spot_imgspot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদচট্টগ্রামঅস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী হচ্ছে মোয়া, নেই উৎপাদন তারিখও

স্টিকারে লেখা 'নকল হইতে সাবধান'

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী হচ্ছে মোয়া, নেই উৎপাদন তারিখও

জাহেদুল ইসলাম আরিফ
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

শীতের শুরুতে চিড়া ও মুড়ির তৈরি মোয়ার বিপুল চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে মৌসুমী মোয়া তৈরির কারখানা। এসকল কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিড়া-মুড়িতে গুড় মেখে হাতে দলা পাকিয়ে বানানো হচ্ছে মোয়া। ‘বাজারের সেরা খেজুরের রসে তৈরী’ এবং ‘খেতে দারুণ মজা’ স্লোগানে বাজারজাত করা এসব ভেজাল মোয়ার স্টিকারে লেখা ‘নকল হইতে সাবধান’। বিভিন্ন নামে বেনামে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের কাগজে কলমে নেই কোন অনুমোদন।

তেমনই কয়েকটি নামসর্বস্ব মোয়া তৈরির কারখানার সন্ধান মেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। হজরত শাহজালাল, আল মদিনা, বিসমিল্লাহ ও শাহ পরানসহ বিভিন্ন অলি আউলিয়ার নামে উপজেলার বাসস্ট্যান্ড, মসজিদ গলি ও থানার চারপাশে গড়ে উঠেছে ছোটছোট কারখানা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেমিপাকা টিনশেডের বদ্ধ ঘরে টিমটিম করে জ্বলছে বাল্ব। গ্যাসের চুলায় আগুন জ্বালিয়ে বড় লোহার কড়াইয়ে তৈলাক্ত পানীয়জলের সাথে মেশানো আছে গুড়। চারপাশে বেশ কয়েকটি ঘরে দেখা যায় একই চিত্র।

অন্যদিকে শাহ জালাল নামের আরেকটি কারখানায় গেলে দেখা যায়, খেজুরের রসের নামে একটি ড্রামে রাখা হয়েছে গুড়। যেখানে জমাট বেঁধে আছে ময়লা। তার পাশেই গোল করে বসে গুড় মেশানো মুড়ির হাতে দলা পাকিয়ে মোয়া তৈরি করছেন কারখানার শ্রমিকরা। মোয়া তৈরির সময় গুড় মাখানো মুড়িতে হরহামেশাই লাগছে অপরিষ্কার খালি পা।

ভেজাল মুড়ির মোয়া বানানো এক কারখানার ম্যানেজার বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি ভেজাল বা নোংরা পরিবেশে কাজ না করতে। ভালো খাবার পরিবেশন করতে। যেসব বানাচ্ছি সেগুলা আমরাও তো খাচ্ছি। এখানে খারাপ কোনো রসায়নিক মেশানো নেই।

খেজুরের রস কোথায় পাচ্ছেন প্রশ্নের জবাবে অকপটে স্বীকার করেন, তারা রস আনেন না, মূলত গুড় সংগ্রহ করে এনে তৈরী করেন এসব চিড়ামুড়ির মোয়া।

এদিকে অন্য আরেক কর্মচারীর হাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানো চিড়ামুড়ির মোয়া খাবার অনুপযোগী বলায় রীতিমতো খেয়ে দেখালেন। জানান, এসব বানিয়ে সাপ্লাই করার পাশাপাশি আবার নিজেরাও খেয়ে থাকেন।

ওই এলাকার আরেক মোয়া ব্যবসায়ী জানালেন, এমন পদ্ধতিতে মুড়ির মোয়া তৈরীতে প্রতি প্যাকেটের খরচ পড়ে ২০ টাকা। যার মূল্য পাইকারী বাজারে ধরা হয় ৩৫-৪০ টাকা। আবার প্রকারভেদে ভিন্ন সাইজের মোয়া পাইকারি দরে বিক্রি হয় ৪৫ টাকা দামে।

আশপাশের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি মুদির দোকান কিংবা ফুটপাতের ভ্যানেও সারিবদ্ধভাবে রাখা চিড়ামুড়ির মোয়া। এসব বিক্রেতারা বলছেন, কারখানা থেকে একেকজন এসে প্রতিদিন সন্ধ্যায় অর্ডার নিয়ে যায়। যা পরেরদিন সকালে দিয়ে যায় দোকানে।

বিএসটিআইয়ের অনুমোদন এবং উৎপাদনের তারিখ ছাড়া এসব চিড়ামুড়ির মোয়া কেন কিনছে তারা প্রশ্নের জাবাবে তারা জানান, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নেই সেটি খেয়াল করিনি, তারা আমাদের দিয়ে যায় আমরা বিক্রি করি। এতোকিছু খেয়াল করিনা।

সাধারণত এসব মোয়া মুড়ি দিয়ে তৈরী হওয়াতে আসল-নকলের ফারাক ধরা খুব মুশকিল। তাই স্বাদ ও গন্ধের বিষয়ে বেশি সচেতন নন সাধারণ ক্রেতারা

ভেজাল মুড়ির মোয়া তৈরীর এসব কারখানা কিভাবে চলছে এমন প্রশ্নে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.বি.এম. মশিউজ্জামান বলেন, হাটহাজারীতে নবাগত হওয়ায় ভেজাল চিড়ামুড়ির মোয়া তৈরীর কারখানা রয়েছে তা আমার জানা ছিলো না। এসব কারখানার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, মোয়া এক প্রকার চট্টগ্রামের স্থানীয় খাবার। এসব মোয়া স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী হচ্ছে কিনা তা যদি মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা দেখভাল করতো তাহলে এগুলো খেয়ে কেউ অসুস্থ হতো না। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং বিএসটিআই উভয়েই এই পণ্যটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে তদারকি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সমস্যা হলো মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ এবং জেলা প্রশাসনসহ সকলের দায় এড়ানো কার্যক্রম। শুধু অভিযানে সুফল পাওয়া যায়না, অভিযানের ফলোআপ দরকার। কোন পণ্য যদি বাজারজাত করা হয় তাহলে সেটি কিভাবে করবে, কি কি অনুমোদন নিবে এসব নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

এদিকে চট্টগ্রাম বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক (মেট) ও অফিস প্রধান মো. মাজাহারুল হক বলেন, বাধ্যতামূলক মান সনদের তালিকায় পণ্য রয়েছে ২৭৬টি। এক্ষেত্রে এটি বিএসটিআইয়ের আওতাভুক্ত না হওয়ায় আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তবে তারা যেভাবে বাজারজাত করে পণ্যের মোড়কে স্টিকার লাগিয়ে সেক্ষেত্রে আমাদের থেকে স্টিকারের অনুমোদন নিতে হবে।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ