কক্সবাজার প্রতিনিধি »
ইয়াবা ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যয়ে আজ দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পণ করছেন আরো বেশ কয়েকজন ইয়বাকারবারি।দীর্ঘ দিন ‘সেফহোমে’ থাকার পর সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজারের টেকনাফ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে তারা আত্মসমর্পণ করবে।
আত্মসমর্পণের মঞ্চসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা পুলিশ। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) টেকনাফ উপজেলায় এ সংক্রান্ত মাইকিংও হয়েছে। পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে আজকের আত্মসমর্পণে প্রধান অতিথি থাকছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক।
গত ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলেন, যারা এখনো কারান্তরিণ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেছেন, সোমবার দুপুরে ২০-৩০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সকল প্রস্তুতি।
সূত্রমতে, দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পণ করতে যাওয়াদের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধেও মাদক এবং অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হতে পারে। প্রথমবার আত্মসমর্পণে সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির কয়েক নিকটাত্মীয় থাকলেও এবার তার কোন স্বজন নেই।
২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণে যাওয়া ১০২ জনের মাঝে একজন কারাগারে মারা গেছেন। বাকি ১০১ জনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে চার্জশিট দাখিল করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ।
আত্মসমর্পণে যাওয়া ১০২ জন রাষ্টপক্ষের বিশেষ অনুকম্পা পাওয়া কথা প্রচার পেলেও সর্বশেষ সেটা হয়ে উঠেনি। ফলে দ্বিতীয় দফায় আরো বেশি সংখ্যক আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও কারাগারে ধুকে মরার ভয়ে শেষ মেষ নিজেদের ধরা দেয়নি অনেকে। একদিকে বন্দুকযুদ্ধের ভয়, অপর দিকে কারাগারে ধুকে মরার ভয় দুটানায় ফেলেছে ইয়াবায় সম্পৃক্তদের।
কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের কক্সবাজার জেলা সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, চিহ্নিত ২০-২৫ ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পনের উদ্দেশ্যে সেফহোমে অবস্থান নিয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। শেষ পর্যন্ত কয়জন আত্মসমর্পণ করছে তা আনুষ্ঠানিকতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। মাদক কারবারিরা বুঝতে শুরু করেছে অপরাধকর্ম করে আর রক্ষা হবে না। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাদক পাচার আরো কমে আসবে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে বিগত কয়েক বছর ধরে ‘যুদ্ধ’ চলছে। ফলে কমে এসেছে ইয়াবা ব্যবসা। কোনও মাদক কারবারিকে ছাড় দেয়া হবে না। যেকোনভাবে এই অঞ্চল থেকে মাদক বন্ধ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত জানুয়ারি মাসে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৯ মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। এদের মাঝে ৬ জন রোহিঙ্গা। এর আগে ২০১৮ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় বিশেষ অভিযানে ৫৬ রোহিঙ্গাসহ ২০৯ জন ইয়াবা কারবারি ও ডাকাত-সন্ত্রাসী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এ সময়ে ১ কোটি ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ৫৭০ পিস ইয়াবাও জব্দ হয়। আটক হন ২ হাজার ৩৩৮ জন। এসব ঘটনা মাদককারবারিদের মনে আতংক সৃষ্টি করেছে। ফলে অনেক চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি গা-ঢাকা দিয়েছেন আর অনেকে আত্মসমর্পণ করতে মরিয়া হয়ে ছুটেছেন। এরই ফল আজকের অনুষ্ঠান।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













