আগামীকাল শনিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু টানেলের’। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলটি উদ্বোধন করবেন। টানেলটি উদ্বোধন হলে চট্টগ্রামের সাথে আনোয়ারার দূরত্ব কমে রূপান্তরিত হবে ওয়ান সিটি টু টাউনে। যার ফলে মাত্র ৫ মিটিটেই আনোয়ারা থেকে গ্রামের মানুষ প্রবেশ করবে চট্টগ্রাম শহরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলটি উদ্বোধনের পর রোববার ভোর থেকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ টানেলে যান চলাচলে টোলের পরিমাণও ইতোমধ্যে নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এ নিয়ে গত জুলাই মাসে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে সরকার। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, গাড়ি, জিপ বা পিকআপের জন্য ২০০ টাকা এবং মাইক্রোবাসের জন্য টোল ২৫০ টাকা। বাসের আসন ৩১ আসন বা এর কম হলে টোল ৩০০ টাকা, ৩২ আসন বা তার বেশি হলে ৪০০ টাকা এবং ৩-এক্সেল বাসের জন্য টোল ৫০০ টাকা। ট্রাক-৫ টন পর্যন্ত ৪০০ টাকা, ৮ টন পর্যন্ত ৫০০ টাকা এবং ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকের টোল ৬০০ টাকা। মালবাহী ৩ এক্সেল ট্রেলারের টোল ৮০০ টাকা, ৪ এক্সেল ট্রেলারে ১ হাজার টাকা এবং ৪ এক্সেলের বেশি প্রতি এক্সেলের জন্য ১ হাজারের সঙ্গে ২০০ টাকা যোগ করে টোল দিতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
এদিকে আগামীকাল উদ্বোধনের সাথে সাথেই আনোয়ারা চট্টগ্রাম হবে ওয়ান সিটি টু টাউন। বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ রূপ দিবে এ টানেলটি। চীনের অন্যতম বৃহত্তম নগরী সাংহাইতে ২০০৯ সালে টানেল উদ্বোধনের পরে অপর প্রান্তে নতুন নগরী তৈরি হয়েছিল। সাংহাই নগরীর অনুন্নত অপর প্রান্ত দ্রুতই বিকশিত হয়ে নতুন শহর তৈরি হয়েছিল। তারপর থেকে সারা বিশ্বে সাংহাই নগরীর ট্রেডমার্ক হয়ে উঠে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ নামটি। ঠিক সে আদলেই চট্টগ্রামের নতুন শহর গড়ে উঠবে নদীর অপর প্রান্তের গ্রামে। এতে করে চট্টগ্রাম নগরীর অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক পরিবর্তন হবে চোখে পড়ার মতো।
সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, আনোয়ারা প্রান্তে ব্রিজ ভায়াডাক্টের দৈর্ঘ্য ৭২৭ মিটার। অ্যাপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার। টোল প্লাজার দৈর্ঘ্য ৭ হাজার ৬০০ বর্গমিটার। এ ছাড়া আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ সড়কের সঙ্গে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্ট (উড়াল সড়ক) রয়েছে। টানেলে আন্ডার পাসের সংখ্যা আনোয়ারা প্রান্তে পাঁচটি ও পতেঙ্গা প্রান্তে একটি আর কালভার্টের সংখ্যা ১২টি। এ ছাড়া সার্ভিস এলাকায় ৩০টি বাংলো, একটি ভিআইপি বাংলোসহ মোটেল মেস, হেলথ সেন্টার, কনভেনশন সেন্টার, জাদুঘর, সুইমিংপুল, ব্রিজ, মসজিদ ও অভ্যন্তরীণ রাস্তা থাকবে।
সেতু বিভাগ জানায়, দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। এ দুই টিউব তিনটি সংযোগ পথের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। বিপদের সময় অন্য টিউবে গমনের জন্য এ ক্রস প্যাসেজগুলো ব্যবহার হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার ও ভেতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় টানেল তৈরির প্রকল্পটি। যার ব্যায় ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকায়। অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। টানেলের শতভাগ কাজ শেষ হওয়ার পর টানেলটি এখন অপেক্ষায় উদ্বোধনের।