২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ পণ্ডের অজুহাতে ২৯ অক্টোবর বিএনপি-জামাতের হরতাল ও ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ডাকা টানা তিনদিনের অবরোধে কক্সবাজারে সড়কে প্রভাব না পড়লেও প্রভাব পড়েছে পর্যটন শিল্পে। ২৯ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বুকিং থাকা কক্ষগুলো বাতিল করেছেন অনেক পর্যটক। এতে চলমান সময়ে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলের প্রায় ৯০ শতাংশ কক্ষই খালি পড়ে আছে।
মৌসুমের শুরুতে অনাকাঙ্ক্ষিত হরতাল, অবরোধ কর্মসূচী পর্যটনের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি সপ্তায় পর্যটন সেবী সকল অনুষঙ্গ মিলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা, এমনটি দাবি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের।
তবে, অবরোধে দূরপাল্লার বাস তেমন ভরপুর ভাবে চলাচল না করলেও কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে ঢাকায় ২২টি ফ্লাইট আসা-যাওয়া করেছে। সচল রয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথেও ২টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলও।
অবরোধের প্রথম ও দ্বিতীয়দিনে সড়ক-মহাসড়কের কোথাও পিকেটিং বা মিছিল দেখা যায়নি। আসেনি কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবরও। সরকারী অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাও যথারীতি খোলা থেকে নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে মাইক্রোবাস ও সিএনজি টেক্সিসহ অন্যান্য ছোট যানবাহনগুলো উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনা বাধায় চলাচল করেছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথেও চলাচলকারী ৩টি জাহাজের মধ্যে ২টি পর্যটকবাহী জাহাজ সচল ররেছে। জাহাজ দুটিতে প্রায় ৭শ পর্যটক সেন্টমার্টিন আসা-যাওয়া করেছে বলে জানান সী-ক্রুজ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।
কক্সবাজার বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা জানান, কক্সবাজার বিমান বন্দরে ঢাকা থেকে ২২টি ফ্লাইট আসা-যাওয়া সচল রয়েছে। এসব ফ্লাইটে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন।
সার্বিক পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে অবরোধের প্রভাব না পড়লেও- এর প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে- এমনটি দাবি করেছেন জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ও জেলা জাসদ সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল।
তার মতে, অবরোধ ডাকার কারণে সোমবার ৯০শতাংশ পর্যটক কক্সবাজার ত্যাগ করেন। দূরপাল্লার বাস চলাচল কমে যাওয়ায় পর্যটন শিল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। লোকসান গুণছে সাগরপাড়ের রেস্তোরাঁগুলো। অবরোধ চলাকালে পুলিশ প্রহরায় বাস চলাচল বাড়ানো গেলে পর্যটন সচল থাকতো। আমরা প্রশাসনের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করছি।
কক্সবাজার ট্যুরিজম সার্ভিস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, অবরোধ পর্যটন শিল্পে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ভরা মৌসুমে হোটেল-মোটেল জোনের হোটেলগুলোতে প্রায় ৯৫শতাংশ কক্ষ খালি যাচ্ছে। মঙ্গলবার আমার হোটেলে (হোটেল ডায়মন্ড) মাত্র ৩টি কক্ষে পর্যটক ছিল।
একই দাবী করেন হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার।
কলাতলীর তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, অবরোধ ঘোষণা হবার পর মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যা বুকিং ছিল তা বাতিল করেছেন পর্যটকরা। অবরোধের গত দুটি দিন ৫ শতাংশ বুকিংও ছিল না। আকাশ পথে আসা পর্যটকের সংখ্যা কম। তারকা হোটেলে থাকা পর্যটকের সিংহভাগ বাসেই আসেন।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, পর্যটন জোনের প্রায় প্রতিটি হোটেলের ব্যবসা খুবই মন্দা যাচ্ছে। প্রায় হোটেলের মাত্র ৫-১০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়েছে। হরতাল, অবরোধের কারণে চলতি সপ্তায় পর্যটন অনুষঙ্গ সকল সেক্টর মিলিয়ে কম করে হলেও ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ওশান প্যারাডাইস হোটেলের ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজার আবদুল হান্নান বলেন, সব হোটেলের কর্মজীবীরা অলস সময় পার করছেন। পর্যটক থাকলেই হোটেলের কর্মজীবীরা আনন্দ পায়। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা-ই হউক, সবার প্রতি অনুরোধ পর্যটনকে সবধরনের ঝামেলার বাইরে থাকার ব্যবস্থা করুন। নইলে সম্ভাবনাময় শিল্পটি মুখথুবড়ে পড়বে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজারে ৫শতাধিক হোটেল-মোটেল ও কটেজ এবং এক হাজারের বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে।হোটেলগুলোতে একদিনে প্রায় দেড় লাখ মানুষ রাত যাপন করার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু অবরোধ ঘোষণার পর সৈকতের বেলাভূমিতেও লোকজনের উপস্থিতি কমেছে।