সায়ীদ আলমগীর »
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি সৈকতের বালুচরে পুঁতে রাখা তিমির কঙ্কাল গুলো গত দু’দিন আগে হঠাৎ ভেসে উঠে। আঁচড়ে পড়া ঢেউয়ের তীব্রতায় চাপা বালি সরে গিয়ে এসব কঙ্কাল দৃশ্যমান হয়ে বালির উপরে উঠে চরম দূর্গন্ধ ছড়ায়। রবিবার (২৭ জুন) দুপুরে জোয়ারের পর থেকে কঙ্কালের বিচ্ছিন্ন অংশ দৃশ্যমান হওয়া শুরু করে। হাড় থেকে মাংস ভালো মতো ঝরে না যাওয়ায় বালিয়াড়িতে উঠে আসা কঙ্কাল থেকে ছড়ানো দূর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায় হয়ে পড়ে। এটি জানার পর রামু উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ সোমবার থেকে শুরু করে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে ভেসে উঠা কঙ্কালগুলো আবারো পুঁতে ফেলতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা।

তিনি বলেন, রবিবার দুপুরের জোয়ার শেষে ভাটার টান পড়ার পর সৈকতের হিমছড়ির দরিয়ানগর এলাকায় তিমির কঙ্কালের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন অংশ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সোমবার সকালে রোদ লাগার পর তা থেকে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই রামু উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে তা সরানোর প্রচেষ্টা চলে। তবে, ঢেউয়ের আঁচড় না লাগে মতো জায়গা সংকট ও মাটি কাটার স্কেবেটর পেতে বেগ পেতে হওয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় স্কেবেটর পেয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্তও শেষ করা যায়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার কাজ শুরু করে মেরিন ড্রাইভের কিনার ঘেষে ঢেউ না লাগে মতো জায়গায় বেলা ৩টায় কঙ্কালগুলো পুঁতে ফেলা সম্ভব হয়।

রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা আরো জানান, ঘটনাস্থলে সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউট ও ওয়াইল্ড লাইফের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা আসেন। কঙ্কালগুলো পর্যবেক্ষণ করে তারা জানান, এগুলো এখনো সংরক্ষণ উপযোগী হয়নি। মিনিমাম ৬-৭ মাস মাটির নিচে থাকলে সমস্ত মাংস নিঃশেষ হলে তবেই হাড়গুলো সংরক্ষণ উপযোগী হবে। প্রথম পুঁতে রাখার মাত্র মাস তিনেক হওয়া উঠে আসা হাড় থেকে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত করছিলো। এসব কঙ্কাল সংরক্ষণে নিতে সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউট সংশ্লিষ্টরা ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে, পরিপূর্ণ সংরক্ষণ করার উপযোগী হলে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, ডিএফও হুমায়ুন কবিরসহ সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, গত ৯ ও ১০ এপ্রিল হিমছড়ি সৈকতে ভেসে এসেছিল প্রায় ২৫ ও ২০ টন ওজনের দুটি মৃত অর্ধগলিত তিমি। সেগুলো বালুচরে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। মাংস পঁচে মাটির সাথে মিশে গেলে তিমির কঙ্কালগুলো সংগ্রহ করে সংরক্ষণের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তিমির কঙ্কালগুলো ভেসে উঠে বালিয়াড়িতে।

দরিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা ও পরিবেশবাদী সংগঠক আহমদ গিয়াস বলেন, রবিবার দুপুরে জোয়ারের ধাক্কায় দরিয়ানগর সৈকতে কঙ্কালের অংশটি ভেসে ওঠে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, জোয়ারের পানিতে তা ভেসে এসেছে। পরে দেখা গেছে, সেটি ১০ এপ্রিল বালুচরে পুঁতে রাখা তিমির মেরুদণ্ডের অংশ। বিকেলে দরিয়ানগর সৈকতের উত্তর দিকে হিমছড়ি এলাকার কয়েকটি স্থানে কঙ্কালের আরও কয়েকটি টুকরা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এগুলোও পুঁতে ফেলা তিমিটির কঙ্কালের অংশ। এগুলো সংগ্রহ করে সমুদ্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও অনুসন্ধিৎসু পর্যটকদের জন্য সংরক্ষণ করা উত্তম হবে।

সমুদ্র বিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদীরা ধারণা করেন, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জাহাজের ধাক্কায় অথবা প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়ে এসব তিমির মৃত্যু হচ্ছে। বিষয়টি কঠোর ভাবে নিয়ে প্রকৃতির জন্য এসব তিমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













