চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইবুন্যালের পর এবার নারীর শ্লীলতাহানি ও বসতবাড়ি দখলের অভিযোগে উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়েছে। তারই ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহবুবুল আলম (৪৫) নামে এক ব্যক্তি সোমবার (২৩ অক্টোবর) এ মামলাটি দায়ের করেন (সিআর-৭০১/২০২৩)। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছেন। উখিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফাহমিদা সাত্তার’র আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
গৃহবধূর শ্লীলতাহানি ও বসত বাড়ি দখলের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী আবুল কালাম ছিদ্দিকী।
মামলার বাদি মাহবুবুল আলম হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পূর্ব মরিচ্যার মিয়াজান ফকিরের ছেলে।
চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী (৪৫) ছাড়াও মামলায় অভিযুক্ত অন্যান্যরা হলেন ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কবির আহমদের ছেলে করিম উল্লাহ, তার ভাই এহেছান (৩০), মেহের আলীর ছেলে মো. রায়হান (৩৯), ছৈয়দ নুরের ছেলে ইনজিমামুল হক (২৮), ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছালামাত উল্লাহর ছেলে এনায়েত উল্লাহ (৪০) এবং পশ্চিম মরিচ্যার জাগির আহমদের ছেলে জসিম উদ্দিন।
বাদী তার এজাহারে বলেন, মরিচ্যা বাজারে তার বসতবাড়ির পার্শ্বে দীর্ঘদিন ধরে লাকড়ি ও কলার আড়ৎ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তার বসতভিটার জমি ইমরুল কায়েসকে বিক্রির প্রস্তাব দেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাকে প্রতিনিয়ত মেরে ফেলার হুমকি দিতো। তারপরও জমি বিক্রিতে রাজি না হওয়ায় গেল ১৮ এপ্রিল একটি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয় চেয়ারম্যান। একইদিন সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস ২০/২৫ লোক নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাদীর বসতবাড়ি ও গৃহে হামলা চালায়। এ সময় তার অনুসারীরা প্রায় একলাখ টাকার মালামাল, গৃহপালিত গরু লুট করে নিয়ে যায়। এসময় বসতবাড়ীটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলায় প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, এসময় বাদিও স্ত্রী বাঁধা দিতে গেলে তাকে চুল ধরে টানা হেচড়া ও মারধর করে শ্লীলতাহানি করা হয়। বাদি কারাবন্দি থাকায় স্ত্রী-সন্তান মানবেতর জীবন যাপন করেছে। ১৮ অক্টোবর মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর স্থানীয় লোকজনের কাছে বিচার দেন তিনি। কিন্তু ন্যায় বিচার না পেয়ে অবশেষে অভিযোগটি আদালতে দায়ের করা হলো।
মামলার বাদী মাহবুবুল আলম বলেন, আমার বিরুদ্ধে ঘোড়ার মাংস বিক্রির মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাকে একটি মামলায় আসামী করা ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। চেয়ারম্যান ইমরুল-ই গোড়াটি জবাই করে আমার উপর অভিাযোগ তুলে দেন। পওে, স্বপ্রণেদিত হয়ে আমাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তার আসল উদ্দেশ্য ছিল আমার বসত-ভিটা দখল করা। জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের জমি কেড়ে নেয়ার ঘৃণ্যতম কাজ শুরু করেছেন তিনি। আমি যতদিন কারাগারে ছিলাম ততদিন আমার স্ত্রী সন্তান খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছে। আমি এর ন্যায় বিচার প্রার্থণা করছি।
অভিযোগ ও মামলার বিষয়ে জানতে উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার হোয়াটঅ্যাপে বক্তব্য চেয়ে ভয়েস পাঠানো হয়, তারও কোন উত্তর করেননি তিনি।
তবে মামলার বিষয়টি জেনে, চেয়ারম্যান ইমরুল তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেন-শব-ই কদর এর দিন ঘোড়া জবাই করা মরিচ্যার কসাই মাহাবুর সাথে আজকে আদালত চত্তরে কে কে ছিলো একটু খবর নিন।
উল্লেখ্য, সদ্য সমাপ্ত কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে এক পথসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আটটি কেন্দ্রে ‘ভোট ডাকাতি’ করেছিলেন বলে বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হন চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস। এ ঘটনায় ইসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে। দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল গত ১২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইবুন্যালে ইমরুলের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। গত ১৬ অক্টোবর তার বাড়ির পাশ থেকে তিন হাজার ৩৩০ কেজি ভিডাব্লিউবি’র চাউল জব্দের ঘটনায় পুরো কক্সবাজারে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এবিষয়ে মামলাও হয়েছে। ইমরুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরো নানা অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক।