রোজিনা ইসলাম। দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এবং একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক। তার কাজের ধারাবাহিকতাই আজ তাকে শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। এক বা একাধিক নয়, অসংখ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণে তিনি আজকের রোজিনা ইসলাম। বর্তমানে রোজিনা ইসলামকে পুরো দেশের পাঠক মহল এক নামে চেনেন। তবে গুটিকয়েক মানুষ তার কাজে ভীত-সন্ত্রস্ত। যারা দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সম্পদ আর জনগণের অর্থ লুটে ব্যস্ত। যখনই তাদের মুখোশ খুলে গেছে, তখনই তারা সত্যকে ঢাকতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। সেই ভিন্ন কৌশলেরই সর্বশেষ নমুনা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে।
পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিকই প্রায়ই এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে এটা বলা যায়, হালের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-সহ নানা আইনের কারণে স্বাধীন সাংবাদিকতা অনেকটাই বাধাগ্রস্থ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব চাপ এড়ানো যায় না। এরপরও যদি কোনো গণমাধ্যম বা গণমাধ্যমকর্মী রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে কোনো সাংবাদ প্রকাশ করেই ফেলে, তারপরের পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর হয় না।
অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার তিন মূল স্তম্ভের (নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ) পর গণমাধ্যমকে চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণ্য করা হয়। তার ভূমিকা মূলত পাহারাদারের মতো। এই পাহারাদারের কারণেই কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দুর্নীতি-অনিয়মের খবর জনগণের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানতে পারেন।
অনেকক্ষেত্রে সেসব বন্ধে পদক্ষেপও নেন। তাই গণমাধ্যম ও তার কর্মীরা কিছু মানুষের বিরাগভাজন হন সব সময়। নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতে রাষ্ট্র ও সরকারের দোহাই দিয়ে সেইসব দুর্নীতিবাজরা বাঁচতে চান। আর সমস্যাটা তৈরি হয় সেখানেই।
আমরা মনে করি, রোজিনা ইসলামের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কেননা তার কাজ রাষ্ট্র বা সরকারের বিরুদ্ধে নয়। গুটিকয়েক অসৎ ব্যক্তির অনিয়মের বিরুদ্ধে। নিজের স্বার্থে বা লাভের জন্য তিনি এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি। করেছেন মানুষের কল্যাণে। সরকারের কল্যাণে।
তাই আমরা চাই, এই ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করা হোক। তাদের শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি রোজিনা ইসলামকে রাষ্ট্রের স্বার্থেই দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করা হোক। না হলে ভুল বার্তায় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে রাষ্ট্রেরই।
বাংলাধারা/এআই