২৮ অক্টোবর ২০২৫

কামাল লোহানীর মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর মরদেহে উদীচীতে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। শনিবার দুপুর ২টার দিকে তার মরদেহ উদীচী কার্যালয়ে নেওয়া হলে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ সময় উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ারসহ কমিটির নেতৃবৃন্দ, কামাল লোহানীর পরিবারের সদস্য এবং তার শুভানুধ্যায়ীরা উপস্থিত হয়ে তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

উদীচী, জাতীয় শ্রমিক জোট, ওয়ার্কার্স পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি, বিবর্তন সাংস্কৃতিক ফোরাম, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, হাতেখড়ি, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, নবনাট্য সংঘ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তি কামাল লোহানীর মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর তার মরদেহবাহী গাড়িটি জাতীয় পতাকা এবং উদীচীর পতাকা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তার মরদেহ দাফনের জন্য নেওয়া হচ্ছে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে।

এর আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ১০টার দিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।

সংক্ষিপ্ত জীবনী

কামাল লোহানী নামে পরিচিত থাকলেও তার আসল নাম আবু নাইম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। ১৯৩৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার খান মনতলা গ্রামে তার জন্ম হয়। ১৯৫২ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি পাবনা জেলা স্কুলে শেষ বর্ষের ছাত্র। ওই আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই রাজনীতির হাতেখড়ি। ১৯৫৩ সালে নূরুল আমিনসহ মুসলিম লীগ নেতাদের পাবনা আগমন প্রতিরোধ করতে গিয়ে তাকে জেলেও যেতে হয়। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আবার ১৯৫৪ সালে গ্রেফতার হন। সেই সময়ই তিনি কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে দীক্ষিত হন। পরের বছর আবার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে একই কারাকক্ষে বন্দি ছিলেন তিনি।

১৯৫৮ সালে যুক্ত হন নৃত্যশিল্পের সঙ্গে। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবর্ষ পালনে পাকিস্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ছায়ানটের নেতৃত্বে কামাল লোহানী ও হাজারও রাজনৈতিক সাংস্কৃতিককর্মী সাহসী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৬২ সালে তিনি ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক হন। পরে ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন রাজনৈতিক আদর্শের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি’।

ষাটের দশকের শেষ ভাগে ন্যাপের (ভাসানী) সঙ্গে যুক্ত হয়ে কামাল লোহানী যোগ দেন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে পূর্ব বাংলার শিল্পীরা যে ভূমিকা রেখেছেন, তার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে কামাল লোহানী যুদ্ধে যোগ দেন। সেই সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালকের দায়িত্ব পান।

কামাল লোহানীর সাংবাদিকতার শুরু হয়েছিল দৈনিক মিল্লাত দিয়ে। এরপর আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নে দুই দফা যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন কামাল লোহানী। ১৯৮১ সালে দৈনিক বার্তার সম্পাদকের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে নতুন করে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন। পরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দুই দফায় মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন কামাল লোহানী। পাঁচ বছর ছিলেন ছায়ানটের সম্পাদক। তিনি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা পদেও ছিলেন।

১৯৬০ সালে কামাল লোহানী বিয়ে করেন। স্ত্রী দীপ্তি লোহানী বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তাদের দুই মেয়ে এবং এক ছেলে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন