মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের অলিতে গলিতে ঢুকে গেছে। এখন এসব রোহিঙ্গার নানামুখী ছুঁতোয় অপরাধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও শরনার্থী ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে নানাভাবে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের মধ্যে দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া কাজ করছে। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এদের দমাতে হিমশিম খাচ্ছে।
কক্সবাজার ও টেকানাফ সড়কের মাঝে রয়েছে ১২টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প। রোহিঙ্গা বিশেষ করে তরুণ সমাজ স্থানীয়দের সঙ্গে নানা ঝামেলা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গত প্রায় ১৫ দিন ধরে রোহিঙ্গা তরুণরা কক্সবাজার শহরে আসতে শুরু করেছে। অথচ প্রথমদিকে তথা ২০১৯ সালের শুধুমাত্র নারী ও প্রবীণদের মাঝে মধ্যে ২/৪ জনের আগমন ঘটেছে নানা কাজের ছুঁতোয়। ক্যাম্প থেকে রাতের আঁধারে এরা বেরিয়ে যেত ঠিকই যখন রাস্তার চেকপোস্টে কেউ থাকতো না।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা এদেশে প্রবেশ করেছে। এর পর জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পে আরো প্রায় এক লাখ শিশু। কিন্তু যারা মিয়ানমার থেকে ২০১৭ সালে যেসব তরুণ রোহিঙ্গা এসেছে এরা কেউ ইয়াবা আবার কেউবা স্থানীয় হোটেল মোটেল রেস্তোরায় কাজ নিয়ে অপরাধের চেষ্টা করছে। আবার কেউ কেউ দোকানপাট খুলে ব্যবসার চেষ্টা করছে ক্যাম্পের ভেতরেই। এদিকে কক্সবারের শ্রমবাজারেও প্রভাব ফেলছে রোহিঙ্গা । সস্তায় শ্রম বিক্রয় করে রোহিঙ্গারা আমাদের শ্রমিকদের কাজ লুটে নিচ্ছে। এমন অভিযোগ শ্রমজীবীদের।
২০১৭ সালের ২৩ আগষ্টের পর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে কোন বাধা না দেয়ায় প্রায় তিন মাস মানবতার দোহাই দিয়ে রোহিঙ্গাদের অবস্থান মজবুত করেছে সরকার। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে মিয়ানমারের পাশেই কি শুধু বাংলাদেশ ছিল? কেন চীন ও ভারতে এদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা। কারণ ঐ দুটি দেশসহ বিশ্বের বেশকটি দেশ এখন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশকে বাহবা দিতে শুরু করেছে।
তবে রোহিঙ্গারা একবার গেড়ে বসলে আর ফিরে যাবে না এটা অতীতের রেকর্ড বিশ্বে। ৯০ এর দশক থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা এদেশে প্রবেশ করেছে অবৈধভাবে। দীর্ঘ ৩০ বছরেও তাদের ফেরত পাঠাতে পারেনি কোন সরকার। ২০১৭ সালের ২৩ আগষ্টের পর আরো প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার-টেকনাফ দিয়ে প্রবেশ করেছে এদেশে।
অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবতা দেখাতে গিয়ে দেশী অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজি শুরু হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা নিয়ে ইয়াবা ব্যবসায় মেতেছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। শরনার্থী শিবিরে মানবতার নামে নিজেদের অবস্থান চাঙ্গা করছে এনজিও সংস্থা গুলো। কারণ এসব রোহিঙ্গীদের সাইনবোর্ড বানিয়ে ফান্ড কালেকশনে নেমেছে বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। রোহিঙ্গাদের পানিসহ বিভিন্ন খাবার সরবরাহের যোগান দিতে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে অতিমুনাফা অর্জন করছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
রোহিঙ্গারা কক্সবাজার ছাড়াও তিন পার্বত্য এলাকায় রাতের আঁধারে আস্তে আস্তে অবস্থান নিতে শুরু করেছে। টেকনাফ হয়ে ইয়াবার চালান পাচারের ঘটনায় র্যাব সেভেনের অভিযানে যেমন অনেক রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় কারাগারে রয়েছে। তেমনি আগামীতে এসব রোহিঙ্গা অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান যোগাতে গিয়ে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। কাজ না পেলে তারা জড়াবে অপরাধের সঙ্গে এমন আশঙ্কা সচেতনদের।
তবে এসব রোহিঙ্গারা শেষ পর্যন্ত আমাদের নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। কারন কুতুপালং ও উখিয়া দিয়ে রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে বিভিন্ন কৌশলে। বিভিন্ন জরিপের পরিসংখ্যানে এ পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আমাদের কক্সবাজার পর্যটন শিল্প অতিঅল্প সময়ের মধ্যে ধসের মুখে পড়বে। পর্যটকরা ইতোমধ্যে শঙ্কিত হয়ে অনেকে যাত্রা বাতিলের ঘটনা ঘটাচ্ছে এমন অভিযোগ কক্সবাজার কেন্দ্রিক ৬৮টি হোটেল ও মোটেল ব্যবসায়ীদের। রোহিঙ্গা কেন্দ্রিক নানা অপরাধ বন্ধে সতর্ক রয়েছে র্যাব। বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গারা জিম্মি করে টাকা নেয়ার ঘটনা আগে ঘটলেও এখন আর ঘটছে না। রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলায় খুব সহজে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মানুষকে অন্তত আঞ্চলিক ভাষা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আগামীতে ঐসব অঞ্চলে কাল হয়ে দাঁড়াবে এসব অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের ঢালে ঢালে শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা গেড়ে বসার আশঙ্কা রয়েছে। এমনও অভিযোগ রয়েছে, সরকারের রোহিঙ্গা নিবন্ধন ব্যবস্থাকে সাইনবোর্ড বানিয়ে অবস্থানরত এনজিও সংস্থাগুলোকে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ করে দিল সরকার এমন মন্তব্য স্থানীয়দের।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













