বাংলাধারা প্রতিবেদন »
অব্যবস্থপনা ও বিডম্বনা রোধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম ওয়াসার সকল কার্যক্রম অটোমেশনের (স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি) আওতায় আনার যে নির্দেশ দিয়েছেন সেটিকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
শনিবার ( ২৯ জুন ) সংগঠনের নেতারা মন্ত্রী ও সচিবের পানির দাম বাড়ানোর পরামর্শের বিরোধীতা করে এটিতে অযৌক্তিক ও অগ্রহনযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান ক্যাব নেতারা।
বিবৃতিদাতারা হলেন, ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান।
বিবৃতিতে বলা হয়, অদক্ষ প্রশাসন, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মীয়করণ ও গ্রাহক স্বার্থকে উপেক্ষা করার কারণে প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছরেও চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরবাসীর চাহিদা পুরণে ব্যর্থ। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর বর্তমান সরকারের ১০ বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকার সর্বোচ্চ উন্নয়ন বরাদ্ধ পেলেও গতিশীলতা আসেনি। বয়সের ভারে ন্যুজ্ব ও দুর্নীতির জন্য কারাভোগকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে প্রশাসনে গতিশীলতা আসেনি। অধিকন্তু গত ২৫ মে ২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত ওয়াসার ৫১তম সভায় বলা হয় গড়বিল আদায়ের কারণে ২৭ হাজার গ্রাহক ৫ ইউনিট পানি ব্যবহার করে ৩০ ইউনিটের বিল দিচ্ছেন।
হিসাব শাখার এ চাঞ্চ্যকর তথ্য উপস্থাপন হলে ওয়াসার বোর্ড সদস্য জাফর সাদেককে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। নানাবিধ অনিয়ম, গড় বিল আদায়ের মতো পুকুর চুরি, পানির দৈনিক উৎপাদন নিয়ে হেরফের, ডাটাবেস ছাড়াই উৎপাদন খরচ নির্ধারণ ও বিতরণে শুভংকরের ফাঁকির মতো ঘটনাগুলি উদঘাটনে প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ক্যাব। ওয়াসার অভ্যন্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতি উদঘাটন করে চট্টগ্রামবাসীর অন্যতম সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকে আদর্শ ভোক্তা বান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার দাবিও জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ক্যাব দীর্ঘদিন ধরেই গড় বিল আদায়, বিল আদায়ে নানা অনিয়ম তুলে ধরে আসলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কোন কর্ণাপাত করেনি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই বিপুল পরিমান বিল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নিতে পারে নি। আর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের পূর্বেই পানির দাম বাড়ানোর কথা বলে তদন্ত কমিটির কাজ ভিন্নখাতে নিতে পাঁয়তারা করছেন।
পুরো নগরে পানির জন্য হাহাকার, নগরজুড়ে রাস্তা খোড়াখুড়ি, পানির লিকেজ ও বিপুল পরিমান পানি প্রতিদিন নালা, নর্দমায় পড়ে গিয়ে অপচয় হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন জায়গায় পানির জন্য হাহাকার, ময়লা ও দুর্গন্ধময় পানি, হালিশহর এলাকায় পানির লাইনে স্যুয়ারেজ এর লাইন যুক্ত হয়ে পানি দূষণে গত বছর জন্ডিসসহ পানিবাহিত রোগ মহামারী আকারে রূপ নিলেও ওয়াসা কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ দাবি করেন নগরের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ পানি ওয়াসা সরবরাহ করছে। কিন্তু ওয়াসার হিসাব শাখার তথ্য অনুযায়ী ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ গ্রাহক সার্বক্ষণিক পানি পাচ্ছেন। বাকিরা নিয়মিত পানি পান না। আবার চট্টগ্রাম ওয়াসা দাবি করছে, পানির উৎপাদন দৈনিক ৩৬ কোটি লিটার। যার কোন বৈজ্ঞানিক সত্যতা নাই। কারণ রাঙ্গুনিয়ায় শেখ হাসিনা পানি শোধানাগার, মদুনাঘাট পানি শোধনাগার ও পাম্প হাউজে কোন ডিজিটাল মিটার নাই। ফলে কত লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে তার প্রকৃত সত্যতা যাচাই করার জন্য ওয়াসার ডাটাবেস নাই।
আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম ওয়াসায় গ্রাহক প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের তল্পিবাহক রাজনীতিবিদ ও ঠিকাদার থাকলেও তাঁর মেয়াদ ২০১৫ সালে শেষ হলেও গত ৪ বছরে নতুন গ্রাহক প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। এছাড়াও ভোক্তাপ্রতিনিধি মনোনিত করার বিধানও মানেন নি কর্তৃপক্ষ। যিনি পর পর দুবার প্রতিনিধিত্ব করে অনেক ২০১৫ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও কিভাবে ওয়াসা বোর্ডে বহাল থাকেন তাও বড় প্রশ্ন?
ভোক্তা প্রতিনিধি হিসেবে যিনি চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ডে প্রতিনিধিত্ব করছেন তাঁর সাথে চট্টগ্রামের ভোক্তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। সরকার ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ প্রণয়ন করেছেন। যেখানে ধারা নং ৫ এর ১৬ উপ-ধারায় বলা আছে, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) দেশের সর্বত্র ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
আর তারই ধারাহিকতায় ক্যাব সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভোক্তা র্স্বাথ সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারণী ও কমিটিগুলিতে প্রতিনিধিত্ব করে আসলেও চট্টগ্রাম ওয়াসায় তা মানা হয়নি। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বর্তমান সরকারের সহানুবতিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক একাধারে ১০ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে বয়স, কর্মক্ষমতার কারণে ওয়াসাকে কিছুই দিতে পারেননি। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ১৯৬৮ সালে চাকুরীতে যোগদান করেন।
১৯৯৮ সালে পূর্ণ মেয়দ শেষ করে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে অবসরে যান। সত্তরউধর্ব বয়সে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে তাঁর পক্ষে কতটুকু কর্মশক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব? ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতির মামলা হয়েছিলো যা এখনও চলমান এবং তাঁকে দুর্নীতির কারণে কারাবাস করতে হয়েছিলো। ওয়াসায় চাকরিকালেও সাসপেন্ড ছিলেন।
ফলে কিছু আত্মীয়স্বজনকে সুযোগ সুবিধা প্রদান, আত্মীয়করণ ও বোর্ডকে উপেক্ষা করে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহন ছাড়া আর কিছুই করা সম্ভব হয়নি। তার একগুয়েমির কারণে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক(প্রকৌশল) অধ্যবদি নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, চট্টগ্রাম নগর জুড়ে পানির জন্য হাহাকার, যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করছেন না।
পানি সংকটের কারনে সর্বত্রই টিউবওয়েল স্থাপন যেরকম প্রকট আকারে বেড়েছে, তেমনি ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরীর সংখ্যাও বেড়েছে ব্যাপকহারে। তারপরও নগরবাসীর জন্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়নি। সিটি কর্পোরেশন এলাকার একটি বড় অংশে এখনও পানির জন্য হাহাকার।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/এসবি