মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
স্বপ্নছোঁয়া কর্মযজ্ঞে বিসিক নগরী এখন রাউজান। সরকার কর্মসংস্থান বাড়াতে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলছে রাউজান বিসিক শিল্প নগরী। ৩৫ হাজার একরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৭ একরের মাটি ভরাট কাজ শেষ। ১৮ একরের মাটি ভরাট কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের জুনে ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে। কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১৫ হাজার কর্মজীবির।
গ্যাস লাইনের জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডকে (কেজিডিসিএল)। বিদ্যুত সংযোগের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) প্রায় এক কোটি টাকা দেয়া হবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে। প্রকল্পে বিদ্যমান খালের উভয়দিকে প্রায় সাতশ’ ফুট দীর্ঘ রিটেইনিং ওয়াল দেয়া হয়েছে মাটি ভাঙ্গন রোধে। পুরো প্রকল্প জুড়ে দেয়া হচ্ছে সীমানা প্রচীর।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা এর তত্বাবধানে এই শিল্প নগরী গড়ে উঠছে বলে বাংলাধারাকে জানালেন প্রকল্প পরিচালক ও বিসিক এর চট্টগ্রামস্থ শিল্প সেবা কেন্দ্রের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আহমেদ জামাল নাসের চৌধুরী। তিনি বলেন চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ, ফৌজদারহাট, মীরসরাই ও কালুরঘাট শিল্প এলাকার মতোই গড়ে তোলা হচ্ছে এই শিল্প নগরী। বিসিক শিল্প নগরী রাউজানের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫ একর জায়গার উপর গড়ে উঠছে। এই শিল্প নগরীতে প্রায় ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ স্মল এন্ড কটেজ ইন্ড্রাষ্ট্রীজ কর্পোরেশনের(বিসিক) চট্টগ্রাম সার্ভিস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু করোনাকালীন সময়ের কারনে কাজের গতি যেমন কমেছে তেমনি নকশারও কিছু পরিবর্তনের কারনে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি প্রকল্প। তবে বিসিকের আওতায় চট্টগ্রামের রাউজানে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে দ্রæত গতিতে। প্রায় ৩৫ একর জায়গার উপর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভূমি অধিগ্রহনে কাল ক্ষেপণ হয়েছে অনেক বেশী। ভূমি অধিগ্রহনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা। প্রথম ধাপে ১৭ একর ভূমির মাটি ভরাট কাজ শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের প্রায় ১৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকী ১৮ একরের মাটি ভরাট কাজ শুরু হয়েছে।
সীমানা প্রাচীর ও বিসিকের একটি প্রশাসনিক ভবনের কাজও চলছে। প্রশাসনিক ভবনে একজন কর্মকর্তার অধীনে ৮জন কর্মচারী কাজ করবে। এছাড়া প্রকল্পে মোট ৬৫টি প্লট করা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্লাস প্লট ৩২ হাজার বর্গফুটের ১৮টি, ‘বি’ ক্লাস ১৭ হাজার ৬০০ বর্গফুট পরিমাপের ২টি, ‘সি’ ক্লাস প্লটগুলো ১১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ১৭টি এবং স্পেশাল ক্যাটাগরির আওতায় রয়েছে ৬ হাজার ৪২৩ বর্গফুট থেকে ১৫ হাজার ৬৪৪ বর্গফুট পরিমাপের ২৮টি প্লট। ২০১৯ সালে যদিও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ভূমি অধিগ্রহন নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ার কারনে এই প্রকল্পের মেয়াদ আরো দুই বছর বৃদ্ধি করে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নেয়া হয়েছিল।

প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য প্রকল্পে প্রবেশের জন্য ৪০ ফুট প্রশস্থ এপ্রোস সড়ক তৈরী করাসহ প্রত্যেকটি প্লটের সামনে ৩০ ফুট প্রশস্থ রাস্তা থাকবে। সরকারের উন্নয়ন বাজেট থেকে প্রকল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও বিসিক এর চট্টগ্রামস্থ শিল্প সেবা কেন্দ্রের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আহমেদ জামাল নাসের চৌধুরী বাংলাধারাকে আরো জানিয়েছেন, রাউজানের এই প্রকল্পের জন্য ৩৫ একর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প স্থানীয়দের উন্নয়নের দ্বার খুলে দিবে।
এদিকে, স্থানীয় জনসাধারন অপেক্ষায় রয়েছে এই শিল্প নগরী কখন চালু হচ্ছে। কারণ স্থানীয় বিত্তশালীরা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ছোট বড় মোট ৬৫টি প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ১৪/১৫ হাজার বেকার যুবকের চাকরীর সুযোগ হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের যোগদানের কারনে শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদনে যেমন গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে তেমনি উৎপাদন ব্যয়ও সাশ্রয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, রাউজানে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে উঠলে শিল্প উদ্যোক্তা বৃদ্ধি পাবে। নতুন নতুন উদ্যোক্তার কারনে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানী যেমন হ্রাস পাবে। তেমনি রপ্তানী পণ্য তৈরীর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে অনেক উৎপাদিত পণ্য রয়েছে যা শুধু চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক ব্যবহার হচ্ছে। শিল্প মেলার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেমন এসব পণ্য বাজারজাত হতে পারে তেমনি বিদেশেও রপ্তানীর ব্যবস্থা করতে পারলে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













