মুহাম্মদ আব্দুল আলী »
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা চিরন্তন। মানুষ মানুষের ভাই। মানুষ স্বভাবতই নিজেকে ভালোবাসে। নিজের প্রতি ভালোবাসার মূল সূত্র ধরেই মানুষ তার আশপাশের সবকিছুকে ভালোবাসে। স্রষ্টা নিজেও তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসেন এবং সৃষ্টির সেরা জীবের জন্য পৃথিবীকে সুশোভিত করেছেন। সৃষ্টিজগৎকে না ভালোবাসলে স্রষ্টাকেও ভালোবাসা যায় না।
মানুষ প্রকৃতিপ্রেমে নিমগ্ন হয়, অনেকে আপনজনহীন হয়েও একদল অনাত্মীয়ের ভিড়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। কেউ অসহায় কোনো মানুষ, শিশু বা জীবজন্তুকেও নিঃস্বার্থভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তেমনি করোনার থাবায় অসহায় হয়ে পড়া কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নির্ভর কর্মজীবী ছেলেদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেল সায়মন বীচ রিসোর্ট’র এমডি মাহবুব রহমান রুহেল।
মহামারি করোনার থাবায় প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজার পর্যটক শূন্য। ক্ষতির মুখে হোটেল মালিকরা। সারা বছর সৈকতে ফটোগ্রাফি করে, জলযান চালিয়ে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে, সার্ফিং করে স্থানীয় অনেক ছেলে জীবিকা নির্বাহ করে। পর্যটক না থাকায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব কর্মহীন ছেলেদেরকে ভুলেননি কক্সবাজার সায়মন বীচ রিসোর্ট’র এমডি মাহবুব রহমান রুহেল।

যদিও সারা বছর মুখরিত থাকা এই হোটেল প্রচুর আর্থিক সম্মুখীন হয়েছে করোনার কারণে। বেকার হয়ে পড়া সৈকত নির্ভর কর্মজীবী ছেলেগুলোর পরিবারে গত বুধবার (১৫ এপ্রিল) প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয় মানবিক উদ্যোক্তা মাহবুব রহমান রুহেলের পক্ষ হতে। হোটেলের আশপাশে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝেও খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।
যতদিন করোনার এই পরিস্থিত উত্তরণ হচ্ছে না ততদিন সায়মন বীচ রিসোর্ট’র এমডি মাহবুব রহমান রুহেলের মানবিক এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে। এই সহায়তা পাওয়া এক বীচ বালক জানান, ‘হরোনার ডরে দইজ্জার কুলুত ঢেউ গুনন ছারা এহন হ-ন হাম নাই। এই সমত ছায়মনর মালিক রহমান সাব’র উপহার আঁরার লাই মেওলা ছারা জড়’।
পর্যটক না থাকায় কক্সবাজার পর্যটনের হোটেল রেঁস্তোরা সব বন্ধ। ফলে অনাহারে মরতে বসছে সৃষ্টির অবলা জীব পথের কুকুরগুলো। ক্ষুধার্ত কুকুরদের মাঝেও রুহেলের পক্ষ থেকে নিয়মিত খাবার দিচ্ছেন সায়মন বিচ রিসোর্ট’র জিএম পুবুদু ফার্নান্দো।

স্থানীয় বীচ বালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার বালকদের কাছে তিনি খুব প্রিয়। সার্ফিং করতে নেমে সাধারণ ছেলেদের সাথে সাধারণ সার্ফারের মত মিশেন। বছর কয়েক আগে সৈকতে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করা বালক জাহিদকে সায়মন বীচ রিসোর্টে চাকরি দেন এবং তাকে স্কুলেও ভর্তি করান তিনি। কক্সবাজারে প্রায় ৩০০ হোটেল-মোটেল ৩০ টির মত অভিজাত হোটেল আছে। এই সময় মানুষ মানুষের পাশে না দাঁড়ালে কবে দাড়াবে?
২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি জমকালো আয়োজনে যাত্রা শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্ট।পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রথম বেসরকারি আন্তর্জাতিক মানের হোটেল ছিল ‘সায়মন’। ১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করা ঐতিহ্যবাহী ‘হোটেল সায়মন’র অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পথচলা শুরু করে সায়মন বিচ রিসোর্ট। মনোরম পরিবেশ ও অনন্য আতিথেয়তায় পর্যটকদের বেড়ানোর প্রিয় ঠিকানা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে এই পাঁচ তারকা হোটেলটি। ঐতিহ্যের মহিমা অক্ষুণ্ন রেখে এগিয়ে চলছে সায়মন বিচ রিসোর্ট। সাউথ এশিয়ান ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ডস (এসএটিএ) পায় বাংলাদেশের যে ১০টি প্রতিষ্ঠান, এগুলোরই একটি সায়মন বিচ রিসোর্ট।
লেখক : সহ-সম্পাদক, বাংলাধারা ডটকম













