চট্টগ্রাম নগরীতে টানা ৫ দিন ধরে চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। বাসা বাড়ি ও সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ফিলিং স্টেশনে নেই গ্যাসের সরবরাহ। এতে করে বিপাকে পড়েছেন সিএনজি চালিত যান চালকসহ নগরীর অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দারা। এদিকে সংকট তীব্র আকার ধারণ করলেও কর্তৃপক্ষ জানেনা ঠিক কবে স্বাভাবিক হবে গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ।
নগরীর আসকারদিঘীর পাড়, চকবাজার, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন, আগ্রাবাদ, অলঙ্কার, বন্দরসহ অধিকাংশ এলাকায় সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত থাকছেনা গ্যাসের সরবরাহ। ভুক্তভোগীরা জানান, গ্যাস সংকটের কারণে সময় মতো খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যাসহ নানা কাজে ব্যাঘাত হচ্ছে। এছাড়াও গ্যাসের সংকটে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন যানচালকরা। ঘন্টার পর ঘন্টা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও মিলছেনা গ্যাস।
এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে নগরীর একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে নগরবাসীকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান নাজির বলেন, সিএনজিতে ওঠার সময় মামা (সিএনজি চালক) বললেন ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েন। গ্যাস সংকট, ঠিক মতো গাড়ি চালাতে পারছিনা। ৬ টাকার ভাড়া তিনি ৮ টাকা নিলেন।
নগরীর এস এইচ খান এন্ড সনস (সিএনজি) ফিলিং স্টেশনে গ্যাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজি চালক ফরিদ হাসান বলেন, গত কয়দিন ধরে গ্যাস না থাকায় গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে। আবার গ্যাস নিতে লাইনে দাড়াতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। তাও পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস পাচ্ছিনা।
পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদনগরের বাসিন্দা দিলশাদ জাফর বলেন, প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে গ্যাস থাকছে না। আবার দীর্ঘ সময় পর গ্যাস আসলেও চাপ থাকছে না বললেই চলে। যার ফলে রান্না বান্না করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।
গত ২১ অক্টোবর নগরের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করে দেখা দেয় গ্যাস সংকট। এদিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা ৪ ঘণ্টা ধরে সরবরাহ বন্ধ থাকে গ্যাসের। ২২ অক্টোবরের চিত্রও ভিন্ন নয়। বিকেল ৩টার পর একটু একটু করে আসতে শুরু করে গ্যাস। সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবারে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ একবারেই বন্ধ ছিল। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে সীমাহীন দূর্ভোগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আমিনুর রহমান বাংলাধারাকে বলেন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড দুটি টার্মিনাল থেকে গ্যাস পেয়ে থাকে। মহেশখালীর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালে সংস্কার কাজের কারণে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। এজন্য সাময়িক সংকট তৈরি হয়েছে। আবার সামনে বরই মৌসুমের জন্য সারকারখানাগুলোকে ও পাওয়ার প্লান্টে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। এজন্য কিছু ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে এটি দীর্ঘদিনের জন্য নয়।
চলমান গ্যাস সংকট পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এগুলো আমাদের হাতে না, পেট্রোবাংলার আর একটি কোম্পানি রুপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) এব্যাপারে ডিল করে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের তথ্যমতে, কেজিডিসিএলের মোট গ্রাহক ও সংযোগ আছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি। চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যায় ২৭০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকি গ্যাস পাওয়া যায় সামিট টার্মিনাল থেকে। বর্তমানে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।