চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৪ বছর পর সরানো হলো দাহ্য ও বিপজ্জনক পণ্যের ৪ টি কন্টেনার। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র সৈয়দ এ মু’মেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে নিবিড় তদারকি ও আনুক্রমিক চেষ্টায় ৪১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে রবিবার (২৭ অক্টোবর) নিলাম দরদাতা মেসার্স এস এ ট্রেডিং এন্ড কোং-কে পণ্য চালানটি খালাস দেয়া হয়।
জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর বন্দর-কাস্টমস যৌথ সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছিলেন, দাহ্য ও বিপজ্জনক পণ্যের ৪ টি কন্টেনার দ্রুত সরানো নাহলে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থা লেবাননের বৈরুতের মতো হতে পারে। বৈরুত বন্দরের মতো ব্যাপক জীবনহানির আশংকা রয়েছে। এর প্রেক্ষাপটে সভায় এনবিআর চেয়ারম্যনের কাছে এটি দ্রুত নিস্পত্তির হস্তক্ষেপ চান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।
নিবিড় তদারকি ও আনুক্রমিক চেষ্টায় গতকাল ২৭ অক্টোবর কন্টেনারগুলো নিলাম দরদাতার কাছে খালাস দেয়া হয়। চবক ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আপাত অসাধ্য সাধনের জন্য স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের আমন্ত্রণে গত ১ হতে ৩ অক্টোবর তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন অংশীজনের সাথে সভা ও মতবিনিময় করেন। বন্দরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় ডিজি কার্গো নিয়ে আলোচনাকালে ৪ কন্টেইনার ৯৩ মেট্রিক টন অতি দাহ্য Sodium glycerolate (এইচএসকোড ২৯০৫৪৫০০) নিয়ে চবক চেয়ারম্যান শংকা প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে আমদানিকৃত ৪ কন্টেইনার ৯৩ মেট্রিক টন অতি দাহ্য Sodium glycerolate (এইচএসকোড ২৯০৫৪৫০০) বারংবার নিলামের উদ্যোগ নিয়েও বিভিন্ন জটিলতার কারনে কমিশনার দীর্ঘকাল এটি নিস্পত্তি করতে পারছিলনা। এটি ব্যবস্থিত করতে ইতোপূর্বে বন্দর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার কমিশনারকে পত্র দেন এবং সর্বশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে এনবিআরে চিঠি দেন।
যৌথসভা শেষে এনবিআর চেয়ারম্যান বিপজ্জনক পণ্যের চালানটি নিস্পত্তির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো দ্রুত চিহ্ণিত করে কোন বাধা থাকলে এনবিআর পর্যায়ে হলে নিস্পতি করে কন্টেনারগুলো দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা নিতে কাস্টমস সদস্য ও কমিশনারকে নির্দেশ দেন।
এরপর কমিশনার কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম নিলাম কমিটির সাথে জরুরী সভা করে চালানটি নিলাম প্রক্রিয়ায় খালাসে জটিলতা চিহ্নিত করেন। জানমালের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে এনবিআর চেয়ারম্যান কমিশনার ও বন্দর চেয়ারম্যানের সাথে এ নিয়ে টেলিফোনে কয়েক দফা কথা বলেন। নিলাম দরদাতাকে এ পর্যায়ে সম্পৃক্ত করা হয়। অবশেষে ৪১ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করে নিলাম দরদাতা মেসার্স এস এ ট্রেডিং এন্ড কোং-কে পণ্য চালানটি খালাস দেয়া হয়।
অতি দাহ্য ও বিপজ্জনক পণ্যের চালানটি খালাসের ফলে বন্দরের দীর্ঘদিনের দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। কাস্টমস ও বন্দর কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। চৌদ্দ বছরের অনিষ্পন্ন কার্গো জটিলতার বেড়াজাল ভেঙ্গে এক মাসের কম সময়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ খালাস দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভবিষ্যতে এ ধরণের অপেক্ষমাণ পণ্যচালান খালাসের দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে।
বাংলাধারা/অর্থনীতি