ksrm-ads

১৯ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

ভেজাল ঘিয়ে সয়লাব আনোয়ারার হাটবাজার, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ

খালেদ মনছুর, আনোয়ারা প্রতিনিধি :::

ভেজাল ঘিয়ে সয়লাব আনোয়ারার হাটবাজার। বিভিন্ন চটকদার মোড়কে এসব ভেজাল ঘি না বুঝে এই রমজান মাসে দেদারছে কিনছে সাধারণ মানুষ । ডালডা, রং আর ফেবিকল গাম দিয়ে তৈরি হচ্ছে খাঁটি গাওয়া ঘি।

তাছাড়া বিয়ে, মেজবানসহ নানা অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ভেজিটেবল ঘি নামে আরেকটা ভেজাল ঘি। এসব অবৈধ ও ভেজাল ঘি বাজারজাত করতে বিভিন্ন লটারি আর উপঢৌকনের মাধ্যমে হাতে নেয়া হয়েছে স্থানীয় বাবুর্চিদের। রঙ বেরঙের কৌটায় ভরা এসব ভেজাল ঘিয়ের ভেতরে দেয়া হচ্ছে টোকেন। প্রতিটি টোকেনের বিপরীতে দেয়া হয় ২০০ টাকা। আর টাকার লোভে বাবুর্চিরা বিবাহের রান্নার সরঞ্জামের তালিকায় এসব ভেজাল ঘিয়ের নাম লিখে দেন অনায়াসেই। এখানে অনুষ্ঠান আয়োজনকারীর পছন্দ-অপছন্দের কোনো মূল্যই থাকেনা। বাবুর্চির পছন্দমত ঘি না আনলে রান্না ভাল হবেনা বলে এক প্রকার ভীতি জাগিয়ে দেন বাবুর্চিরা।

এদিকে প্রতিবছর রমজানকে ঘিরে জমজমাট হয়ে উঠে আনোয়ারায় ভেজাল ঘিয়ের ব্যবসা। মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিএসটিআইয়ের লোগো লাগিয়ে চলছে ভেজাল ঘিয়ের রমরমা বাণিজ্য। অনেকে আবার বিএসটিআইয়ের বদলে সেনাকল্যাণ সংস্থা, বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর অনুমোদন দেখিয়ে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে ভেজাল ঘিয়ের রমরমা ব্যবসা।

তবে এসব ঘিয়ের কৌটায় জনসাধারণকে ধোঁকা দিতে আবার বিএসসটিআইয়ের লোগোও সেঁটে দেয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে ঘিয়ের বাজারে অস্থির একটা অবস্থা বিরাজ করছে। এসব ক্ষতিকারক সামগ্রীতে তৈরি ভেজাল ঘি খেয়ে মানুষের শরীরে মারাত্মক রোগ ব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে। বাজারের এসব ভেজাল ঘি নিয়মিত খেতে থাকলে শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা জানান, রং, ফ্লেভার আর গাম দিয়ে যেসব ভেজাল ঘি তৈরি হচ্ছে সেটি মানুষের শরীরের কিডনী, লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিবে। সর্বোপরি এসব ভেজাল ঘি নিয়মিত খেলে মানব শরীওে ক্যান্সারও হতে পারে।

সরেজমিন আনোয়ারার বাজরগুলো পরিদর্শণে দেখা যায়, দুই ধরণের ভেজাল ঘি বাজারজাত করে থাকেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ভেজিটেবল ঘি নামে যেটি ব্যবাহার করা হয় বিয়ে, মেজবানসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে। অপরটি খাঁটি গাওয়া ঘি নামে রমজানকে ঘিরে বাজারে ছাড়া হয়েছে।

এর মধ্যে সকল মুদির দোকানে যেসব ঘি দেদারছে বিক্রি হচ্ছে এম এস খাঁটি গাওয়া ঘি ও থ্রি স্টার খাঁটি গাওয়া ঘি। এম এস খাঁটি গাওয়া ঘি’র কারখানা বৈরাগ খাঁনবাড়ি এলাকায়। যেখানে গত ২১ তারিখ উপজেলা ভূ’মি সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হাসান চৌধুরীর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় দেখা যায় ঘিয়ের প্রধান কাঁচামাল গরুর দুধের সরের কোনো অস্থিত্বই নেই এসব খাঁটি গাওয়া ঘিয়ে। ফ্লেভার, রং, ডালডা ও ফেবিকল গাম দিয়েই তৈরি হচ্ছে খাঁটি গাওয়া ঘি। ভ্রাম্যমান আদালত এসময় বোতলজাত করার জন্য ড্রামের মধ্যে রাখা ঘিয়ে নালায় ফেলে দেন এবং ভেজাল ঘিয়ের মালিক মো. রাশেদকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। থ্রী স্টার কোম্পানীর কারখানা জুঁইদন্ডী এলাকায়। বাজারে এই ব্রান্ডের ঘিও প্রচুর পাওয়া যায়।

এছাড়া বাজারে রয়েছে বিয়ে, মেজবানসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত ভেজিটেবল ঘিয়ের নামে বেশ কয়েকটি কোম্পানির ভেজাল ঘি। এসব ঘিকে ভেজিটেবল ঘি নামে প্রচার করলেও এগুলো তৈরির প্রধান কাঁচামাল কিন্তু সেই ডালডা, রং, হলুদ আর ফ্লেভার।

স্থানীয় বাবুর্চিদের টোকেনের মাধ্যমে লোভনীয় উপহার দিয়ে এসব ভেজাল ঘি জনসাধারণের গালাধকরণ করাচ্ছে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা। ভেজাল ঘিয়ে ব্যবসা করে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি টাকার মালিক বলে গেলেও সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য ব্যাপক হুমকিতে ফেলে দিয়েছেন।

তবে মজার বিষয় হচ্ছে অন্যান্য পণ্য যেভাবে মনিটরিং করেন বিএসটিআই কিংবা উপজেলা প্রশাসন, ভেজাল ঘিয়ের ব্যবসাটি নজরদারির একপ্রকার বাইরে থেকে যায়। ফলে দিনের পর দিন এসব ভেজাল ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন এব অসাধু ব্যবসায়ীরা।

আনোয়ারায় বিয়ে, মেজবানির জন্য ভেজিটেবল ঘি নামে বাজারে যেসব ভেজাল ঘি পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো হল, গুয়াপঞ্চক শাহ পাড়ার ডানোফা ঘি, বাঁশখালী থেকে আসা সেভেন স্টার ঘি, বটতলী আইরমঙ্গল এলাকার বাবু ঘি, চাতরী এলাকার রুপসা ঘি, আনোয়ারা সদরের বসুন্ধরা ঘি অন্যতম। এসব ভেজাল ও অবৈধ ঘিয়ের মালিকরা বরাবরই বিভিন্ন তদবির আর লবিংয়ের মাধ্যমে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এবার রমজান উপলক্ষে প্রশাসনের ভেজাল ঘিয়ের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ায় আশান্বিত হচ্ছেন জনসাধারণ।

এসব অভিযান নিয়মিত চালু থাকলে ভেজাল ঘি বাজারজাতকারী অসাধু ব্যবসায়ীরা এতটা বেপরোয়া হওয়ার সুযোগ পাবেন না বলে জানিয়েয়েছেন ভোক্তারা।

ডানোফা ঘি বাজারজাতকারী ব্যবসায়ী মাহমুদ জানান, আমি ঘিয়ের মালিক নই। আমি ডানোফা ঘিয়ে চাকরি করি। আনোয়ারায় বাজারজাত করা আমার দায়িত্ব।

থ্রি স্টার ঘিয়ের মালিক বলেন, আমরা এখন আপাতত কারখানা বন্ধ রেখেছি। রমজানের আগে যেগুলো বাজারজাত করেছিলাম সেগুলো এখনো বাজারে রয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমদ বলেন, আনোয়ারায় ভেজাল ঘিয়ের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। ভেজাল ঘিয়ে ব্যবসা করে কেউ পার পাবে না।

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন