নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিয়ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দু’দিন ব্যাপী আলোচনা শেষ করে ফিরে গেছে টেকনাফে আসা মিয়ানমারে প্রতিনিধি দল। গত দু’দিনে ২৭১ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাতকার নিয়েছেন তারা- এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা।
বুধবার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নৌ-পথে নাফনদী দিয়ে দুটি ট্রলারে টেকনাফ জেটিঘাটে পৌঁছায় মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের প্রধান সাউ নাইং’র নেতৃত্বে ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। সারাদিন সাক্ষাৎকার নেয়ার পর বিকাল ৫টার দিকে তারা মিয়ানমার ফেরত যায়। এর আগে গত মঙ্গলবারও (৩১ অক্টোবর) তারা এসে একইভাবে কার্যক্রম চালিয়ে একইদিন ফেরত যান।
ক্যাম্প সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে টেকনাফের ২৬-২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আসা ১৮০ জন রোহিঙ্গাদের সাথে পৃথকভাবে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল কথা বলেন। সেখানে প্রত্যাবাসন ইস্যুসহ জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের তথ্য যাচাই-বাছাই এর বিষয়টি তোলা হয়। পরেরদিন বুধবার একই বিষয়ে নিয়ে ৯১ জন রোহিঙ্গার সাথে পৃথক ভাবে কথা বলেন প্রতিনিধিদল। কথা বলা শেষে তারা মিয়ানমার ফেরত চলে যান।
টেকনাফের মুচনি ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি বদরুল ইসলাম বলেন, প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে জমা দেয়া তালিকাভুক্ত ছোট শিশু (ক্যাম্পে জন্ম নেওয়া) রোহিঙ্গা শিশুদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল।তারা এটা নিশ্চিত হতে চেয়েছেন, এক পরিবারের যদি ৫ সন্তান থাকেন এর মধ্যে ক’জন বাংলাদেশে ও ক’জন মিয়ানমারের জন্ম হয়েছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ করলেও সেদেশে ফেরত নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের সাথে কোন আলাপ করেনি। দু’দিন এখানে এসে সময় কাটিয়ে বিশ্ববাসীর সাথে ধোঁকা দিচ্ছে কি না, আমাদের মনে সন্দেহ হচ্ছে।
তবে- আমরা উপযাজক হয়ে বলেছি, মিয়ানমার আমাদের দেশ- আমরা নিজ দেশে অব্যশই ফিরে যাবো। কিন্তু আমাদের নাগরিক অধিকার, ভিটা-মাটি ফেরতসহ রোহিঙ্গা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা বলেন, মিয়ানমারের ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দু’দিন ব্যাপী ২৭১ জন রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে। তারা বিকালের দিকে মিয়ানমার ফেরত চলে যান।
তিনি আরও বলেন, জল ও স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। যা ২০১৮ সালে দু’দেশের চুক্তিতে উল্লেখ্য রয়েছে। আমরা জল ও স্থল পথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আশাকরি, দু’পক্ষের সমজোতায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
শরনার্থী কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, দু’পক্ষের মাঝে আস্থার যে সংকট রয়েছে, সেটি দূর করতে চেষ্টা করছি আমরা। এবং অচিরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে, এজন্য আমরা প্রস্তুুত। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ টেকসই এবং স্বেচ্ছায় হবে। এ জন্যই বাংলাদেশ সরকার সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে চলতি বছর দু’বার মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসে টেকনাফে। প্রথম বার ১৫ মার্চ ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি বাংলাদেশ আসেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি এসেছিলেন ২৫ মে। এর মধ্যবর্তি ৫ মে বাংলাদেশের ৭ সদস্য রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলও মিয়ানমারের মংডুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসেন। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি আশ্রয়রত রয়েছেন। কিন্তু গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। ###
সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার/এসএএল। ০১৮১৮১৪২০৮৮ (১ নভেম্বর ২০২৩)