কক্সবাজার প্রতিনিধি »
পর্যটন নগরীকে করোনার প্রভাবমুক্ত রাখতে ঘোষিত লকডাউন নিশ্চিতে কঠোরতা পালন করছে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা। এ কঠোরতার পাশাপাশি মানবিক কর্মকান্ডও থেমে নেই সেনাবাহিনীর।
লকডাউনে খাবার ও চিকিৎসা প্রয়োজন হওয়া অসহায়-কর্মহীন মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে খাবার পৌছে দেয়া অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনীর রামুর ১০ পদাতিক ডিভিশনের সদস্যরা।
শনিবারও কোন ঘোষণা ছাড়াই কক্সবাজারের ৬ টি এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৪টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভাবগ্রস্তদের মাঝে চাল, ডাল, আটা, তেল, লবণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি স্বাভাবিক অসুস্থায় ভোগা লোকজনকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও পথ্য দিয়েছে সেনা চিকিৎসকদল। সেনা টহল দল লকডাউন সময় শুরুর পর থেকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রকৃত অভাবগ্রস্থ ও ছিন্নমূল মানুষদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া অব্যাহত রেখেছে।
সেনাবাহিনী রামু ১০ পদাতিক ডিভিশন সূত্র জানায়, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতায় কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর সদস্যেদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) অতর্কিতে কক্সবাজারের ছয়টি এবং চট্টগ্রামের চারটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভাবগ্রস্তদের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
সেনা সদস্যদের দেয়া খাবার সামগ্রী পেয়ে অনেক হতদরিদ্র মানুষ আবেগ আপ্লুত হয়ে সেনাবাহিনী ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। এ সময় সেনাসদস্যরা সরকারের নির্দেশনা মেনে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান। যে কোন জরুরি প্রয়োজনে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সেনাবাহিনী জনগণের পাশে রয়েছে বলে সকলকে আশ্বস্ত করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও রামু উপজেলাসহ বিভিন্নস্থানে রামু সেনানিবাসের চিকিৎসকদল হতদরিদ্র মানুষদের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা ও ঔষধ বিতরণ করেছে। করোনা পরিস্থিতির কারনে সাধারণ মানুষের আয় প্রায় শূন্যের কোঠায়। পাশাপাশি কক্সবাজার জেলায় লকডাউনের কারনে সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। এমতাবস্থায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ ধরনের চিকিৎসা ও ঔষধ সহায়তা পেয়ে তারা খুবই খুশি। গ্রামে গ্রামে ঘুরে এ রকম চিকিৎসা সহায়তা অব্যাহত রাখতে তারা সেনাবাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান।
সূত্র জানায়, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি সেনাসদস্যরা বিভিন্ন বাজার, দোকান, লোকালয়ে গিয়ে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখার অনুরোধ জানান। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে থাকা লোকদের নিজ ঘরে অবস্থানসহ জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত ঘরের বাহিরে না যেতে প্রেরণা দেন। জরুরি প্রয়োজনে খোলা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের প্রেষণা প্রদানসহ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেন টহলদল। পাশাপাশি রাস্তা, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় জীবানুনাশক স্প্রে করছেন সেনাসদস্যরা।
উল্লেখ্য, জেলায় এপর্যন্ত ৭৮১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন এবং ৯৪ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আনা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন হতে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ছাড়প্রাপ্ত পেয়েছেন ৫২১ জন। স্থাপিত হবার পর গত ১৭ দিনে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সিপিআর ল্যাবে ৩৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে তাবলীগ ফেরত নাইক্ষ্যংছড়ির এক বাসিন্দার করোনা পজেটিভ এলেরও বাকি ৩৪২ জনের নমুনা নেগেটিভ এসেছে। করোনায় এ পযর্ন্ত কক্সবাজারে একজনও মারা যাননি। তবে, কক্সবাজারের ৫ বাসিন্দা সৌদি আরবে করোনার থাবায় সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ














