মোহাম্মদ খালেদ বেলাল চট্টগ্রামের একজন প্রথিতযশা লেখক ও সাংবাদিক। সংবাদ জগতে তার ছিল পুরোদস্তর বিচরণ। যার লেখনীতে উঠে এসেছে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানুষের জনজীবনের কথা। যিনি লিখতেই ভালোবাসতেন, সমাজের তৃণমূল মানুষের কথা তুলে ধরাই ছিল যার কাজ। তিনি এক হাতে সামলেছেন সাংবাদিকতা তো অন্য হাতে সম্পাদনা। যিনি কর্ম দিয়েই মহীয়ান করে তুলেছেন নিজেকে এবং নিষ্ঠা ও সাধনার সাথে কাজ করে গেছেন, আছে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আর বন্ধুর পথেও তিনি সাংবাদিকতা নামক মহৎ পেশার হাল ছাড়েননি। সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে হননি দিশেহারা।
এ গুণী লেখক ও সাংবাদিক পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিয়েছেন চিরতরে। আর কখনো তার কলম থেকে জন্ম নিবেনা কবিতা-গল্প। সোমবার (৩০ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরের ন্যাশনাল হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
খালেদ বেলাল শুধু সাংবাদিক বা সম্পাদকই ছিলেন না। একই সাথে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা। তিনি শুধু সাংবাদিকতা, সম্পাদনা ও বিসিএস ককর্মকর্তাই ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন মানুষ গড়ার কারিগর। প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন চট্টগ্রামের কুমিরা হাই স্কুলে।
এই প্রতিথযশা সাংবাদিকের জন্ম ১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার সন্দীপ উপজেলার বাউরিয়া গ্রামে। লেখাপড়া করেছেন রাজধানীর নবাবপুর গভর্ণমেন্ট হাই স্কুল ও সেন্ট গ্রেগরি কলেজে ( বর্তমান নটরটেম কলেজ)। এরপর লেখাপড়া করেছেন
টিচার্স টেনিং ও জগন্নাথ কলেজে যেটি পরবর্তীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হয়েছে। নিজের অর্জনের ঝুড়িতে তোলেন বি.এ ও বি.এড ডিগ্রি।
মোহাম্মদ খালেদ বেলাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) এর সদস্য। সাংবাদিকতা করেছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকাতে। সহ- সম্পাদক ছিলেন দৈনিক মিল্লাত, দৈনিক পয়গাম, দৈনিক ইত্তেহাদ, সাপ্তাহিক চিত্রালী ও ঢাকার একসময়ের আলোচিত সান্ধ্য দৈনিক আওয়াজ পত্রিকাতে । সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন দৈনিক ঈশান ও দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকায়।
শুধু কি তাই – সাংবাদিক খালেদ বেলাল ‘ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর সাথে আওয়াজ পত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণে লাইন ধরে দিয়েছেন শ্লোগান।
কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়। উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে দ্য ডেলি পিপলস ভিউ ও ক্লাস নিউজ বুলেটিনে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করেছেন চিলড্রেন লুকীমিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যান্ড সাপোর্ট সার্ভিসের চীফ একজিকিউটিভ অফিসার হিসেবে।
মোহাম্মদ খালেদ বেলাল ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। বিসিএস তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে চট্টগ্রামের বিভাগীয় সংবাদপত্র পরিদর্শক, ভারপ্রাপ্ত উপপ্রধান তথ্য অফিসার, ২৪ পদাতিক ডিভিশনে প্রেস লিয়াজোঁ অফিসার ও চট্টগ্রাম তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রখ্যাত এই সাংবাদিক খালেদ বেলাল একজন গুণী লেখক ও বটে। তার রয়েছে উল্লেখযোগ্য সব প্রকাশনা। যেগুলো তাকে খ্যাতনামা লেখক হিসেবে ও পরিচিত করে তুলেছে। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা- ক্ষমা চাই শরীফার মা, নৈ:শব্দে তোমার প্রতিধ্বনি, অন্য এক বিশাখা চৌধুরী, স্মৃতির লাল মর্গে, স্পর্শে অঙ্গার মন, মরাগাঙে ডুবসাঁতার, আমৃত্যু পূর্ণিমা জামান, কৃষ্ণপক্ষের জোছনা, শুধু তোমার জন্য এবং জীবনালেখ্য: জীবনানন্দ মহাথেরো।
এছাড়াও খালেদ বেলাল সম্পাদনা করেছেন ফ্যালকনরি ইন দ্যা হিলস, অন্ধকারে সূর্যোদয়, হাদিস: প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত, হেরার দ্যুতি, বসন্তে বৈশাখী ঝড়, মানবপ্রেমিক জোশেফ রেসিন্সকি, হৃৎপিন্ডের ছন্দবৈষম্য এবং হৃদরোগ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক ভাবনা : প্রতিরোধ ও প্রতিবিধান।
মোহাম্মদ খালেদ বেলালের স্ত্রীর নাম বেদৌরা বেগম। তাদের দুই ছেলে ও দুই কন্যা আছে। দুই ছেলে ফরহাদ বিন খালেদ শিমুল ও সাজ্জাদ বিন খালেদ সুমন। আর দুই কন্যা সন্তান হলেন মেয়ে জেসমিন সুলতানা ও আয়েশা সুলতানা।