spot_imgspot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদপার্বত্য অঞ্চলদীর্ঘ ৮ মাস পর নিজ বসতভিটায় ফিরলো পাইক্ষ্যং গ্রামের ৫৭ পরিবার

দীর্ঘ ৮ মাস পর নিজ বসতভিটায় ফিরলো পাইক্ষ্যং গ্রামের ৫৭ পরিবার

বান্দরবান প্রতিনিধি
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

কেএনএফ সাথে শান্তির প্রতিষ্ঠার কমিটি প্রথম বৈঠক শেষে দীর্ঘ ৮ মাস পর বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো নিজ জন্মভিটায় ফিরেছেন পাইক্ষ্যং পাড়ার বম সম্প্রদায়ের ৫৭টি পরিবার। তবে এখনো বেশ কয়েকটি পরিবার ফিরে আসেননি। তাদেরকে নিজ বসতভিটায় ফিরে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশিষ্টরা।

জানা গেছে, রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের অবস্থিত পাইক্ষ্যং পাড়া। সে গ্রামে বম সম্প্রদায়ের ৯৭টি পরিবারের বসবাস। পাহাড়ে গজিয়ে উঠা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফের আতঙ্কের ভয়ে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ৯৭টি পরিবার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়। কেউ জঙ্গলে কেউ বা আত্বীয়দের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত শনিবার সেনাবাহিনীর উদ্যেগে পাইংক্ষ্যং পাড়ার বম সম্প্রদায়ের পাইক্ষ্যং গ্রামে ৫৭টি পরিবার ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। তবে এখনো ৪০টি পরিবার ফিরে আসেননি। তবে সেসব পরিবার দ্রুত ফিরে আসবে বলে আশ্বাস জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

পাইক্ষ্যং পাড়ার গ্রাম প্রধান পিতর বম জানান, কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযানের কারনে গত এপ্রিল মাসে পাড়ার ৯৭টি পরিবার আতংকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় নিজ বসতভিটায় ৫৭ পরিবারের প্রায় ২০০ জন সদস্য ফিরে এসেছে। আরো অবশিষ্ট ৪০টি পরিবারও অচিরেই গ্রামে ফিরে আসবে বলে আশ্বাসের কথা জানান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এলাকায় সন্ত্রাসীদের নির্যাতনসহ বিভিন্ন সমস্যা ও আতঙ্কিত হয়ে পাড়ার লোকজন ভয়ে সবাই বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। পরিবারের সদস্যদের সাথে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চলে যাওয়ার ফলে সাতমাস ধরে স্কুল বন্ধ ছিল। গতকাল থেকে পাড়াবাসীরা গ্রামে আসতে শুরু করেছে। সেই সাথে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে নিয়মিত আসা শুরু করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মূখরিত হবে বলে আশ্বাস করছেন ক্যপ্লাংপাড়া মানিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়ের শিক্ষকরা।

ক্যপ্লাং পাড়া মানিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোয়াত লিয়ান বম জানান, গতকাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে শুরু করেছে। ক্লাস নিয়মিত হচ্ছে। আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অনান্য শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে শুরু করবে।

অন্যদিকে, থানচি – রুমা সিমান্তের প্রাতা পাড়া এলাকায় থেকে ২৮ টি পরিবার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়। সেখানেও সেনা সহায়তায় গত শনিবার নিজ বসতভিটায় ফিরেছেন ১১টি বম পরিবারের ৪৯ জন সদস্য। তবে এখনো ১৭টি পরিবার বিভিন্ন স্থানে এখনো আশ্রয় নিয়ে আছেন। তবে সেসব পরিবারগুলোকে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাতা বম পাড়ার বাসিন্দা পিয়ার নিয়ার বম রনি (৩৮) বলেন, গত বছরে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও নিরাপত্তা বাহিনির সা‌থে সমস্যার কারনে আমরা দীর্ঘ নয়মাস যাবৎ বন জঙ্গলে ও বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয়ে ছিলাম। আজকে বাড়ীতে ফিরতে পেরে খুব খুশি লাগছে।

এদিকে দীর্ঘ আটমাস পর নিজ বাড়িতে ফিরে আসা পাইংক্ষ্যং পাড়ায় ৫৭টি পরিবারদের মাঝে ফ্রী মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছে সেনা সদস্যরা। সেখানে বিভিন্ন নারী- পুরুষ ও শিশুদের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। শুধু তাই চিকিৎসা নয় পাইক্ষ্যং পাড়া হতে রনিন পাড়ার পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, শিক্ষা উপকরণ ও শীতবস্ত্র বিতরণের পাশপাশি সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসের ত্যাগিদ দেন সেনাবাহিনী ও জনপ্রতিনিধিরা।

রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা জানান, পাড়াবাসীরা বিভিন্ন সমস্যা কারণের গ্রাম ছেড়ে অন্যত্রে চলে গিয়েছিল। দীর্ঘ ৮ মাস পর এলাকার লোকজন ফিরতে শুরু করেছে। গ্রামবাসীদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে বলে জানান তিনি।

বম সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য লালজার লম বম বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে কেএনএফের বৈঠক করার পর গত ১৪ নভেম্বর থেকে বাজার-সদাই উপর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পাইংক্ষ্যং পাড়াবাসীর খাদ্য সংকটের বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এর সাথে কথা হয়েছে এবং তিনি আশাব্যঞ্জক সহযোগীতা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ করেন।

বান্দরবান সদর জোনের জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মাহমূদূল হাসান বলেন, পাইংক্ষ্যং পাড়ায় ৫৭পরিবার ফিরে এসেছে তাদেরকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ হতে ফেরত আসা সকল পরিবারের সদস্যদের সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রাথমিভাবে প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সহায়তা প্রদানের কাজ শুরু হয়ে গেছে যা পুরো রাস্তা সংস্কারের পর আরো বেগবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে রোয়াংছড়ি – পাইক্ষ্যং পাড়া সড্কের সংস্কার কার্যক্রম পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে চলমান রয়েছে। অচিরেই এ রাস্তায় যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে শান্তি ও অথনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ