spot_imgspot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদচট্টগ্রামপ্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রামবাসী

প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রামবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

রাত পোহালেই চট্টগ্রামে আসছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বহুল প্রত্যাশিত মাল্টিলেন আন্ডারওয়াটার এক্সপ্রেসওয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করবেন আনোয়ারার কোরিয়ান ইপিজেডের মাঠে। প্রধানমন্ত্রীর এ আগমনকে ঘিরে চট্টগ্রাম সেজেছে নবরূপে। নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কজুড়ে এখন তোরণের ছড়াছড়ি। রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে সেজেছে নগরী। উৎসবের আমেজ চট্টগ্রামজুড়ে। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকাসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

আজ শনিবার সকালে নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি টানেল পাড়ি দিয়ে আনোয়ারায় গিয়ে কোরিয়ান ইপিজেডের মাঠে জনসভায় যোগ দেবেন।

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করেছে। ইতিমধ্যে জনসভার প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। মঞ্চসহ জনসভাস্থলের অবকাঠামোগত কাজে ব্যস্ত প্রায় দু’শ শ্রমিক। বসে নেই দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতাকে বরণ করে নিতে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে পৃথক বর্ধিত সভা করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ স্থানীয় নেতাদের নিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুতি কার্যক্রম তদারক করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে মাহবুবউল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল একসময় আমরা উন্নত দেশগুলোতে দেখতাম। অবাক করার বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই প্রকল্প বাংলাদেশে তৈরি করেছেন। কর্ণফুলী টানেলের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাও ঐতিহাসিক হবে। জনসভার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মঞ্চ, সাজসজ্জার কাজও শেষ পর্যায়ে। আশা করছি, এটি স্মরণকালের ঐতিহাসিক জনসভা হবে। যেহেতু টানেল স্মরণকালের একটি ঐতিহাসিক প্রজেক্ট। সুতরাং টানেলকে কেন্দ্র করে জনসভাও হবে ঐতিহাসিক। আর এটি হবে স্মার্ট জনসভা।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলসহ মোট ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাতটি প্রকল্প রয়েছে। অনেকগুলোর কাজই প্রায় শেষ হয়েছে। যেগুলো হয়নি সেগুলো আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে।’

টানেল উদ্বোধন ও জনসভা ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারায়। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জনসভাস্থলসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা ঘিরে রেখেছে। সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাদা পোশাকের গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তায় প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি বাইরের জেলা থেকেও এখানে পুলিশ আসবে। ট্রাফিকের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের যেন কোনো ভোগান্তি না হয় সেজন্য ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তার প্রশ্নে যেসব বিষয় জড়িত প্রত্যেকটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা কোনো ছাড় দেব না। আমরা চাই নিরাপত্তার পাশাপাশি এখানে জনসমাবেশ স্থলে আগত জনগণ যেন উৎসবমুখর পরিবেশ পায়।’

কর্মসূচির অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে সকাল ১০টার পর একটি ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করবেন এবং টানেল পার হওয়ার পর সকাল ১১টায় আনোয়ারা নদীর দক্ষিণ তীরে আরেকটি ফলক উন্মোচন করবেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী দিনের খাম এবং প্রথম নদীর তলদেশে সড়ক টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি বিশেষ সিলমোহরও অবমুক্ত করবেন। তবে টানেলটি ২৯ অক্টোবর থেকে যানবাহনের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

টানেল উদ্বোধনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) মাঠে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখা এ উপলক্ষে সমাবেশের আয়োজন করছে। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং বন্দর নগরীর কোটি বাসিন্দার স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে এই টানেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম টানেল বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে।

প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, টানেলটি চট্টগ্রাম নগরীকে চীনের সাংহাই নগরীর মতো ‘দুটি শহরকে একটি নগরীতে’ পরিণত করবে এবং এটি দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করবে। শিল্পায়নের অপার সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাবে এবং নগরীর পরিধিকে প্রসারিত করার মাধ্যমে সমগ্র অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটাবে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক চীনের এক্সিম ব্যাংক অর্থায়ন করেছে। টানেলের পুরো রুটের দৈর্ঘ্য হলো ৯.৩৯ কিলোমিটার (৫.৮৩ মাইল), সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার (২.০৬ মাইল) ও এর ব্যাস ১০.৮০ মিটার (৩৫.৪ ফুট)। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নেটওয়ার্ক উন্নততর হবে। চীনের কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এটি নির্মাণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা টানেলটির বোরিং ফেজও উদ্বোধন করেন।

টানেলটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে সড়ক পথের দূরত্ব কমিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বন্দরনগরীতে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্যান্য অংশে যেতে সুবিধা করে দেবে। এটি চট্টগ্রাম বন্দর ও আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে কর্ণফুলী নদীর ওপর দুটি সেতুর যানজটও কমে আসবে।

ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টি যানবাহন টানেলটি ব্যবহার করতে পারবে, যা বছরে প্রায় ৭.৬ মিলিয়ন যানবাহনের সমান। টানেলটি দেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.১৬৬ শতাংশ বাড়াতে সহায়তা করবে।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ