২৯ অক্টোবর ২০২৫

মিরসরাইয়ে সিএনজি চালকের অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র- দাবি ছাত্রলীগের

মিরসরাই প্রতিনিধি »

মিরসরাইয়ে দুই মাদক সেবনকারীর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব রুপ নিয়েছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে। জানা যায়, সিএনজি চালক মোশাররফ ইয়াবা আসক্ত হওয়ায় স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ী বেলালের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। বেলাল নিয়মিত মোশাররফের সিএনজি ব্যবহার করতো।

গত ২৭ জুন (শনিবার) সকালে উভয়ে ইয়াবা সংক্রান্ত বিষয়, টাকার লেনদেন নিয়ে বাকবিতন্ডায় এবং সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে মোশাররফ বেললাকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে। আহত হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে বেলালের ভাই স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী হুমায়ূন এবং যুবলীগ নেতা তোফাজ্জেলসহ কয়েকজন মোশাররফকে পিটিয়ে দাওয়া করে।

পরে বিষয়টি মীমাংসার জন্য গত ৩০ জুন (মঙ্গলবার) স্থানীয় সিএনজি চালক সমিতির পক্ষ থেকে লাইন সম্পাদক সুমন প্রস্তাব দেন এবং বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য চট্টগ্রাম উত্তরজেলা ছাত্রলীগ কর্মী রাজীব উল হক চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শরিফুল ইসলামকে জানান। কিন্তু মীমাংসার নাম দিয়ে হুমায়ুন এবং তোফাজ্জলের উপর অতর্কিত হামলা চালায় সিএনজি চালক মোশাররফসহ আরো কয়েকজন সিএনজি চালক সমিতির সদস্য। এতে গুরুতর আহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হুমায়ুনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়।

এ বিষয়ে সিএনজি চালক সমিতির লাইন সম্পাদক সুমন জানান, বেলাল, তোফাজ্জেল ও হুমায়ুনের সাথে মোশাররফের সমস্যার বিষয়টি মিমাংসার জন্য ৩০ জুন সন্ধ্যায় সিএনজি চালক সমিতির অফিসে আমি ডাক দিই। সেখানে ছাত্রলীগ নেতা রাজিব এবং শরীফকে উপস্থিত থাকার জন্য বলি। তবে তোফাজ্জেল এবং হুমায়ুন আমার গায়ে হাত ওঠানোর কারণে হুমায়ুনকে সেখানে উপস্থিত সিএনজি চালক সমিতি নেতৃবৃন্দ পিটিয়ে আহত করে। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের অফিস ভাঙচুর করেন।

অফিস ভাঙচুরের বিষয়ে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ কর্মী জানান, ৩০ জুন সন্ধ্যায় আমরা আমাদের সহকর্মী হুমায়ুনকে মারার খবর পাই এবং সিএনজি চালক সমিতির নেতৃবৃন্দ টহল দিয়ে বামনসুন্দর বাজার এবং ছত্তর ভূঁইয়ার হাট এলাকায় জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং ছাত্রলীগকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এরপর প্রতিবাদে আমরা বাজারে এসে অবস্থান নিই। প্রতিবাদে উত্তেজিত কিছু ছাত্রলীগ কর্মীর সাথে সিএনজি চালক সমিতির সদস্যদের দাওয়া পাল্টা দাওয়ার সময় এক পর্যায়ে চালক সমিতির অফিস ভাঙচুর হয়। তবে সকালে ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরানোর জন্য বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করেন সিএনজি চালক সমিতির নেতৃবৃন্দ। আমরা এর প্রতিবাদ এবং তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

অন্যদিকে মিঠাছড়া-বামনসুন্দর অটোরিক্সা চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ বলেন, স্থানীয় মাদকসেবী তোফাজ্জেল হোসেন, হুমায়ূন, তানভীর, রাজীব, শরীফ গত সোমবার ইয়াবা বহনের জন্য সিএনজি ভাড়া নিতে এসছিলো। ভাড়া না নেওয়ায় তারা মোশাররফকে মারধর করেন। এমনকি মোশাররফের স্ত্রীকেও মারার অভিযোগ করেন অটোরিক্সা চালক সমিতির এই নেতা।

কিন্তু বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট হিসেবে আখ্যায়িত করছেন স্থানীয় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।তারা জানান, ঘটনার সূত্রপাত সিএনজি চালক মোশাররফ এবং বেলালের মধ্যে। তারা উভয়ে মাদকসেবী। সেখানে রাজীব, শরিফ, হুমায়ুন, তোফাজ্জেলের কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না। তারা আরো জানান, রাজীব এবং শরিফ শুধুমাত্র ঘটনার মীমাংসার জন্য গিয়েছিলেন কিন্তু কিছু নিউজ পোর্টালে তাদের নাম উল্লেখ করাটা একটি মহলের ষড়যন্ত্র।

এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম চৌধুরী সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের উপর হামলাকারীরা চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করলেও খবর নিয়ে জানা যায়, এরা কেউ মাদক সংক্রান্ত কোনো বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়। বরং ঘটনার সূত্রপাত দুই মাদকসেবী সিএনজি চালক মোশাররফ এবং বেলালের মধ্যে।

অপরদিকে সিএন জি চালক সমিতির লাইন সম্পাদক সুমন ইয়াবা বহনের বিষয়ে ছাত্রলীগের কোনো কর্মী জড়িত থাকার বিষয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ইয়াবা সংক্রান্ত কোনো কর্মকাণ্ডে রাজিব, শরিফ, হুমায়ুন, তোফাজ্জেলের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আমি জানি না।

চট্টগ্রাম উত্তরজেলা ছাত্রলীগকর্মী রাজিব উল হক চৌধুরী বলেন, শুধু মাত্র বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমি এবং আমার বন্ধু শরিফ সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর আমরা দু’জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় একটি মহল। এ বিষয়ে মানহানির মামলার কথাও জানান এই ছাত্রলীগকর্মী।

এদিকে জোরারগঞ্জ থানার এস আই সিরাজুল ইসলাম জানান, অটোরিক্সা চালকদের ভাংচুর করা অফিস আমি পরিদর্শন করেছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন