spot_imgspot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদচট্টগ্রামকক্সবাজারকক্সবাজারে পৌছালো প্রথম রেল; দর্শণার্থীদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস

কক্সবাজারে পৌছালো প্রথম রেল; দর্শণার্থীদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

শেষ সময়ের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন এবং পথের ত্রুটি যাচাই করতে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজারে এসেছে একটি ট্রেন। রোববার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে রেলটি কক্সবাজারের আইকনিক রেল স্টেশনে এসে পৌঁছায়। দীর্ঘ ১০ঘন্টা অপেক্ষার পর নিজেদের প্লাটফর্মে রেল দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন দর্শণার্থীরা। এর আগে সকাল নয়টায় আটটি বগি ও একটি ইঞ্জিন নিয়ে ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়ে।

কক্সবাজারে আসা ট্রেনটিতে রয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার ও রেলের পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কক্সবাজারে অবস্থান করে ৬ নভেম্বর কক্সবাজার রেল স্টেশন ইয়ার্ড পরিদর্শন এবং আগামী ৭ নভেম্বর সকাল সাতটায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়ার কথা রয়েছে।

সকাল নটায় চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা দেয়া আট বগি ও এক ইঞ্জিনের রেলটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রায় ১০ ঘন্টা পর কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে এসে পৌঁছায়। প্রথমবারের মতো কক্সবাজারে রেল আসছে জেনে কয়েক হাজার স্থানীয় দর্শণার্থী আইকনিক রেল স্টেশন প্লাটফর্মে সকাল থেকে অবস্থান নেয়। ইতিহাসের অংশ হতে এসে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও রেলের দেখা না পেয়ে হতাশায় বাড়ি ফিরেছেন অনেকে।

আইকনিক স্টেশনের পার্শবর্তী পাওয়ার হাউস এলাকার বাসিন্দা তারেক আরমান বলেন, সকালে গণমাধ্যমে খবর দেখেছি কক্সবাজারে প্রথম রেল আসছে। বেলা ২টার দিকে আইকনিক স্টেশনে পৌঁছাতে পারে এমন খবরে এলাকার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর দলবেঁধে প্লাটফর্মে এসে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু সন্ধ্যার পরও রেল না আসায় বাড়ি ফিরে যায় সিংহভাগ দর্শণার্থী। তখনও গণমাধ্যমকর্মী এবং উৎসুক পুরুষরা অপেক্ষা করছে।

ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের রেলস্টেশন এলাকার ইউপি সদস্য মিজান সিকদার বলেন, আমরা উৎফুল্ল। কক্সবাজারে স্বপ্নের রেল এসেছে। দীর্ঘ ১০ঘন্টার অপেক্ষায়ও মানুষ ক্লান্তি প্রকাশ করেনি। সন্ধ্যা সোয়া ৬ টা ২৫ মিনিটে রেল কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে পৌঁছেছে। তখন জনতা হৈ হুল্লোড়ে উল্লাস প্রকাশ করে।

সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) শাখা সূত্র জানায়, ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে পৌছান রেলের পরিদর্শন দপ্তরের টিম। এসময় নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন ও বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শন করা হয়েছে। পথে কোথাও কোনো ত্রুটি আছে কি না যাচাই করে দেখা হয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এটি আমাদের রুটিন কাজ। এটিকে ট্রায়াল রান বলা যাবে না। আমাদের সঙ্গে রেলের পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা রেলপথ পরিদর্শন এবং ইন্টারলকিং সিগন্যালিং ব্যবস্থা, প্ল্যাটফর্ম উঁচু সঠিক কিনা, কালভার্ট, লেভেল ক্রসিং গেট দেখেন। ফিরে গিয়ে পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সার্টিফাই করবেন। এরপর ট্রেন চলবে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক সুবক্তগীন বলেন, ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে আসবেন। সেখানে সুধী সমাবেশে কথা বলবেন তিনি। আইকনিক স্টেশন দেখবেন ও একটা অংশ থাকবে উদ্বোধনের। ১১ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের পর বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলবে নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের শুরু থেকে। কক্সবাজার রুটে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ছয় জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা আছে। তবে ইঞ্জিন ও বগি সংকটের কারণে এখনই তা হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।

কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন ও রেলপথ নির্মাণে দায়িত্ব প্রকৌশলী এনামুল হক সরকার এনাম বলেন, আমার অবকাঠামোগত কাজ সমাপ্ত বলা যায়। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেরেছি আমরা। বাকি কাজ প্রকল্পের মেয়াদ শেষের আগেই সমাপ্ত হবে বলে আশাবাদী আমরা।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালে এই রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি। এ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলায় নির্ধারিত সময়ের আগেই তা সমাপ্ত হতে যাচ্ছে।

২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। রেলপথটি নির্মিত হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ