নিরাপদ ও পর্যটন-বান্ধব ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ার লক্ষ্যে পর্যটন শহর কক্সবাজারে যানবাহন চালকদের স্মার্ট ডাটাবেস ‘কক্স-ক্যাব’ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ-সরকারি (শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি) ক্যাটাগরিতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার-২০২৩’ পেলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী (পিপিএম-সেবা)। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর প্রণীত নতুন এই জাতীয় পুরস্কারটি গত ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমপি। এই জাতীয় পুরস্কার অর্জনে জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য অনুপ্রাণিত ও কর্মস্পৃহায় উজ্জীবিত বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্বিক) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলামের সার্বিক নির্দেশনায় পর্যটন নগরীতে নিরাপদ ও পর্যটন-বান্ধব ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের লক্ষ্যে কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের ‘কক্স-ক্যাব’ উদ্যোগটি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী। এর আওতায় ইতোমধ্যে সাড়ে ৩হাজার যানবাহন চালকদের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য স্মার্ট ডাটাবেস ইনপুট দেয়া হয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে তিন হাজার ৩০০ চালকদের মাঝে কক্স-ক্যাবের লোগো সম্বলিত ভেস্ট (পোশাক)। প্রায় আড়াই হাজার চালকদের স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হয়েছে যার এক পাশে চালকের ছবি ও অন্য পাশে কিউ.আর কোড রয়েছে। এ কিউ.কোডটি স্ক্যান করলে মোবাইলে চালকের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য ও গাড়িরসহ পাওয়া যাবে। স্মার্ট কার্ডে ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিউটি অফিসারের নাম্বার, জেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের নাম্বার এবং জাতীয় জরুরী সেবার নাম্বার রয়েছে। যে কোন যাত্রী বা পর্যটক হয়রানির শিকার হলে সহজে অভিযোগ জানাতে পারবেন বা সহযোগিতা চাইতে পারবেন।
তিনি আরো জানান, কক্স-ক্যাব ডাটাবেসের ওয়েবসাইট www.coxscab.com ভিজিট করলে পর্যটকরা পাবেন একটি পূর্ণাঙ্গ ট্যুরিস্ট গাইডও। সকল হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট, ক্যাফে-রেস্টুরেন্ট, পর্যটন স্পট, রেন্ট-এ কার ও ট্যুর এন্ড ট্রাভেল এজেন্সির তালিকা এবং পর্যটন এলাকায় চলাচলরত ইজিবাইকের ভাড়ার তালিকাও উক্ত ট্যুরিস্ট গাইডে সংযোজিত হয়েছে। ‘কক্স-ক্যাব’ উদ্যোগ বাস্তবায়নের পর থেকে পর্যটন নগরীতে রোহিঙ্গা চালক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অনিরাপদ চালকদের গাড়ি চালানো থেকে নিবৃত করা সম্ভব হচ্ছে। যার ফলে পর্যটন এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ পর্যটক হয়রানি ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ইনোভেটিভ উদ্যোগকে স্বীকৃতি ও পুরস্কৃত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর প্রণীত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার’টি প্রথম বার দেয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ে ১১টি ও জেলা পর্যায়ে ১২টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, দেশের প্রধানতম পর্যটন আকর্ষণ কক্সবাজারে নিরাপদ ও পর্যটন-বান্ধব ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ার লক্ষ্যে কক্স-ক্যাব বাস্তবায়নে নিরলস ভাবে কাজ করেছে ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি সদস্য। সবার পরিশ্রমের স্বীকৃতি এই অর্জন। কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের ডাকে সাড়া দিয়ে চিরায়ত অভ্যাস ত্যাগ করে যারা কক্স-ক্যাবের লোগো সম্বলিত ভেস্ট গায়ে জড়িয়ে নিয়ম মেনে পর্যটন এলাকায় গাড়ি চালিয়ে পর্যটন-বান্ধব ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতায় করছেন, এই সম্মান তাদের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার নিতে পারার মত স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞ জানায়।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ভালো কাজের স্বীকৃতি কাজের গতি বাড়ায়, আরো দায়িত্বশীল হতে অনুপ্রেরণা দেয়। এই জাতীয় পুরস্কার অর্জনে জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য অনুপ্রাণিত ও কর্মস্পৃহায় উজ্জীবিত।