২৮ অক্টোবর ২০২৫

স্বাস্থ্যকর-মজাদার ‘বাঙ্গালীয়ানা প্ল্যাটার’

সাদিয়া তাসনিম»

বর্তমানে রেস্টুরেন্ট মুখি খাওয়ারের যুগে আমাদের উচিত বাড়িতে স্বাস্থ্যকর কিছু তৈরি করা। বাহিরের অধিকাংশ খাবার অস্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি করা হয় ফলে যথাযথ পুষ্টি গুণ বজায় থাকে না। যার কারণে আমাদের উচিত প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় মাছ, মাংসের পাশাপাশি শাক-সবজি রাখা যেটা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করে, ঘরে স্বাস্থ্যকর উপায়ে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার তৈরি করা উচিত।

তেমনই একটি সুস্বাদু এবং মজাদার রেসিপি ‘বাঙ্গালীয়ানা প্ল্যাটার। বাঙ্গালীর প্রধান খাবার ভাত, সুপরিচিত কচুশাঁক ও থানকুনির পাতার সমন্বয়ে এই প্ল্যাটারটি যেমন সুস্বাদু, তেমনি শরীরের জন্যে উপকারী।

ভিন্ন স্বাদে কচু শাঁক

উপকরণ

১. কচু শাঁক , ২. আদা বাটা (২ চা চামচ), ৩. রসুন বাটা (২ চা চামচ), ৪. পেঁয়াজ বাটা (২ চা চামচ), ৫. হলুদ গুড়ো (২ চা চামচ), ৬. ধনিয়া গুড়ো (৩ চা চামচ), ৭. এলাচ (৪টি), ৮. তেজপাত (৩টি), ৯. লবঙ্গ (৪টি), ১০. লেবুর রস (২ টেবিল চামচ), ১১. দারচিনি (২ টুকরো), ১২. কাঁচা মরিচ (৩টি), ১৩. পেঁয়াজ ও রসুনের বেরেস্তা, ১৪. লবণ(স্বাদ মতো), ১৫. সরিষার তেল/সয়াবিন তেল (১ টেবিল চামচ), ১৬. পানি (২ কাপ)

প্রস্তুতপ্রণালী

প্রথমে একটি পাত্র নিয়ে তাতে আগে থেকে ধুয়ে কুচি করে রাখা কচুশাঁক গুলো নিয়ে এরপর একে একে প্রথমে পেঁয়াজ বাটা ২ চা চামচ, আদা বাটা ২ চা চামচ, রসুন বাটা ২ চা চামচ, ধনিয়া গুড়ো ৩ চা চামচ, হলুদ গুড়ো ২ চা চামচ, তেজপাতা ৩টি, এলাচ ৪টি, দারচিনি ২ টুকরো, লবঙ্গ ৪টি, কাঁচা মরিচ ৩টা, সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ, স্বাদ মতো লবণ, এবং সবশেষে ২ কাপ পানি দিয়ে চুলায় ১৫/২০ মিনিট ভালভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে।

৫ মিনিট পর ঢাকনা উল্টিয়ে ভালোভাবে কাঠির সাহায্যে নেড়ে দিতে হবে যাতে মসলা গুলো ভালভাবে মিশে যায়। এরপর আবারও ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে ১০/১৫ মিনিট এর জন্যে। ১০/ ১৫ মিনিট পর শাঁকগুলো সিদ্ধ হয়ে একদম ঘন হয়ে আসলে এতে লেবুর রস ২ টেবিল চামচ ও পেঁয়াজ ও রসুনের বেরেস্তা (পেঁয়াজ ও রসুন কুচি গরম তেলে বাদামী রং করে ভেজে নেওয়া) দিয়ে দিতে হবে।

সবশেষে ভালোভাবে কাঠি দিয়ে নেড়ে, একটি প্লেটে পরিবেশন করে নিতে হবে।

জেনে নেওয়া যাক আমাদের শরীরের জন্য কচুশাকের  উপকারিতা-

কচুশাঁকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে রক্তশূন্যতায় ভোগা মানুষদের জন্যে উপকারী। এছাড়া কচুশাঁক রাতকানা ও চোখের ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টিশক্তি বুদ্ধি করে। খাবারকে দ্রুত হজম করতে সহযোগীতা করে। কচুশাঁকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। ভিটামিন ‘সি’ শরীরের ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিটি শিশুকে ছোট বেলা থেকেই কচুশাঁক খাওয়ানো অভ্যাস করানো উচিত। মানবশরীরে এটি অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কচুশাঁকের আয়রন ও ফোলেট মানবদেহে রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। যার ফলে অক্সিজেন সংবহন অবস্থা পর্যাপ্ত থাকে। এর মূল উপকারিতা হল প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস থাকা। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বলছে, কচুশাঁক দাঁত ও হাড়ের গঠনে উপকারী। এতে বিদ্যমান নানা রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য অনেক ভাল কাজ করে।কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল মাত্রা কমে যায়, এবং উচ্চরক্ত চাপে ভোগা রোগীদের জন্য কচুশাঁকের কার্যকারিতা রয়েছে।

থানকুনি পাতার চাটনি

উপকরণ

১. থানকুনি পাতা, ২. পেঁয়াজ কুচি (১ কাপ), ৩. সরিষার তেল (২ টেবিল চামচ), ৪. কাঁচা মরিচ কুচি (১ চা চামচ), ৫. শুকনো মরিচ গুড়ো (১ চা চামচ), ৬. লেবুর রস (২ টেবিল চামচ), ৭. লবণ  (স্বাদ মতো)

প্রস্তুতপ্রণালী

একটি পাত্রে থানকুনি পাতা ভালভাবে ধুয়ে কুচি করে নিতে হবে। অন্য একটি প্লেটে ১ কাপ পরিমাণ পেঁয়াজ কুচি, ১ চা চামচ কাঁচা মরিচ কুচি, শুকনো মরিচ গুড়ো ১ চা চামচ নিতে হবে। ঝাল্টা পছন্দ অনুযায়ী বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিতে পারেন। তবে, চাটনিতে শুকনো মরিচ ও কাঁচা মরিচ দুটোই দিলে স্বাদটা ভাল আসে। এরপর লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, সবশেষে লেবুর রস ২ টেবিল চামচ দিয়ে, মিশ্রণটি ভালভাবে মাখিয়ে নিবেন। এরপর মিশ্রণটি থানকুনি পাতার মধ্যে দিয়ে ভালভাবে মাখিয়ে নিয়ে নিজেদের মত করে পরিবেশন করতে পারবেন।

জেনে নেওয়া যাক আমাদের শরীরের জন্য থানকুনি পাতার উপকারিতা

যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের জন্য থানকুনি পাতা খুবই উপকারী। এছাড়াও থানকুনি পাতা আমাশয়ের মতো সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্য়াটি অ্যাসিড এবং ফাইটোকেমিকাল ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ও চুল পড়া কমায়। জ্বর ও কাশির প্রকোপ কমাতেও এটা খুবই কার্যকারি উপাদান।

কচুশাঁক এবং থানকুনি পাতার চাটনি তৈরী হয়ে গেলে একটি প্লেটে ভাত, কঁচুশাক এবং থানকুনি পাতা সাজিয়ে পরিবেশন করতে পারেন ‘বাঙ্গালীয়ানা প্ল্যাটার’। আপনারা চাইলে কিছু সাথে কিছু গরু মাংস ভুনা কিংবা কোনো মাছও পরিবেশন করতে পারেন।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন