spot_imgspot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদজাতীয়আজ বিজয়া দশমী, দুর্গা ফিরবেন কৈলাসে

আজ বিজয়া দশমী, দুর্গা ফিরবেন কৈলাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

নবমী নিশি কেটে উঁকি দিয়েছে নতুন সূর্যালোক। তবে নিয়ে এসেছে বিষাদের ছায়া। আজ বিজয়া দশমী, পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন। চার দিন আগে ষষ্ঠীতে বোধনের মাধ্যমে যে উৎসবের শুরু, আজ দশমীতে দেবীকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সেই উৎসব। থেকে যাবে কেবল আগামী বছর ফের দেবীতে মর্ত্যলোকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আর আশাবাদ।

গত শুক্রবার (২০ অক্টোবর) মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুর্গোৎসব তথা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। তবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ সামিল হয়েছিলেন সে উৎসবে। আজ মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সেই আনুষ্ঠানিকতার ইতি ঘটবে।

বিজয়া দশমীর দিনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে রয়েছে দেবী দুর্গার দশমী বিহিত পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন। সকাল থেকেই শুরু হয় দশমী পূজা। হয়ে যাবে মন্ত্র পাঠ, দেবী দূর্গার উদ্দেশে ফুল নিবেদন ও আশীর্বাদ প্রার্থনা।

চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম প্রাঙ্গণে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় পূজাতত্ত্ব আলোচনার পর দশমী পূজার পুষ্পাঞ্জলি প্রদান অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৯টায়। বেলা সাড়ে ১০টায় দর্পণ বিসর্জন এবং পরিশেষে সন্ধ্যারতির পর প্রতিমা নিরঞ্জন ও শান্তিজল প্রদান করা হবে।

এ বছর নগরের জেএমসেন হলসহ ১৬ থানায় ব্যক্তিগত/ঘট পূজাসহ ২৯৩টি পূজামণ্ডপ এবং চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় ২ হাজার ১৭৫ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা চলছে। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা ধরাধামে এসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে, ফিরছেন একই বাহনে।

প্রতি বছরের মতো এবারও নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। বিজয়া দশমীর পূজার পরপরই দুপুরের পর থেকে নগরীর প্রতিটি মণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমাগুলো বিসর্জনের জন্য নেওয়া হবে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, অভয়মিত্র ঘাটে কর্ণফুলী নদীর তীর, কাট্টলী সৈকত, কালুরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার পুকুরে।

সিএমপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, পতেঙ্গার মূল সৈকতের বেড়িবাঁধ ও পারকির চর সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের দুটি ভেন্যু ঘিরে প্রতিমা বহনকারী যানবাহনগুলোর আগমন ও বহির্গমন রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিমা বহনকারী গাড়িগুলো সিমেন্ট ক্রসিং বামে মোড় নিয়ে বিমানবন্দর হয়ে সি-বিচে প্রবেশ করবে। এছাড়া আশপাশ থেকে আগত প্রতিমাবাহী গাড়ি বারেক বিল্ডিং, নিমতলা মোড়, কাস্টমস মোড়, সল্টগোলা, ইপিজেড ক্রসিং, সিমেন্ট ক্রসিং, গুপ্তখাল, বিমানবন্দর ও বাটারফ্লাই ক্রসিং হয়ে পতেঙ্গা বিচে প্রবেশ করবে। সেখানে প্রতিমা বিসর্জনের পর যানবাহনগুলো কাঠগড়, স্টিল মিল বাজার ও সিমেন্ট ক্রসিং হয়ে বেরিয়ে যাবে। পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, প্রতিমা বিসর্জন দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সম্পন্ন করতে পূজা কমিটিগুলোকে অবহিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন বলেন, রানি রাসমণি বারুণী স্নানঘাট তথা সমুদ্রতীর্থ সংরক্ষণে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ চাই।

দশমী পূজা উদ্‌যাপনের প্রধান আচারের অংশ হিসেবে নারী ভক্তরা বিভিন্ন মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করেন, যা ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলার অংশ। এই আচারে দেবী দুর্গার শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে হিন্দু নারীরা একে অন্যের গায়ে সিঁদুর মাখিয়ে জীবনে সমৃদ্ধি কামনা করেন। এ দিন সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে।

দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে পাঁচ দিন বাপের বাড়ি অর্থাৎ মর্ত্যলোকে কাটিয়ে দেবী ফিরবেন দেবালয়ের (স্বর্গ) কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে। সঙ্গে থাকবে চার সন্তান লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শঙ্খ, খোল ও ঢাকের মতো বাদ্যযন্ত্রের সুরে দুর্গার স্তূতি গাইতে গাইতে প্রতিমাকে নিয়ে যাবে নদী, সেখানেই হবে বিসর্জন।

শাস্ত্রমতে, বিজয়া দশমীর দুটি তাৎপর্য। একটি দেবী দুর্গার বিজয়। অন্যটি রামচন্দ্রের বিজয়। বিজয়া দশমীর আরও একটি তাৎপর্য রয়েছে— হিমালয় রাজকন্যা দেবী দুর্গা বা পার্বতী কিংবা উমা নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছিলেন দেবতা শিবকে। শিবের আবাসস্থল কৈলাস পর্বত। সেখান থেকে দেবী দুর্গা বা পার্বতী পিতৃগৃহে আসেন আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী— এই তিন দিন পিত্রালয়ে থাকার পর দশমী তিথিতে পতিগৃহ কৈলাসে প্রত্যাবর্তন করেন। কন্যাকে বিদায় জানানোর বেদনায় বিধুর-বিষাদাচ্ছন্ন হয় দশমী তিথি। তাই দশমী তিথি বিষাদের-বেদনার।

এভাবে দেবী দুর্গা হয়ে ওঠেন ঘরের মেয়ে, যে কি না নাইওরে এসে, তিন দিন থেকে চার দিনের দিন স্বামীগৃহে ফিরে যান। এভাবে দুর্গাপূজার মধ্যে বাঙালির সমাজ ও যাপিত জীবনের প্রতিফলন ঘটে।

আবার ত্রেতা যুগে লঙ্কার রাজা রাবণ রামের স্ত্রী সীতা দেবীকে হরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। রাবণকে পরাজিত করে রামচন্দ্র পালন করেন বিজয় উৎসব। এ থেকেও পালিত হয় বিজয়া।

আবার মহিষাসুরকে বধ করতে দেবীর যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ হয়েছিল চার দিন। তিথির হিসেবে সেগুলো ছিল আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী। এ শুক্লা দশমী তিথিতে বিজয় হয়েছিল বলে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিকেই বলা হয় বিজয়া দশমী।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ