২৯ অক্টোবর ২০২৫

ওষুধ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি নগরবাসী

ইয়াসির রাফা »

বন্দর নগরীতে কেবল চিকিৎসা সেবার সংকটই চলছে না, সংকট তীব্র হচ্ছে ওষুধ আর অক্সিজেন সিলিন্ডারেরও। হঠাৎ করেই বাজার থেকে ওষুধ উধাও হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে ওষুধের পাইকারি বাজার হাজারি গলিতেও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না অনেক সাধারণ ওষুধও।

ওষুধের দাম বাড়াতে নতুন ফন্দি এঁটেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। তারা কোনো ওষুধের দাম বাড়ানোর আগেই এর উৎপাদন বা বিপণন কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ পাওয়া যায় না। এই কৃত্রিম সংকটকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

নগরীর বিভিন্ন পাইকারি ওষুধের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েক মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফার্মেসি মালিকরা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যান্টিম্যালেরিয়াল, ভিটামিন সি ট্যাবলেট ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন জাতীয় ওষুধের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় ওইসব ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, দেশীয় কোম্পানিগুলোকে করোনার পরীক্ষামূলক বেশ কয়েকটি ওষুধ তৈরির অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এদের মধ্যে আছে- এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস প্রভৃতি। এর বাইরে এসব কোম্পানির অন্য ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।

কয়েকজন ওষুধ বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জামাল খান, পাঁচলাইশ, চমেক হাসপাতাল এলাকার ফার্মেসিগুলোতে ওষুধের গলাকাটা দাম নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে করোনা ঠেকাতে ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পর সিভিট ট্যাবলেটও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হাজারী লেইনে ফ্যামিলি সাইজ ১ হাজার এমএল স্যাভলন ২২০ টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ৫শ-৭শ টাকা। ফার্মেসির বাইরেই চলছে নিম্নমানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বেচাকেনা। ফার্মেসিতে ওষুধ কেনার পর বিক্রয় রশিদও দেওয়া হচ্ছে না।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ গঠিত কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান বলেন, সামাজিক মাধ্যমে দেখে ওষুধ কিনে খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারও শরীরের সর্বনাশ ডেকে আনছে। শুধু ট্যাবলেট-ক্যাপসুলের ওপর নির্ভর না করে এ সময়ে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ফল বেশি খাওয়া যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে সেবনের ফলেই মানুষ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। করোনার চিকিৎসা একমাত্র চিকিৎসকদের গাইডলাইন মেনেই চালাতে হয়।

এদিকে বর্তমান সংকটকময় পরিস্থিতিকে সুযোগ করে ওষুধের দোকানিরাও হাতিয়ে নিচ্ছেন অধিক দাম। নগরের লালখান বাজারের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ৫০ টাকা এক পাতা স্ক্যাবো ট্যাবলেট (৬ মিলিগ্রাম) ছিল। এখন সেই ওষুধের দাম নেওয়া হচ্ছে সাড়ে ৪শ-সাড়ে ৬শ টাকাও। অনেক গরীব মানুষ ঔষধের অতিরিক্ত দামের কারণে ঠিকমত চিকিৎসা করাচ্ছেন না। ফলে সাধারণ রোগ গুলোও অনেক সময় জটিল রূপ ধারণ করছে।

রাউজান থেকে আসা এক ব্যক্তি জানালেন, গর্ভবতীর ওষুধও পাননি তিনি। বাজার থেকে গায়েব এরকম অনেক সাধারণ ওষুধই। যা মিলছে তার দামও নেয়া হচ্ছে তিন চারগুণ বেশি। যদিও বিক্রেতারা দুষছেন সরবরাহের ঘাটতিকে।

তবে জীবন রক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণের ঠিকমতো নাগাল না মিললেও রমরমা ব্যবসা হচ্ছে সুরক্ষা সরঞ্জামের। যে যেভাবে পারছে আদায় করছে দামও। চলমান দুর্যোগে চট্টগ্রামে চিকিৎসা সেবার মতো চিকিৎসা উপকরণের সংকট বিপাকে ফেলেছে সাধারণ মানুষকে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন