তারেক মাহমুদ »
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি আগে থেকে ছিল এবং তা এখন আরও বেশি জোরদার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ নিয়ে যাবতীয় কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন ও পরামর্শ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে দেশের ৬৪ জেলা পর্যায়ে এবং ১০০টি উপজেলার কর্মীদের ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইপিআইয়ের মাঠকর্মীদের নমুনা সংগ্রহের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে রক্ত সংগ্রহ করে করোনাভাইরাস শনাক্তের কাজও চলছে পুরোদমে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়া, দেশের বিভিন্ন স্থান লকডাউন করা, লম্বা সরকারি ছুটি দেওয়া, সেনাবাহিনী মোতায়েন, পরীক্ষার আওতা বৃদ্ধি। এসব পদক্ষেপ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাছাড়া সংসদ বাংলাদেশ নামক চ্যানেলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাসায় থেকে ক্লাস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানুষ যাতে প্রয়োজনে জরুরি সেবা নিতে পারে তাই চিকিৎসকদের ফোন নম্বর দিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ চলছে। চিকিৎসকদের বিষয়টি যতটা আলোচনা হয়, অন্যান্য লোকবল বা প্রস্তুতি নিয়ে তত আলোচনা হয় না। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) র্যাপিড রেসপন্স টিমের সদস্যরা এবং আইইডিসিআরের কর্মীরা রোগ শনাক্ত করেন। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে জনবল কম। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নমুনা সংগ্রহের জন্য সব জায়গায় মানুষ পাঠাতে পারছে না আইইডিসিআর।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশসহ ১৭৮টি দেশে এই ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিদিন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে।
বৈশ্বিক মহামারির এ পর্যায়ে ছয়টি বিষয়কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুরুত্ব দিয়েছে। সংস্থার প্রথম সুপারিশে বলা আছে, জনস্বাস্থ্যসেবার আওতা বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্য জনবলকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং তাদের কাজে নামাতে হবে। দ্বিতীয় সুপারিশ সমাজে বা জনগোষ্ঠীতে সন্দেহভাজন রোগী শনাক্তকরণ। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা। চতুর্থ গুরুত্ব হচ্ছে, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা ও তাদের আইসোলেশনে রাখার জন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিক নির্দিষ্ট করতে হবে, সেগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে এবং যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে সাজাতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পঞ্চম গুরুত্ব হচ্ছে, সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আশা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন করার জন্য একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে। কোন পদ্ধতিতে তা করা হবে, তা-ও পরিষ্কার করে বলতে হবে। ষষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গোটা সরকারব্যবস্থাকে সংযুক্ত ও সম্পৃক্ত হতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম ২৫ মার্চ নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ মুহূর্তে করোনা প্রতিরোধে দ্বিতীয় সুযোগ হাতছাড়া না করার পরামর্শ দেন তিনি।
সরকারের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরকারের প্রস্তুতি আগে থেকে ছিল এবং তা এখন আরও বেশি জোরদার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
জনবল সম্পর্কে তিনি বলেন, ৬৪ জেলা পর্যায়ের এবং ১০০টি উপজেলার কর্মীদের ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইপিআইয়ের মাঠকর্মীদের নমুনা সংগ্রহের কাজে লাগানো হবে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম