২৯ অক্টোবর ২০২৫

জুয়া খেলার নামে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা, গ্রেফতার ১

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

নগরীর পুরাতন ষ্টেশন এলাকা হতে প্রতারকচক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত আরো তিন আসামী পলাতক রয়েছে।

বুধবার (১ জুলাই) দুপুর ৩ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তারকৃত ওই ব্যক্তির নাম- মোঃ ফয়েজ (৬০)। সে নোয়াখালী জেলার মিয়াজান মিয়াজী সাহেবের বাড়ীর নূর মোহাম্মদের ছেলে।

পলাতক আসামীরা হলো- মোস্তাক(৬৪), হাজী মনসুর(৬৫) ও ফরিদ(৫০)।

ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, বাদি একজন বিরিয়ানি ব্যবসায়ী। গত ১৫ জুন তার দোকানে এজাহারনামার ৪ নং আসামী মোস্তাকের একটি অনুষ্ঠানের জন্য ১০০ জনের খাবারের অর্ডার দেয় এজাহারনামীয় পলাতক ২নং আসামী হাজী মনসুর ও ৩নং আসামী ফরিদ। এই সুবাধে হাজী ও ফরিদের সহিত বাদীর পরিচয় হয়।

পরিচয়ের এক পর্যায়ে হাজী মনসুর ও ফরিদ গত ২৪ জুন কোতোয়ালী থানাধীন পাথরঘাটায় পলাতক ৪নং আসামী মোস্তাকের কাছে বাদীকে খাবার অর্ডারের টাকা অগ্রীম দিবে বলে তাদের সাথে যেতে বললে বাদী সরল মনে আসামীদের সাথে সিএনজি যোগে পাথরঘাটা যাওয়ার উদ্দেশ্য কোতোয়ালী থানাধীন পুরাতন রেলষ্টেশনস্থ ইকবাল বোডিং এর সামনে আসে। তখন আসামীদ্বয় তাদের এক বন্ধু ইকবাল বোডিং এর উপরে রুমে আছে এবং তার সাথে বাদীর পরিচয় করিয়ে দিবে বলে হাজী ও ফরিদ কৌশলে বাদীকে ইকবাল বোডিং এর ৪র্থ তলার ২০ নং রুমে নিয়ে যায়।

সেখানে ১নং আসামী মোঃ ফয়েজ (৬০) অবস্থান করছিল। হাজী মনসুর, ফরিদ ও ফয়েজ এক অপরের বন্ধু বলে নিজেদের পরিচয় দেয় এবং বাদীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। কৌশলে কথা বলতে বলতে কিছুক্ষণ পর ৪নং আসামী মোস্তাক সেখানে এসে হাজির হয়। পরে বাদীকে কৌশলে মোস্তাকের বিরুদ্ধে জুয়া খেলায় অংশগ্রহণের কথা বলে বাদীর কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নেয়। ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে খেলায় অংশগ্রহণ করে আসামীরা বাদীকে কৌশলে মোস্তাকের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকা জয়ী হয়েছে এবং এই ২৫ লাখ টাকা নিতে গেলে বাদীকে ওই সমপরিমাণ অর্থ দেখাতে হবে। বাদী তার কাছে টাকা নাই বললে আসামীরা বাদীকে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা যোগাড় করতে বলে এবং তাহারা বাকিটা যোগাড় করবে। বাদী প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে পরবর্তীতে পুলিশকে জানায়।

কোতয়ালী থানার এসআই সজল কান্তি দাশ বাংলাধারাকে জানান, নগরীতে একটি প্রতারক চক্র কৌশলে বিভিন্ন লোকদের প্রলুব্ধ করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। আসামীরা মূলত কিংস প্লেয়ার নামক তিন কার্ডের একটি জুয়ার খেলার মাধ্যমে ভিকটিমকে ফাঁদে ফেলে। এ চক্রের মূল বসের ভূমিকায় থাকে চন্দনপুরার অধিবাসী জনৈক মোস্তাফিজ, দালালের ভূমিকা পালন করে হাজী মনসুর, অন্যান্যরা খেলোয়ারের ভূমিকায় থাকে। দালাল প্রথমে যেকোনো ধরনের ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে কোনো ভিকটিমকে আপন করে নিয়ে তার চক্রের অন্যদের সহিত পরিচয় করিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে চক্রের সদস্যরা দুভাগে বিভক্ত হয়ে একভাগ ভিকটিমের পক্ষে অবস্থান নেন অপর পক্ষে বস একলা ভূমিকা পালন করে। প্রথম প্রথম কোনো ভিকটিম কিংস প্লেয়ার খেলায় সামান্য লাভ পেলেও পরবর্তীতে খেলতে খেলতে বিরাট অংকের টাকা পায় মর্মে চক্রটি জানালে এ বিরাট অংকের টাকা সংগ্রহ করতে হলে প্রতিপক্ষকে নিজের বিরাট অংকের টাকাও দেখাতে হবে। তখন আসামীগণ নিজেরা কিছু টাকা নিজেদের মধ্যে আছে মর্মে জানিয়ে বাকি টাকা ভিকটিমকে যোগাড় করিতে বলে এবং টাকা যোগাড় হইলে কৌশলে ভিকটিমের কাছ হইতে টাকাটি নিয়া আত্মসাৎ করিয়া পালাইয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, এ চক্রের প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিগণ দীর্ঘদিন ধরে থানায় মৌখিক অভিযোগ করলেও কাউকে সনাক্ত করতে পারে নাই। এ চক্রের বোকার হাজী মনসুর জীবনের কোনো এক সময় প্রবাস থাকাকালীন খেলাটি আয়ত্তে করে বর্তমানে দেশে এসে অন্যদের সহযোগীতায় এ প্রতারণার কাজটি অব্যাহত রেখেছে। ধৃত আসামী ও তার সহযোগী পলাতক আসামীদের সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। আসামীগণ মূলত প্রতারণা মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

অভিযানে অংশ নেন এসআই সজল কান্তি দাশ, এসআই সুকান্ত দত্ত, এএসআই অনুপ কুমার বিশ্বাস, এএসআই রুহুল আমিন, এএসআই সাইফুল প্রমুখ।

 বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন