২৯ অক্টোবর ২০২৫

আবারও পোশাক কারখানা খোলা নিয়ে লুকোচুরি, ঝুঁকি নিয়ে ফিরছেন শ্রমিকরা

করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে চাকরি বাঁচাতে শত শত গার্মেন্টস শ্রমিক ঢাকায় ফিরতে শুরু করছেন। আগামীকাল রোববার (২৬ এপ্রিল) থেকে রাজধানী এবং আশপাশের শিল্প কলকারখানা ও গার্মেন্টস খুলবে এমন খবর পেয়ে বাড়ি থেকে রওনা হয়েছেন বলে জানান তারা। এদিকে কারখানা খোলার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। কারখানা খোলা-বন্ধের চক্করে পড়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন অঞ্চল ও কারখানার শ্রমিকরা।

শনিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল থেকে বিভিন্ন সময় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার নৌপথ ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দেখা গেছে কর্মজীবী মানুষের ভিড়। চাকরি বাঁচাতে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি উপেক্ষা করে ট্রাক, পিকআপ, রিকশা, ভ্যানে করে রওনা হয়েছেন মানুষ। অনেকেই আবার পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা থেকে রাজধানীর দিকে যাচ্ছেন তারা। তদের বেশিরভাগই গার্মেন্টেসের শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

গার্মেন্টস কর্মী সোবহান হোসেন জানান, তিনি সাভারের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘কাল আমার কারখানা খুলবে। না গেলে চাকরি নিয়ে সমস্যা হতে পারে। এমন অবস্থায় করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বাড়তি ভাড়া গুনে গুনে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছি। এমন ঝুঁকির মধ্যেই সঙ্গে আমার স্ত্রী-সন্তানও রয়েছে। আমরা মাদারীপুর থেকে আসছি। ভেঙে ভেঙে নানা ধরণের যানবাহনে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত এসেছি। ভাড়া লেগেছে তিন গুণের বেশি। কড়া পুলিশি নজরদারির কারণে আমাদের অকৈ যায়গায় ভ্যান থেকে নামিয়ে দেওয়া হযেছে। কীভাবে ঢাকায় যাবো তা নিয়ে চিন্তিত। করোনার ভয় তো আছেই। আমাদের মতো অনেকেই এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন। কিন্তু শত বাধা-বিপত্তি মাথায় নিয়েও আগামীর চিন্তায় কর্মস্থলে যেতেই হচ্ছে।’ 

মানিকগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. রাসেল আরাফাত বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে ঢাকামুখী গার্মেন্টস কর্মীদের ভিড় চোখে পড়ছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পুলিশ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন। কোনও ধরনের গণপরিবহনকে সড়কে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে মানুষ তার জীবিকার প্রয়োজনে অনেকে পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়েও তারা নানাভাবে যাওয়ার চেষ্টা করছে।’

এর আগে গত ৫ এপ্রিল থেকে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার খবরে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছিলেন শ্রমিকরা। ৪ এপ্রিলও রাস্তাগুলোতে শ্রমিকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে, টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে, নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরিতে হঠাৎ করে মানুষের ঢল নামে। এসব শ্রমিক ঢাকায় পৌঁছানোর পর রাত ১০টার দিকে বিজিএমইএ থেকে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে চরম নাজেহাল হওয়ার পাশাপাশিও অনেক শ্রমিক হয়রানির শিকার হন।

অনেকেই বলছেন, পোশাক কারখানা খুলতে হলে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে তারপর খুলতে হবে।

এ প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক  ড. জাহিদ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে না পারলে কোনও কারখানা খুলতে দেওয়া উচিত না। কারণ, করোনাভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পোশাক শ্রমিকরা।

জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ড. রশীদ ই মাহবুব বলেন, স্বাস্থ্যবিধি যদি মানতে না পারেন, তাহলে কারখানা খোলা উচিত হবে না।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন