বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বহুল আলোচিত ও বহুল প্রতীক্ষীত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলের যুগে প্রবেশ করল। প্রমত্তা পদ্মাকে শাসন করে দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের পর খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর বুক চিরে বানানো সুড়ঙ্গপথকে যোগাযোগ ব্যবস্থার ‘স্মার্ট সূচনা’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি টানেল পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ প্রান্তে কর্ণফুলী উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছেন। সকাল পৌনে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে হেলিকপ্টার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমিতে আসে। জনসভায় বক্তব্য রেখে দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম ত্যাগের কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পতেঙ্গায় উদ্বোধনস্থলে পৌঁছালে মন্ত্রিপরিষদ কয়েকজন সদস্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ্য নেতারা স্বাগত জানান। এসময় সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক আয়োজন উপেভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর টানেলের উদ্বোধন করে মোনাজাতে অংশ নেন।
টানেল উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
টানেলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও ৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও দুটি’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে, চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ভবন, রাঙ্গুনিয়া জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, আনোয়ারা জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, রাউজানে শেখ কামাল কমপ্লেক্স ভবন, পতেঙ্গা এয়ারপোর্ট রোডের মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল এবং বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সড়ক’ এবং পটিয়ার শিকলবাহা খালের উপর ৩৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার ব্রিজ।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর চট্টগ্রাম’ এবং নগরীর দক্ষিণ হালিশহরে ‘সীম্যান্স হোস্টেল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।
টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ‘ওয়ান সিটি টু টাউনস’ মডেলে দৃশ্যমান হবে। এই টানেল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তি, চট্টগ্রাম শহরের যানজট হ্রাস, আনোয়ারা প্রান্তে বিদ্যামান ও গড়ে উঠা শিল্পাঞ্চল এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ চট্টগ্রাম বন্দর ও প্রস্তাবিত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে পণ্য পরিবহনে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। টানেলটি চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রায় শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।’
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর নিচে প্রথম সড়ক টানেল। দেশপ্রেমিক জনগণের আস্থা ও অকুণ্ঠ সমর্থনের ফলেই আজকে উন্নয়নের এ নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। আগামী দিনেও গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন পূরণে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব।’