দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেল চালু হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে চালুর ফলে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। এখন বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। আজ শনিবার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করবে টানেল যুগে।
‘বঙ্গবন্ধু টানেল’র নির্মাণ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। টানেলটি এখন যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, টানেলটি চট্টগ্রাম বন্দরকে সরাসরি আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করা ছাড়াও সরাসরি কক্সবাজারকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। ৩৫ ফুট প্রস্থ এবং ১৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট দুটি টিউব ১১ মিটার ব্যবধানে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ভারী যানবাহন সহজেই টানেলের মধ্য দিয়ে চলতে পারে। টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪০ কিলোমিটার। যার সঙ্গে ৫.৩৫ কিলোমিটারের অ্যাপ্রোচ রোডের পাশাপাশি ৭৪০ মিটারের একটি সেতু রয়েছে, যা মূল শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিম দিককে এর পূর্ব দিকের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে টানেলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে আনবে। এই টানেলে যানবাহন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে বলে প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে।
১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে ৫,৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এবং বাকি অংশের অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার।
টানেলে চলবে না থ্রি হুইলার-মোটরসাইকেল, কোন গাড়ির টোল কত?
নদীর তলদেশ দিয়ে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিটে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা আবার আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গায় যাতায়াত করা যাবে। ধীরে ধীরে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে উঠবে চট্টগ্রাম। উদ্বোধনের পর নদীর তলদেশ দিয়ে রোমাঞ্চকর যাত্রার স্বাদ নিতে পারবেন জনসাধারণ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টানেলে কোন কোন যানবাহন চলবে, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি দিয়ে থ্রি হুইলার ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না।
এছাড়া, ১২ ধরনের যানবাহনের জন্য টোলহার প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে নির্মিত শাহ আমানত সেতুর বিবেচনায় টানেলের এই টোলহার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, টানেলে সেতুর তুলনায় আড়াই থেকে ছয় শতাংশ বেশি টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। টানেলের টোল কালেকশনে আনোয়ারা প্রান্তে স্থাপন করা হয়ে প্লাজা। যেখানে একসঙ্গে ১৪টি যানবাহন টোল দিতে পারবে।
টানেলে কোন কোন যানবাহন চলবে, তা নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। এটি দিয়ে থ্রি হুইলার ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না
সেতু কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করা টোল অনুযায়ী, টানেলে প্রাইভেটকার ও জিপ চলাচলে দিতে হবে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২৫০ টাকা, পিকআপ ২০০ টাকা, ৩১ বা তার চেয়ে কম সিটের বাস ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের বাস চলাচলে দিতে হবে ৪০০ টাকা।
পাঁচ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক থেকে টানেলে টোল নেওয়া হবে ৪০০ টাকা, পাঁচ থেকে আট টনের ট্রাকে ৫০০ টাকা এবং আট থেকে ১১ টনের ট্রাক থেকে ৬০০ টাকা টোল আদায় করা হবে।
এ ছাড়া, তিন এক্সেল পর্যন্ত ট্রাক চলাচলে টানেলে টোল দিতে হবে ৮০০ টাকা এবং চার এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারকে এক হাজার টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য ২০০ টাকা করে বেশি দিতে হবে।
টানেলে প্রাইভেটকার ও জিপ চলাচলে দিতে হবে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২৫০ টাকা, পিকআপ ২০০ টাকা, ৩১ বা তার চেয়ে কম সিটের বাস ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের বাস চলাচলে দিতে হবে ৪০০ টাকা। পাঁচ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক থেকে টানেলে টোল নেওয়া হবে ৪০০ টাকা, পাঁচ থেকে আট টনের ট্রাকে ৫০০ টাকা এবং আট থেকে ১১ টনের ট্রাক থেকে ৬০০ টাকা টোল আদায় করা হবে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টানেল চালু হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ সহজ হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা।
টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সেই হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে
নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সেই হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
টানেলের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা
‘কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই)’ স্থাপনা বিবেচনায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। টানেলের সুরক্ষায় কাজ করবে নৌবাহিনী ও পুলিশ। একই সঙ্গে টানেলে যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে ট্র্যাফিক পুলিশ। দুই পাশে দুটি ফাঁড়ি ও দুটি ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। টানেলের প্রবেশমুখে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে চারটি অত্যাধুনিক স্ক্যানার। উদ্বোধনের আগেই দুই প্রান্তে দুটি স্ক্যানার বসানোর কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া, বাকি দুটি উদ্বোধনের পর দ্রুত স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, স্ক্যানার দিয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে যাওয়া পণ্যবাহী ভারী গাড়িগুলোতে চালক ও পণ্য রাখার অংশ আলাদা রঙের রশ্মি দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়া, টানেলের ভেতর দিয়ে চলাচলকারী বাস, কার, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রে স্ক্যানারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউভিএসএস (আন্ডারভেহিকেল স্ক্যানিং সিস্টেম)। ইউভিএসএস দিয়ে যানবাহনের নিচের অংশে বিস্ফোরক জাতীয় সরঞ্জাম আছে কি না, তা যাচাই করা হবে।
টানেলের সিকিউরিটি দুই ধরনের। যেমন- কোথাও গাড়ি নষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল রুম থেকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। দ্রুত একটি টিম এসে গাড়িটি সরানোর ব্যবস্থা করবে। এগুলো অপারেশন ও মেইনটেন্যান্সের কাজ। এ ছাড়া, টানেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হলে সেটি দ্রুত অপারেশনাল টিম গিয়ে সমাধান করবে। টানেলের কোথাও অগ্নিকাণ্ড হলে ভেন্টিলেশন সিস্টেম, ড্রেনেজ সিস্টেম, পাওয়ার সিস্টেম— এগুলো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দেখভাল করবে। আর পুলিশের কাজ হবে বাইরে থেকে ভেতরে গিয়ে যাতে কেউ নাশকতা করতে না পারে— সেটি দেখা।
পুরো টানেলে স্থাপন করা হয়েছে ১১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। অত্যাধুনিক ও অটোমেটিক এসব ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হবে সবকিছু। টানেলের আনোয়ারা অংশে স্থাপন করা হয়েছে মনিটরিং স্টেশন। যেখান থেকে সবকিছুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া, টানেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসি) সার্বক্ষণিক বিশেষ টিম তৈরি থাকবে। তারা যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুত মুভ করবে।
টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, টানেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি আগামী পাঁচ বছর টানেল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে। এজন্য সরকার তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদান করবে। টানেলের কাজ চলাকালীন নৌবাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে। উদ্বোধনের পর নৌবাহিনী তাদের নিজেদের মতো করে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি দুই পাশে দুটি ফাঁড়ি হচ্ছে। সেখানে পুলিশ অপরাধ দমনের কাজ করবে। এ ছাড়া, ট্র্যাফিক পুলিশ যানবাহন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে।
পুরো টানেলে স্থাপন করা হয়েছে ১১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। অত্যাধুনিক ও অটোমেটিক এসব ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হবে সবকিছু। টানেলের আনোয়ারা অংশে স্থাপন করা হয়েছে মনিটরিং স্টেশন। যেখান থেকে সবকিছুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া, টানেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসি) সার্বক্ষণিক বিশেষ টিম তৈরি থাকবে। তারা যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুত মুভ করবে।
‘টানেলের সিকিউরিটি দুই ধরনের। যেমন- কোথাও গাড়ি নষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল রুম থেকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। দ্রুত একটি টিম এসে গাড়িটি সরানোর ব্যবস্থা করবে। এগুলো অপারেশন ও মেইনটেন্যান্সের কাজ। এ ছাড়া, টানেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হলে সেটি দ্রুত অপারেশনাল টিম গিয়ে সমাধান করবে। টানেলের কোথাও অগ্নিকাণ্ড হলে ভেন্টিলেশন সিস্টেম, ড্রেনেজ সিস্টেম, পাওয়ার সিস্টেম— এগুলো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দেখভাল করবে। আর পুলিশের কাজ হবে, বাইরে থেকে ভেতরে গিয়ে যাতে কেউ নাশকতা করতে না পারে— সেটি দেখা।
নিরাপত্তায় প্রস্তুত পুলিশ
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্মিত টানেলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ কর্মকর্তারা। টানেলের দুই প্রান্তে দুটি থানার প্রস্তাবও দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। যদিও এখন পর্যন্ত থানার অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় আপাতত দুই প্রান্তে দুটি ফাঁড়ি দিয়ে কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর পুলিশের বন্দর জোন। যদিও ফাঁড়ি নির্মাণের কাজ এখনও শুরু হয়নি। আপাতত পতেঙ্গা থানা ও কর্ণফুলী থানা থেকে পুলিশ পাঠিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। ফাঁড়ির কাজ শেষ হলে সেখানে ফোর্স পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে প্রতিটি প্রান্তে একজন করে সার্জেন্ট এবং তিনজন করে কনস্টেবল থাকবে। ২৪ ঘণ্টায় তিনবার ডিউটি বদল হবে। এ হিসাবে দৈনিক ছয়জন সার্জেন্ট এবং ১৮ জন কনস্টেবল কাজ করবে। আপাতত এভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের পর যানবাহন বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। টানেলের দুই প্রান্তে দুটি ফাঁড়ি হচ্ছে। ফাঁড়ি তৈরি হয়ে গেলে জনবল সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’
বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানা বলেন, ‘থানার অনুমোদন হয়নি। আপাতত নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় কে- ৯ নামের একটি বিশেষায়িত ডগ স্কোয়াড চাওয়া হয়েছে। কেপিআই নিরাপত্তার জন্য একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই-সশস্ত্র), নায়েক দুজন এবং ১০ জন কনস্টেবল চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, প্রতিটি ফাঁড়ির জন্য একজন এসআই (নিরস্ত্র), এএসআই (নিরস্ত্র) চারজন ও কনস্টেবল ২৫ জনসহ মোট ৩০ জনের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় মোটরসাইকেল, টহল গাড়ি ও পেট্রোল কারের চাহিদা দেওয়া হয়েছে।’
টানেলে যানবাহন ব্যবস্থাপনা
টানেল উদ্বোধনের পর শুরুতে দর্শনার্থীদের চাপ থাকবে। অনেকেই শুধুমাত্র টানেলযাত্রা উপভোগ করতে যাবেন। এক্ষেত্রে কিছু যানবাহন পতেঙ্গা দিয়ে টানেলে ঢুকে আবার আনোয়ারা হয়ে পতেঙ্গায় ফিরে আসবে। কিছু যানবাহন আনোয়ারা দিয়ে ঢুকে পতেঙ্গা হয়ে পুনরায় আনোয়ারায় ফিরে যাবে। এজন্য টানেল উদ্বোধনের পর যানবাহনের চাপ থাকবে বিবেচনায় এগোচ্ছে পুলিশ। টানেলের দুই প্রান্তই নগর ট্রাফিকের বন্দর বিভাগের অধীনে।
বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানা বলেন, ‘থানার অনুমোদন হয়নি। আপাতত নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় কে- ৯ নামের একটি বিশেষায়িত ডগ স্কোয়াড চাওয়া হয়েছে। কেপিআই নিরাপত্তার জন্য একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই-সশস্ত্র), নায়েক দুজন এবং ১০ জন কনস্টেবল চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, প্রতিটি ফাঁড়ির জন্য একজন এসআই (নিরস্ত্র), এএসআই (নিরস্ত্র) চারজন ও কনস্টেবল ২৫ জনসহ মোট ৩০ জনের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় মোটরসাইকেল, টহল গাড়ি ও পেট্রোল কারের চাহিদা দেওয়া হয়েছে।’
এ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে প্রতিটি প্রান্তে একজন করে সার্জেন্ট এবং তিনজন করে কনস্টেবল থাকবে। ২৪ ঘণ্টায় তিনবার ডিউটি বদল হবে। এ হিসাবে দৈনিক ছয়জন সার্জেন্ট এবং ১৮ জন কনস্টেবল কাজ করবে। আপাতত এভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের পর যানবাহন বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। টানেলের দুই প্রান্তে দুটি ফাঁড়ি হচ্ছে। ফাঁড়ি তৈরি হয়ে গেলে জনবল সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’
টানেলের দুই প্রান্তে নির্মিত হচ্ছে দুটি ফায়ার স্টেশন
এখন পর্যন্ত টানেল ব্যবস্থাপনায় ‘অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ’ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হচ্ছে। ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ড সামাল দিতে টানেলের নিজস্ব টিম এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তারপরও বড় অগ্নিকাণ্ড হলে তা নির্বাপণ এবং দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালাতে টানেলের দুই প্রান্তে দুটি প্রথম শ্রেণির ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। দ্রুত স্টেশন নির্মাণকাজ চললেও এটি শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, ‘আগামী মার্চের দিকে কাজ শেষ হতে পারে। তবে, উদ্বোধনের পর আপাতত টানেলের একপ্রান্তে সিইপিজেড এবং অন্যপ্রান্তে কর্ণফুলী ফায়ার স্টেশনকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফায়ার স্টেশন দুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে প্রথম শ্রেণি বিবেচনায় সেখানে ৩৫ জন করে জনবল এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হবে।’
জানা গেছে, চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টানেল চালু হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ সহজ হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে নতুন শিল্পকারখানা।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, ‘আগামী মার্চের দিকে কাজ শেষ হতে পারে। তবে, উদ্বোধনের পর আপাতত টানেলের একপ্রান্তে সিইপিজেড এবং অন্যপ্রান্তে কর্ণফুলী ফায়ার স্টেশনকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফায়ার স্টেশন দুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে প্রথম শ্রেণি বিবেচনায় সেখানে ৩৫ জন করে জনবল এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হবে।’
নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সেই হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
পদ্মা সেতুর মতো অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু টানেল
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মো. মাহবুবুল আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতু যেভাবে ভূমিকা রেখেছে, চট্টগ্রামে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সেভাবেই ভূমিকা রাখবে।’
গত শনিবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু টানেল: এ লিপ টুওয়ার্ডস ভিশন ২০৪১’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টারসের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করবে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সক্ষমতা তৈরি হওয়ায় জাপানসহ বিভিন্ন দেশ চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে লক্ষ্য করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ কনসেপ্টকে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ করেছেন। চট্টগ্রামের মতো আরেকটি সিটি যাতে দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে তোলা সম্ভব হয় সেজন্য এ টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম অবহেলিত জনপদ হিসেবে পরিচিত। দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপজেলাকে সিটিতে রূপান্তর করা এবং সেখানে আবাসন থেকে শুরু করে শিল্পায়নের মাধ্যমে নতুন একটি শহরের রূপরেখা নির্মাণের জন্য এ টানেল তৈরি করা হয়েছে। এ শহরের সঙ্গে কক্সবাজারসহ মাতারবাড়ী বন্দরের সংযোগ তৈরি হবে। এছাড়া টানেলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক আট লেনের কাজ শুরু হবে। তখন সারা দেশের মতো এ মহাসড়কে ১৩ বা ১৪ টন না সরাসরি ২৫ টনের গাড়ি চলাচল করবে। টানেলকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।’
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ কনসেপ্টকে ধরে টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগরী অংশে নতুন করে পরিকল্পনা করা সম্ভব কম হলেও আনোয়ারা অংশকে নতুন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সেখানে এখন থেকে নগরায়ণের পরিকল্পনা করতে হবে। কেউ চাইলে যেখানে সেখানে যাতে স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে। সেখানে এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে যাতে আবাসন, শিল্পায়ন করা হবে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে। এলাকাটি হবে নতুন চট্টগ্রামের অংশ, যার কারণে একটি দীর্ঘমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন খুবই জরুরি। কিন্তু টানেল নির্মাণ করা হলেও কক্সবাজার কিংবা মাতারবাড়ীর যে সংযোগের কথা বলা হয়েছে তাতে শুধু সড়কপথে আনোয়ারার উন্নয়ন করা হয়েছে। কিন্তু কক্সবাজারের সঙ্গে অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো উন্নত করা হয়নি। যার কারণে টানেলের সুফল এখন পাওয়া যাবে সেটা বলা যাচ্ছে না। মহাসড়কে কোনোভাবেই যাতে টমটম বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা না চলতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্ত না করা হলে এখনই সুফল পাওয়া যাবে না টানেলের।’
বঙ্গবন্ধু টানেল মাতারবাড়ি ও সেভেন সিস্টারসের মধ্যে সংযোগের কাজ করবে
উদ্বোধনের পরদিন থেকেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে টানেল। নদীর তলদেশে নির্মিত এই সুড়ঙ্গপথ মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টারসের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করবে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সক্ষমতা তৈরি হওয়ায় জাপানসহ বিভিন্ন দেশ চট্টগ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে লক্ষ্য করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ফলে কর্ণফুলীর দুই প্রান্তে গড়ে উঠছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ঘিরে টানেলসহ যে মেগাপ্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে তার পরিপূর্ণ সুফল পেতে হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের বিকল্প নেই বলছেন ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, সুশীল সমাজ ও সংশ্লিষ্টরা।
গত শনিবার সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ‘বঙ্গবন্ধু টানেল : এ লীপ টুওয়ার্ডস ভিশন-২০৪১’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে। সেখানে বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তনে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে চট্টগ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, সুশীল সমাজ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা তাদের অভিমত তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, টানেল যুগে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম। এই টানেল মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টারসের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করবে। পদ্মা সেতু যেমন দেশের জিডিপিতে অবদান রাখছে, তেমনি এই টানেলও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সক্ষমতা তৈরি হওয়ায় জাপানসহ বিভিন্ন দেশ চট্টগ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে লক্ষ্য করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কর্ণফুলীর অপর পাড়ে নগরায়ণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত গড়ে উঠবে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে সংগীতচিত্র
বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের প্রযুক্তির উন্নয়নের আরো একটি অনন্য পালক সংযোজন। এর গর্বিত অংশীদার হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। এই অক্টোবরেই প্রধানমন্ত্রী টানেলটি উদ্বোধন করবেন। এই আয়োজনকে ঘিরেই নির্মিত হয়েছে সংগীতচিত্র ‘পদ্মা সেতুর আলোয় আলোয় হাসছে যখন দেশ, নতুন আলোর দিচ্ছে আভা নদীর তলদেশ’।
চট্টগ্রাম মঞ্চ শিল্পী সংগীত সংস্থার সদস্যদের অংশগ্রহণে গীতিকার আ ফ ম মোদাচ্ছের আলীর লেখা ও শিল্প আলাউদ্দিন তাহেরের সুরে গানটি তৈরি করা হয়েছে। এটির চিত্রধারণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল-সংলগ্ন স্থানে।
বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে এই গানটি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। মোট ৩১ জন শিল্পী গানটি কণ্ঠে ধারণ করেন। কথা ও সুরের অপূর্ব মেলবন্ধনে বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে এই সংগীতচিত্র চট্টগ্রাম মঞ্চ সংগীত শিল্পী সংস্থার মতে দেশের প্রথম থিম সং।
‘টানেলের কারণে আনোয়ারা শহরে পরিণত হবে’
বঙ্গবন্ধু টানেলের কারণে আনোয়ারা দ্রুত শহরে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। গত বৃহস্পতিবার আনোয়ারা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে উপজেলা হলরুমে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপজেলার পূজাম-পে ভোগ্যপণ্য ও ভূমিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে অনুদানের চেক বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম টানেল তাও আবার আনোয়ারায়। টানেলের কারণে উন্নয়ন এগিয়ে চলছে, শীঘ্রই আনোয়ারা শহরে পরিণত হবে। আগামী ২৮ তারিখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক টানেল উদ্বোধন পরবর্তী জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। যেহেতু আনোয়ারা কর্ণফুলী আমার নির্বাচনী এলাকা তাই আমার ও আপনাদের দায়িত্বও বেশি।
‘বঙ্গবন্ধু টানেলের সুফল শুধু বন্দর নয়, সারা দেশ পাবে’
বঙ্গবন্ধু টানেলের সুফল শুধু বন্দর নয় সারা দেশ ভোগ করবে বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। গত রোববার (১৫ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ইক্যুইপমেন্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। বন্দরের এনসিটি বার্থে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল।
উদ্বোধন করা ইক্যুইপমেন্টের তালিকায় রয়েছে- ২০২২ সালে সংগ্রহ করা ২৪৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ৪টি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, ৭০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ৬টি রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন, ৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ২টি কনটেইনার মোভার।
২০২৩ সালে সংগ্রহ করা ১৪ কেটি ১৩ লাখ টাকার ৪টি রিচ স্টেকার, ২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ৪টি ভেরিয়েবল রিচ ট্রাক, ২০২১ সালে সংগ্রহ করা ২০ কোটি ৯ লাখ টাকার ১০০ টন ক্ষমতার ২টি মোবাইল ক্রেন, ১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার ৫০ টন ক্ষমতার ২টি মোবাইল ক্রেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বাজার অর্থনীতিতে পদার্পণ করেছে কয়েক যুগ আগে। বাংলাদেশ এখন গ্লোবাল ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। বাংলাদেশের সক্ষমতা কোথায় গেছে আমরা সমগ্র বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাই। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবী জেনেছে যে বাংলাদেশ তার সক্ষমতা কোথায় গেছে। আমরা মেরিটাইম সেক্টরে জানিয়ে দিতে চাই যে আমাদের সক্ষমতা কোথায়। আমরা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর করছি, পায়রা বন্দর করেছি, মোংলা বন্দর আপগ্রেডেশন করছি, বে টার্মিনালের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের আপগ্রেডেশন হচ্ছে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন কী ধরনের যন্ত্রপাতি দিয়ে পণ্য ওঠানামা করা হচ্ছে। এগুলো আমাদের সক্ষমতা। এ সক্ষমতা আমরা আরও এগিয়ে নিতে চাই। আমরা দেশ-বিদেশ নয়, আমরা বিশ্বের সঙ্গে থাকতে চাই। বিশ্বের যেকোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করে যদি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায় আমরা তাদের স্বাগত জানাব। এটাই হচ্ছে সরকারের নীতি।
বন্দরের এনসিটি ও পিসিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের কাছে অনেক বিনিয়োগ প্রস্তাব আছে। যারা বিশ্বের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান তারা আমাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা চট্টগ্রামের স্বার্থ, চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থ এবং দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে আমরা তাদের সঙ্গে এ কার্ক্রমে একত্রিত হবো।
তিনি বলেন, সমগ্র পৃথিবী নৌ পরিবহন খাতের ওপর এগিয়ে যাচ্ছে। আর সমগ্র পৃথিবী জয় করার একমাত্র জায়গা হচ্ছে মেরিটাইম। অতএব মেরিটাইমকে বাদ দিয়ে স্মার্ট বা উন্নত বাংলাদেশ সম্ভব নয়। সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেরিটাইমের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য ব্যাপক জোর দিয়েছেন। একদম ম্যানপাওয়ার থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু। আমাদের সমুদ্র আজকে অবারিত। কোথাও কোনো বাধা নেই। এটা সম্ভব হয়েছে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এই অবারিত সমুদ্রপথেই সমগ্র পৃথিবী আমাদের এখানে বিনিয়োগ করতে চাইছে। আমাদের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করতে চাইছে। এটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার কারণে। তারই একটি অংশ হচ্ছে টানেল। এটা পদ্মা সেতুর মতো আমাদের গর্ব ও অহংকারের জায়গা আরও বাড়িয়ে দেবে। যেহেতু টানেল চট্টগ্রামে, নদীর এপাড় থেকে ব্যবসা ওপাড়ে চলে যাবে। এর সুফল শুধু বন্দর কেন সমগ্র দেশবাসী ভোগ করবে।