশা করছি সুষ্ঠু সুন্দরভাবে প্রতিমা বিসর্জন শেষ করতে পারবো।
পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আমরা পূজা মন্ডপে নাশকতার আশঙ্কা করছি। বিষয়টি শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ বলেন, যারা দুর্বৃত্ত তাদের ধর্মীয় কোন পরিচয় নেই। তাদের বিরুদ্ধে সকল ধর্মবর্ণের লোকজনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ডেইলি স্টারের কক্সবাজারস্থ নিজস্ব প্রতিবেদক ও সাংস্কৃতিক কর্মী মুহাম্মদ আলী জিন্নাত বলেন, অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
উখিয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেহ আহমেদ বলেন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে একটি পূজা মন্ডপ রয়েছে। এটি আরআরআরসি ও উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে দেখভাল করছে। পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ মন্ডপে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা থাকবে। সুতরাং আতংকের কোন কারণ নেই।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুরিশ সুপার (প্রশাসন ও সার্বিক) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সুন্দর-সুষ্ঠূ ও শান্ত পরিবেশে পূজার আয়োজন শেষ করতে চাই আমরা। কোথাও যেন আইন শৃঙ্খলার ব্যত্যয় না ঘটে সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে। সিসিটিভির আওতায় থাকবে প্রতিটি মন্ডপ। কোথাও কোন সমস্যা দেখা দিলে আতংকিত না হয়ে আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।