বাংলাধারা ডেস্ক »
এবারের বিশ্বকাপে মোট ম্যাচ সংখ্যা ৪৮, তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৬টি ম্যাচ ঠাই নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। সবগুলো ম্যাচ ‘মাঠে গড়িয়েছে’ বলার সুযোগ নেই, কারণ বৃষ্টির কারণে ইতোমধ্যে দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে (যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে পরিত্যক্ত হওয়া ম্যাচ সংখ্যার রেকর্ড)। এছাড়া আরও একটি ম্যাচে টসের পর খানিক খেলা হলেও ফলাফল আসেনি। তিনটি ম্যাচই পণ্ড হওয়ার কারণ ‘বৃষ্টি’।

যেসব ক্রীড়া ইভেন্ট বৃষ্টির মধ্যে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সম্ভবত ক্রিকেটই। শুধু বৃষ্টি ঝরার সময়েই নয়, বৃষ্টির পরও খেলা নিয়ে অনেক সময় থেকে যায় সংশয়। কারণ ভেজা আউটফিল্ড কিংবা সিক্ত উইকেট খেলায় রাখতে পারে বড় প্রভাব। বৃষ্টির সময় পিচ ঢেকে দেওয়া হয় বলে উইকেট ভেজার সুযোগ কম। তবে কভার থাকা সত্ত্বেও উইকেট ভিজে ম্যাচ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, এমন নজিরও আছে।
ইংল্যান্ডে চলমান দ্বাদশ বিশ্বকাপে দলগুলোর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি। বিশ্বকাপের মত বৈশ্বিক আসরে সব দলই খেলতে নামে জয়ের আশায়। ম্যাচ পণ্ড হলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করা তাই দুর্বলতম দলের জন্যও স্বস্তির বিষয় নয়। সর্বশেষ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার আসরের ১৬তম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়, যার ভেন্যু ছিল ব্রিস্টলের কাউন্টি গ্রাউন্ড।
এই ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে— ক্রিকেটের জন্য কি ছাদযুক্ত মাঠ ব্যবহারের সুযোগ নেই? উঠতি প্রজন্মের অনেকের কাছেই ব্যাপারটি অজানা থাকলেও অবাক করা তথ্য এই— ১২টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচের নজিরও আছে যেগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল ছাদযুক্ত স্টেডিয়ামে!
বলা বাহুল্য, ১২ ম্যাচের সবকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল একই ভেন্যুতে— অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ডকল্যান্ডস স্টেডিয়ামে। ভেন্যুটি একইসাথে মারভেল স্টেডিয়াম এবং দ্যা ডোম হিসেবেও পরিচিত। ২০১৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ বছর ইতিহাদ স্টেডিয়াম নামে ছিল খ্যাতি। প্রতিষ্ঠার পর দুই বছর কলোনিয়াল স্টেডিয়াম এবং পরবর্তী প্রায় ৮ বছর টেলস্ট্রা ডোম হিসেবে পরিচিত ছিল।
নামের ইতিহাস টেনে আনার কারণ, এই ভেন্যুতে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট, সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার শুরু হওয়ার বছরেই। সেই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা, মাইকেল বেভান হাঁকিয়েছিলেন ছাদের নিচে প্রথম আন্তর্জাতিক শতক। তিন ম্যাচ সিরিজের পরের ম্যাচ একই ভেন্যুতে টাই হয়েছিল এবং তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে একই ভেন্যুতে জয় পেয়েছিল প্রোটিয়ারা।

২০০২ সালে পাকিস্তানের অস্ট্রেলিয়া সফরে ৩ ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালে এই ভেন্যুতেই একটি ম্যাচে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়া বিশ্ব একাদশ স্বাগতিকদের বিপক্ষে জমজমাট তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল তৎকালীন টেলস্ট্রা ডোম স্টেডিয়ামে। ঐ ম্যাচে মাইক হাসির হাঁকানো একটি বড় শট আটকে যায় স্টেডিয়ামের ছাদে, যার ভিডিও পাঠকদের জন্য থাকছে নিবন্ধের শেষ অংশে।
২০০৬ সালে শেষবারের মত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখা যায় ডকল্যান্ডস স্টেডিয়ামে। যার একটি ম্যাচে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা এবং অপর দুটি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঐ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি শেষবারের মত ছাদের নিচে অনুষ্ঠিত হয়েছিল কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ।
ছাদের নিচে ক্রিকেট ম্যাচের কথা বললেই অনেকে ভেবে বসেন ইনডোর স্টেডিয়ামের কথা। সেসব স্টেডিয়ামে ব্যাটসম্যানের হাঁকান শট সহজেই ছুঁতে পারে সীমানা। তবে ডকল্যান্ড স্টেডিয়ামে বাউন্ডারির সীমানা মোটেও ছোট নয়। বলে রাখা ভালো, ১২টি ম্যাচের সবগুলোতেই কিন্তু ছাদ ব্যবহার করা হয়নি। কেবল বৃষ্টি এলেই খুলে দেওয়া হতো ছাদ, যা নিজেকে মেলে ধরতে বা গুটিয়ে নিতে মোট ৮ মিনিট সময় নেয়।
প্রশ্ন জাগতে পারে— ব্যাটসম্যানের হাঁকান শটে বল ছাদ স্পর্শ করলে কী পরিণতি হয়? উত্তর হল— ঐ বলকে গণ্য করা হত ডেড বল হিসেবে।
ডকল্যান্ডস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিগ ব্যাশের ম্যাচও। ২০১৮ সালে মেলবোর্ন রেনিগেডসের বিপক্ষে পার্থ স্কচার্সের অ্যাশটন টার্নারের হাঁকান একটি শট ছাদে আটকে যাওয়ার ভিডিও সংযুক্ত করা আছে শেষাংশে। অবশ্য ঐ বলে সতীর্থ অ্যাশটন অ্যাগারের সাথে প্রান্ত বদল করেছিলেন টার্নার, অর্থাৎ বিগ ব্যাশে বলটি ডেড বল হিসেবে গণ্য করা হয়নি।

ডকল্যান্ড স্টেডিয়াম পৃথিবীর অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামগুলোর একটি। ভেন্যুর গ্যালারিতে থাকা আসন প্রয়োজন অনুযায়ী একসাথে সরান যায় সামনে-পেছনে। ক্রিকেট ম্যাচ একসাথে দেখতে পারেন ৪৮ হাজার দর্শক। রাগবি ও বিশেষত ফুটবল ম্যাচের ভেন্যু হিসেবেও ব্যবহৃত হয়, স্টেডিয়ামের কাঠামোগত কারণে সেক্ষেত্রে বেড়ে যায় ধারণক্ষমতা।
বলে রাখা ভালো, বৃষ্টির হাত থেকে খেলাকে বাঁচাতে নির্মিত এই স্টেডিয়াম দাঁড় করাতে খরচ করা হয়েছিল প্রায় দুই হাজার সাতশ কোটি টাকা। ম্যাচ চলাকালে ভেন্যুর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, যে বালাই নেই ছাদবিহীন অন্য সব ক্রিকেট ভেন্যুতে। চলমান ইংল্যান্ড বিশ্বকাপসহ বিভিন্ন সময়েই উঠেছে ছাদের নিচে ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের দাবি। সেই দাবি পূরণ হওয়া কঠিন মূলত এই ব্যবস্থায় বিশাল খরচাপাতির কারণেই।
তবে ক্রিকেটের ব্যাপক আধুনিকায়নের যুগে ছাদের সুবিধাযুক্ত স্টেডিয়ামে ম্যাচ দেখার ইচ্ছা মোটেও কোনো বাড়াবাড়ি নয়। তেমনি বাড়াবাড়ি নয় নিকট ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ছাদযুক্ত স্টেডিয়াম ব্যবহারের প্রত্যাশা করাও— যেক্ষেত্রে বৃষ্টিতে ম্যাচ পণ্ড হওয়ার হার নেমে আসবে শূন্যতে। তবে ডকল্যান্ড স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ সরে আসার ব্যাপারটি অবশ্যই পোড়াবে ক্রিকেটপ্রেমিদের!
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/বি