spot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০২৩
প্রচ্ছদঅন্যান্যবঙ্গবন্ধুর আদর্শই হোক পথচলার আলোকবর্তিকা

বঙ্গবন্ধুর আদর্শই হোক পথচলার আলোকবর্তিকা

spot_img

সম্পাদকীয় »

বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজ ১০২তম জন্মবার্ষিকী। এই দিবসটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও উদযাপিত হচ্ছে। এই বছরটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে, ফলে এই দুটি অধ্যায় জাতির সামনে দেশগড়ার উদ্দীপনা ও উৎসবের আবহ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন শেখ মুজিব। স্কুল জীবনেই তিনি রাজনৈতিক সক্রিয়তায় জড়িয়ে পড়েন। কোলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়াকালীন তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। পাকিস্তান আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিলো।

দেশভাগের পর পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ববাংলার মানুষের ওপর শোষণ, নির্যাতন এবং উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করতে তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং পরে রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। পরে দলটির নাম পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ রাখা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানিদের অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে শেখ মুজিব সারা পূর্ব বাংলা সফর করে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের সাফল্যের পেছনে ছিলো তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা। এই সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৫৮ সালে আইয়ুবের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছাত্র গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৬ সালে পূর্ব বাংলার মুক্তিসনদ ৬ দফা কর্মসূচি দেন। এই সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আন্দোলনের কারণে তাঁকে বারবার কারাগারে যেতে হয় আইয়ুব খান তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয় ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’। বাংলার ছাত্র জনতার তীব্র গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোষ্ঠী। মুক্তির পর ছাত্রজনতা তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করে সামরিক জান্তা, পূর্ববাংলায় দমন নিপীড়ন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু ৭মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তির দিকনির্দেশনা দেন। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ববাংলায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়; বাঙালি বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার কাজটি শুরু করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে হাত দেন। জিডিপি বাড়তে শুরু করে, বাংলাদেশ অধিকাংশ দেশের কূটনৈতিক স্বীকৃতি অর্জন করে। সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদের সর্বোচ্চ সম্মান ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন। বিবিসির জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হন। জনগণের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ ব্যাপক অর্থনৈতিক-সামাজিক কর্মসূচি নেন। জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী, দেশবিরোধী দেশি বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী ও প্রতিক্রিয়ার শক্তির এজেন্টরা সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের সহযোগিতায় জাতির জনককে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদেরও নির্মমভাবে তারা হত্যা করে। এটি আমাদের দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়।

বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ আজ জাতিকে পথ দেখিয়ে চলেছে। তিনি ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে কাজ শুরু করেছিলেন, তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেসব অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে অর্থনৈতিক-সামাজিক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন। জাতি উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। জাতির জনকের জন্মবার্ষিকীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মহানায়কের স্মৃতির প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ