শীত মৌসুম শুরু হতে না হতেই কক্সবাজারের ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়কে ফের শুরু হয়েছে অপহরণ। বিয়ের সদাই করতে গিয়ে ফেরার পথে সোমবার (২১ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে সড়কের ঈদগড় পানেরছড়া ঢালা এলাকা থেকে দুই যুবককে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে গেছে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা।
অপহরণের শিকার দু’জনের মাঝে একজন টমটম চালক, অপরজন বীমাকর্মী। অপহৃত টমটম চালকের বিয়ে আগামী শুক্রবার (২৪ নভেম্বর)। অপহরণস্থল সড়কের উপর হতে তার চালিত টমটমটি উদ্ধার হলেও জিম্মি রয়েছে টমটম চালক। তাকে মুক্ত করতে তিন লাখ টাকা ‘মুক্তিপণ’ দাবি করেছে অপহরণকারিরা। এদিকে, অপহৃতদের মাঝে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকালে কৌশলে পালিয়ে এসেছে বীমাকর্মী। ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভুট্টো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অপহৃত টমটম চালক মুহাম্মদ তারেক (২৬) রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের ধুমছাকাটা এলাকার মো. ওসমানের ছেলে। বীমাকর্মী শহীদুল ইসলাম (২৫) একই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ছগিরাকাটা এলাকার দানু মিয়ার ছেলে।
ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১নং ওয়ার্ড সদস্য খোরশেদ আলম জানান, আগামী শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) অপহৃত তারেকের বিয়ে। এ উপলক্ষে কেনাকাটার বিষয়ে নিজের চালিত টমটম নিয়ে ঈদগাঁও বাজারে গিয়েছিল তারেক। সেখান থেকে টমটম যোগে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণকারীদের কবলে পড়ে তারেকসহ তার টমটমে থাকা যাত্রীরা। গাড়িতে থাকা সবার টাকা ও মূল্যবান পণ্যসামগ্রি নিয়ে তারেক ও শহীদকে তুলে নিয়ে পাহাড়ে ঢুকে যান সশস্ত্র অপহরণকারীরা।
তিনি আরো জানান, শুনেছি-সকালে প্রাকৃতিক ডাক সারার বাহানায় কৌশলে বীমাকর্মী শহীদ অপহরণকারিদের হাত থেকে পালিয়ে এসেছে। আটজনের অপহরণকারি দলে ৫জন ২৫-৩০ বছর বয়সী তরুণ এবং বাকিরা ৪০-৪৫ বছর বয়সী। তাদের হাতে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো ছুরি এবং দা রয়েছে বলে জানালেও আর কোন তথ্য দিতে সাহস করছে না শহীদ। এদিকে, তারেককে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে তার ফোন থেকে কল করে ৩লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারীরা।
ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ভুট্টাে বলেন, ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়কটির অধিকাংশ এলাকা পাহাড় বেষ্টিত। সড়কের ভোমরিয়াঘোনা ফরেস্ট অফিস হতে ঈদগড় পর্যন্ত জায়গায় জায়গায় পাহাড় ঘেরা। এর মাঝে হিমছড়ি, পানেরছরা, বেঙডেবা ঢালাসহ আরো কয়েকটি এলাকা অনিরাপদ। এসব এলাকায় ডাকাতি করে দ্রুত পাহাড়ে উঠে গেলে তাদের আর ধরার কোন জোঁ থাকে না। এসব এলাকায় যানবাহন ডাকাতির পর সুযোগ বুঝে অপহরণ করে তাদের পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। শীত মৌসুমেই এ অপহরণ ও ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটে।
তিনি আরো জানান, একারণে ঈদগড়-বাইশারী এলাকার মানুষকে রাত আটটার পরে পারত পক্ষে এ সড়ক ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু অপহৃত টমটম চালক তারেক রাতেই সড়কে ভাড়া টানে বেশি। এটা জানার পর আমরা নিষেধ করেছিলাম। ঈদগড় ফাঁড়ির পুলিশ তাকে কয়েকবার ফাঁড়িতে ডেকে এ ব্যাপারে সতর্কও করে। এরপরেও ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে। একজন কৌশলে ফিরে এসেছে, তারেককেও ফিরিয়ে আনতে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
ঈদগড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপ-পরিদর্শক) মনিরুল ইসলাম বলেন, অপহরণের খবর পেয়েই আমার টিম ঘটনাস্থলে যায়। এসময় কাউকে ওখানে পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকালে একজন পালিয়ে এসেছেন, অপরজনকে উদ্ধারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়কটি ঈদগাঁও-রামু ও নাইক্যংছড়ি থানার আওতাধীন। সড়কের অধিকাংশ পাহাড়ের গাঁ ঘেষে যাওয়ায় অপরাধীচক্র গহীন পাহাড়ে আত্মগোপন করে থাকে। ফলে, অভিযান চালিয়েও তাদের প্রতিহত করা কষ্টসাধ্য। গত এক দশকে এ সড়ক দিয়ে শতাধিক অপহরণ ঘটনার প্রচার আছে। আমাদের অংশে রাত ১০টা পর্যন্ত টহল রাখি। অপরাধীদের ভয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর যান ও জনচলাচল সীমিত করা অপহরণ বা অপরাধ রদের সমাধান হতে পারে না। আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত ও প্রতিহত করতে উর্ধতনদের সাথে কথা বলে যৌথ অভিযানের উদ্যোগ নেব।