এম.এম আরিফুল ইসলাম »
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নাটোরে হাইব্রিড জাতের বাউকুল ও বারমিজ কুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। সেই সঙ্গে চলতি বছর বেড়েছে কুল আবাদের পরিমাণও।
নাটোর কৃষি সপ্রসারণ অধিদফতরের মতে জেলার উঁচু এবং উষ্ণতম অঞ্চলগুলোতে কুল চাষ ভালো হয়। সে দিক থেকে নাটোরের লালপুর, বড়াইগ্রাম, সদর, গুরুদাসপুর এবং সিংড়া উপজেলায় কুল চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি হয় লালপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া এবং গুরুদাসপুর উপজেলায়।
নাটোর সদর উপজেলার হরিশপুর এলাকার কুল চাষি আবু তাহের জানান, সার, কীটনাশক এবং সেচসহ এক বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ঠিকমত কুল উৎপাদন হলে এবং দাম ভালো পাওয়া গেলে ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত এবার তার কুল বিক্রি হবে।
এদিকে জেলার বনপাড়া বাইপাস, ওয়ালিয়া বাজার, সদর উপজেলার চানপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কুলের পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি পর্যন্ত ৮ থেকে ১০টি কুলের আড়তে প্রতিদিন ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকার কুল বেচাকেনা হচ্ছে।
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার খ্যাত নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাইপাস মোড়ে গড়ে ওঠা কুল বরইয়ের আড়ত এখন কেনা-বেচায় সরগরম। প্রতিদিন গড়ে ১ কোটি টাকার বিভিন্ন জাতে কুল বরই কেনা-বেচা হয় এখানে। এই আড়তে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি জেলা থেকে কুল বরই চাষী নানাজাত কুল বরই নিয়ে আসেন। আর তা ঢাকা, কুমিল্লা, চট্রগ্রামসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা পাইকারী দরে কিনে ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ২০টি আড়তে কুল বরই কেনা-বেচা চলছে। এর মধ্যে আপেলকুল, থাই কুল, বাউকুল নামে কুল বরইগুলো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে মজুদ রাখা রয়েছে। কুলের সতেজতা ও মান অনুসারে দাম হাকিয়ে আড়তদারেরা তা বিক্রি করে।
আড়তদার মুক্তার হোসেন জানান, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, চাপাইনবাবগঞ্জসহ জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের চাষীরা এই আড়তে কুল বরই নিয়ে আসে।
ধারণা করা হচ্ছে চলতি মৌসুমে ৬০ থেকে ৭০ কোটির টাকার কুল বরই এখানকার আড়ত থেকে কেনা-বেচা হবে। বনপাড়া বাইপাস মোড়ে এই বৃহৎ কুল বরই আড়ত দেখে উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলার চাষীরা কুল বরই চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে।
ডায়মন্ড ফল ভান্ডারের মালিক ডায়মন্ড হোসেন জানান, এই কুলগুলো মূলত ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, নোয়াখালী, চট্রগ্রামসহ ১৪/১৫টি জেলায় পাঠানো হয়। খেতে সবচাইতে সুস্বাদু আপেল কুল ও থাইকুল মনপ্রতি ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। এছাড়া বাউকুল জাতের বরই প্রতিমণ ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুরের গাংনী থেকে আসা কুল ব্যবসায়ী আপেল মাহামুদ জানান, এলাকার কুল বরই চাষীদের বাগান থেকে সরাসরি পাইকারী দরে কুল বরই কিনে এই আড়তে নিয়ে আসি। এই আড়তে কুল বরই বেচা-কেনায় হয়রানী ও ঝামেলা কম থাকায় এখানকার আড়তের প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ তৈরী হয়েছে।
পাবনা জেলার চাটমোহরের কুল চাষী সুরুজ আলী জানান, সহজ যাতায়াতের কারণে বনপাড়ার এই বাইপাস মোড়ের কুলের আড়তটি ক্রমশঃ বৃহৎ হচ্ছে এবং বলা যায় এটিই দেশের সবচেয়ে বড় কুল আড়ত।
বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন জানান, সরকারী কোন খালি বড় জায়গা না থাকায় মহাসড়কের পাশেই আড়ত গড়ে উঠেছে। যা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে বিকল্প কোন বড় জায়গায় আড়ত স্থানান্তর করা যায় কিনা।
নাটোর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরে উপ-পরিচালক সুব্রত্র কুমার সাহা বলেন; গত বছরের তুলনায় এবার কুলের ভালো দাম পাচ্ছে চাষিরা। তাছাড়া খরচ কম হওয়ায় অন্যান্য বাগানের তুলনায় কুল বাগানের সংখ্যাও বাড়ছে। ভালো মানের কুল উৎপাদনে চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং সঠিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যার কারণে কুল চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













