চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করলেও নির্ধারিত সময়ের আগে তা প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মানবিক কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিপ্লিনারি কমিটির সভায় তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হলেও বিষয়টি এতদিন গোপন রাখা হয়।
বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থীরা হলেন চবি ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ও আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ- দপ্তর সম্পাদক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হান। তারা দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয় বগিভিত্তিক উপ-গ্রুপ সিএফসি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী।
গত ১৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে চায়ের দোকানে চেয়ারে বসা নিয়ে চবিসাস সদস্য ও ঢাকা স্টেটের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাতিনিধি দোস্ত মোহাম্মদকে মারধর করেন দুই ছাত্রলীগ নেতা খালেদ মাসুদ ও আরাফাত রায়হান , ঘটনার পর ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ওই দুই শিক্ষার্থীকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসময় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও জানায় তারা। তবে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই গত ৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিপ্লিনারি কমিটির সভায় তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ( ১৯ অক্টোবর) বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায় মানবিক কারণে তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য ও আলাওল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফরিদুল আলম বলেন, তাদের অভিভাবকরা এসে তাদের হয়ে ক্ষমা চেয়েছে ও উপাচার্যের সামনে মুচলেকা দিয়ে গেছে। পরে ডিসিপ্লিনারি কমিটি তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করেছে।
বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে চবি প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, আগেও তাদের ইয়ার ড্রপ ছিল, এজন্য মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ বলেন, আমার ওপরে বিনা কারণে সুস্পষ্ট হামলার ঘটনায় নায্য বিচার করতে ব্যর্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দিতে অপরাধীদেরকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করে। এখন এই সামান্যতম শাস্তিটুকুও প্রত্যাহার করেছে।
তিনি বলেন, এটি আমার সাথে রীতিমতো প্রতারণা ও অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই আদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অপরাধীদেরকে উৎসাহিত ও পুরস্কৃত করল। আমি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং কাদের স্বার্থে, কেন বহিষ্কার আদেশ তড়িঘড়ি করে গোপনে প্রত্যাহার করা হলো, প্রশাসনের কাছে এর সঠিক ব্যাখ্যা চাই।
সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় বহিষ্কৃতদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু বলেন, এই প্রশাসনের নির্লিপ্ততা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে অপরাধীদের কাছে জিম্মি চবি প্রশাসন। বার বার অপরাধীদের ক্ষমা করে সেটিই প্রমাণ করেছে তারা। এই প্রশাসনের কাছে সুবিচার প্রত্যাশা করাও যেন পাপ৷ এই প্রশাসনের জন্য শুধুই নিন্দা।
সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় বহিষ্কৃতদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘটনায় চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু বলেন, এই প্রশাসনের নির্লিপ্ততা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে অপরাধীদের কাছে জিম্মি চবি প্রশাসন। বার বার অপরাধীদের ক্ষমা করে সেটিই প্রমাণ করেছে তারা। এই প্রশাসনের কাছে সুবিচার প্রত্যাশা করাও যেন পাপ৷ এই প্রশাসনের জন্য শুধুই নিন্দা।
অবশ্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সাংবাদিক নির্যাতন ও মারধরের ঘটনা নতুন কিছু নয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মোশাররফ শাহের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ক্যাম্পাসে কর্মরত দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি মারজান আক্তারকে হেনস্থা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে এসব ঘটনারও কোনো সুরাহা করেনি প্রশাসন।