২৮ অক্টোবর ২০২৫

জনসমাগম করে এমপি কমলের চাল বিতরণ, সর্বত্র সমালোচনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

বিশ্ব আতঙ্ক করোনা রোধে সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সেইভাবে মাঠে কাজ করছে প্রশাসন ও স্বশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। কক্সবাজারে এটি কঠিনভাবে পালন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে জনসমাগমের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করেছেন কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরোয়ার কমল।

কয়েকদিন আগে তিনি নিজেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার কথা বলে মাইকিং করে বলেছিলেন চলাচলের ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার। তার প্রচারণার উল্টো পথে গিয়ে হাজারো লোক জড়ো করে ১০ কেজি করে চাউল সহায়তা দিলেন তিনি।

করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে সবশ্রেণী পেশার মানুষকে যখন সরকার ঘরে থাকতে জোর খাটাচ্ছে তখন জেলার শীর্ষ জনপ্রতিনিধি এমন কাণ্ড অবাক করছে সবাইকে। তার এই কর্মকাণ্ডকে চূড়ান্ত রকমের ‘অসচেতনতা’ হিসেবে অভিহিত করে তীব্র সমালোচনা করছেন অনেকেই।

মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, সাহায্য করতে গিয়ে কোনও লোকসমাগম করা যাবে না। ওয়ার্ড পর্যায় গিয়ে জনগণকে সচেতন করে দরকার হলে বাড়ির কাছে পাড়া মহল্লায় গিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা দিতে হবে। বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে বলে নির্দেশ দেন। সেই কন্ফারেন্সে নিজেও কথা বলেন এমপি কমল। অথচ এ ঘটনার ২৪ ঘন্টার মাথায় এসে দায়িত্বশীল পদে থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকির এই কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বুধবার (১ এপ্রিল) বিকেলে রামু চৌমুহনী স্টেশন ও খিজারী হাই স্কুল মাঠে সহস্রাধিক মানুষের অংশগ্রহণে এ অনুদান দেন। সেখানে উঠানো ছবি বিভিন্ন ফেসবুক পেইজে প্রকাশ পায়। নিজের অনুগতরা এ দানের সচিত্র প্রতিবেতন বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠান। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বেশি লোক মিলে একজনের হাতে খাদ্য সহায়তা তুলে দিচ্ছেন। সাহায্যপ্রার্থী মানুষগুলো পরস্পর ঘেঁষাঘেষি করে এমপির দিকে হাত পেতে আছেন।

করোনাভাইরাস নিয়ে চলমান পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলার সচেতন মানুষ। তাছাড়া কমলের গাঘেঁষে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধি ও নবাগতদের।

নিরাপদ দূরত্ব ছাড়াও প্রশাসন গত কিছুদিন থেকে সবাইকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করছেন। কিন্তু এখানে জড়ো হওয়াদের কারো মুখে মাস্ক নেই। বার বার হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে। এদের কয়জন হাত ধুতে পেরেছেন সেটাও অজানা। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি উপেক্ষিত হয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে বিগলিত মনে তাদের হাতে তুলে দেওয়া ১০ কেজি চালসহ বিভিন্ন পণ্যের প্যাকেট।

এমপি নিজের হাতে সহায়তা দেয়ার দৃশ্য নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই সমালোচনামুখর হয়েছেন। তারা বলছেন, প্রধান কাজটি করার জন্য তার অনেক জনবল আছে। দ্বিতীয়ত তিনি নিজে এবং আরো যাদের সাথে নিয়ে সহায়তা দেয়ার কাজ করেছেন কেউ সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার করেননি।

জানা গেছে, চৌমুহনী স্টেশনে থাকা পিকাপ (মিনিট্রাক), বাস, কোস্টার, রামু লাইন, কক্স লাইন, মাইক্রোবাস, ছারপোকা, জীপ, সিএনজি, টমটম, ভ্যান, রিক্সা শ্রমিক ও হোটেল শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রমজীবীদের প্রত্যেকের মাঝে ১০ কেজি করে ৫শত ও ২শত টাকার দেড়শত প্যাকেট পণ্য বিতরণ করেন।

নিষেধাজ্ঞার সময়ে লোকসমাগমে ত্রাণ বিতরণ বিষয় সম্পর্কে জানতে সাংসদ সাইমুম সরোয়ার কমলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়, ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে, ভিডিও কন্ফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, বেশি লোক কিংবা বিদেশী কারো ক্যাম্পে যাওয়ার দরকার নেই। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার ঘন বসবাসের কারলে একটা আতংক থেকে যায়। স্থানীয় ভোলান্টিয়ার মাধ্যমে খাবার বিতরণসহ অন্যান্য কার্যাদি সারতে হবে। এর ২০ ঘন্টার মাথায় ক্যাম্পমুখী শতাধিক গাড়ির বহর গেছে। লকডাউনের কারণে মেরিন ড্রাইভ বা টেকনাফ সড়কে গাড়ি চলাচল কম থাকলেও বুধবার সকালে দেশি-বিদেশী এসব যানবাহনের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময়ে এত গাড়ি এবং এনজিও কর্মীর ক্যাম্পে যাওয়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে সমালোচনার ঝড় তোলেন স্থানীয় সচেতনমহল।

অনেকে লেখন, এনজিওদের গাড়ির বহর দেখে মনে হচ্ছে সরকারের নির্দেশনার বাইরে চলছে এনজিওগুলো। এদের কারণে, সামনে আরো দূর্ভোগে পড়বে স্থানীয়রা।

উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতার লিখেন, ক্যাম্পে এনজিওর অতিরিক্ত গাড়ি যাওয়া নিয়ন্ত্রণে দশটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আরআরআরসির অনুমতি নিয়ে আসা যানগুলো কেবল ছাড়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও এক সাথে এত গাড়ির বহরের বিষয়টি নজরে এসেছে। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে উখিয়ার ইউএনওকে।

কক্সবাজার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অফিস সূত্র বলেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য, স্বাস্থ্য সেবা ও করোনায় সচেতনতার দায়িত্বে থাকা এনজিওগুলোর কর্মীদের গাড়িই কেবল আসা যাওয়া করছে।

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যাতে সারা দেশে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সারা দেশে ১০ দিন পরে আরোও ২ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এই সময়ে নাগরিকদের ঘরে থাকার আহবানও জানিয়েছেন সরকার। নাগরিকদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে মাঠে নামানো হয়ে সেনাবাহিনীকেও। জেলা প্রশাসনের সাথে মানুষকে ঘরে রাখার দায়িত্বও পালন করছেন তারা। বৃহস্পতিবার থেকে সেনাবাহিনী আরো কঠোর হয়ে দায়িত্বপালন করবে বলে আইএসপিআর সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন