২৭ অক্টোবর ২০২৫

রেলওয়ের অস্থায়ী ৮ হাজার কর্মীর অনিশ্চিত ভবিষ্যত

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদগুলো টেম্পোরারি লেবার রিক্রুটমেন্ট-(টিএলআর) ভিত্তিতে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে কোনোভাবে দিন পার করছিল। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী কর্মচারীদের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে রেলের জনবল সংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশ রেলওয়ে বাজেট বরাদ্দ না হওয়ার দোহাই দিয়ে প্রায় ৮ হাজারের বেশি অস্থায়ী কর্মচারী ছাটাই করেছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ৪৭ হাজার ৬৩৭ জন জনবলের অনুমোদন রয়েছে। তবে এর মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ২৫ হাজার। বাকি প্রায় ২২ হাজার পদ পড়ে আছে শূন্য অবস্থায়।

রেলওয়ের প্রায় এক হাজারেরও বেশি অস্থায়ী কর্মচারী তাদের চাকরি স্থায়ী করার জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করেন। সেই আপিলের ভিত্তিতে উচ্চ আদালতে অন্তত ছয়টি রায়ে ওই সকল কর্মচারীকে স্থায়ীভাবে নিয়োগের নির্দেশ দেন। সেই আলোকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আদালতের সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন না করে নতুন নিয়োগের পথে হাটছেন। ফলে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়েছেন বছরের পর বছর ধরে রেলওয়েতে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারীরা । এছাড়াও আরো আড়াই হাজার অস্থায়ী কর্মচারীর করা অন্তত ১৫টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

আদালতের রায় অনুযায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হলেও অজানা কোনো কারণে তা আবার থমকে গেছে। তা বাস্তাবায়ন না করে উল্টো প্রকল্পের শ্রমিকদের নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

ওই সকল অস্থায়ী কর্মচারীদের অভিযোগ— আইন অনুযায়ী নিরবিচ্ছিন্নভাবে টানা তিন বছর অস্থায়ী পদে কর্মরতদের রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণের নিয়ম আছে। অস্থায়ী বা টেম্পোরারি লেবার রিক্রুটমেন্ট কর্মচারীদের কেউ কেউ ১০ বছরের বেশি সময় ধরেও রেলওয়েতে কাজ করছেন। তাদের বেশিরভাগেরই নতুন করে চাকরিতে আবেদনের বয়স নেই।

রেলওয়ের তথ্যমতে, প্রায় ৮ হাজারের বেশি অস্থায়ী কর্মী গেইটকিপার, পি-ম্যান, ওয়েম্যান, খালাসীসহ বিভিন্ন পদে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। দৈনিক ভিত্তিতে তাদের মজুরি ৫০০-৫৭৫ টাকা পর্যন্ত।

রেলওয়ে সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৮ জুলাই রেলওয়ের আউটসোর্সিং নীতিমালার আওতায় ২ হাজার ৪১৮ জন লোক নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে সেবা ক্যাটাগরি-১ এর আওতায় সিএমই পূর্বে ২০ জন ও পশ্চিম অঞ্চলে ১০০ জন, ক্যাটাগরি-২ এর আওতায় পূর্বে ৬৮০ জন ও পশ্চিম অঞ্চলে ৭৮৫ জন, সিএমই (লোকো) তে ৩১৮ জন, সিইই পূর্বে ৩০০ জন ও পশ্চিম অঞ্চলে ২০০ জন এবং সিসিএসের অধীনে ৩৩৮ জন কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এ কারণেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী কর্মচারীদের ছাটাইয়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।

টিএলআর ঐক্য ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, হাজার হাজার শ্রমিকের মাথায় হাত। শ্রমিকদের ডেকে বলা হয়েছে, তাদের জন্য আর কোন বেতন-ভাতার বাজেট নেই।

বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা কোনো ভাবেই আউটসোর্সিংয়ের পক্ষে নই। আমরা সব সময় শ্রমিকদের পাশে ছিলাম। আমরা চাই না সাধারণ শ্রমিকদের পেটে লাথি দিয়ে কোনো গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ হাসিল করুক।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক এম আর মন্জু বলেন, আউটসোর্সিং সিস্টেম চালু না করে অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী করে নেওয়া উচিত। অস্থায়ী শ্রমিকদের হুট করে বাদ দিয়ে দিলে বাংলাদেশ রেলওয়ে বেশ কিছু দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোক হারাবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া জনবলের দক্ষতা অর্জন করতে অনেক বেশি সময় লেগে যাবে।

তবে রেলওয়ের ২০২০ সালে প্রণীত ক্যাডার বহির্ভূত কর্মচারী নিয়োগের নীতিমালায় প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের রাজস্বখাতে স্থায়ী করার সুযোগ নেই। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দীর্ঘসময় ধরে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারীরা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে টিএলআর (অস্থায়ী) ঐক্য ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “সরকারি আদেশ, উচ্চ আদালতের রায় মেনে রাজস্ব খাতে নিয়োজিত অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগ দিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। কিন্তু রেলওয়ে সরকারি আদেশ কিংবা আদালতের রায় অমান্য করে দিনের পর দিন অস্থায়ী শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে। আমরা ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চতর পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি। ধর্মঘটের মতো কর্মসূচিও দিয়েছি। আমরা চাই রাজস্ব খাতের অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগের পর ক্রমান্বয়ে যাতে প্রকল্পের শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়।”

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‌‌‘রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণের বিষয়টি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রক্রিয়াধীন। নতুন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে কিছু চতুর্থশ্রেণির শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হবে। এর সঙ্গে দীর্ঘদিনের পুরোনো টিএলআর কর্মীদের স্থায়ীকরণের সম্পর্ক নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ অর্থবছরে বাজেটে টিএলআরদের জন্য কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন পেলে আউটসোর্সিংয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। এসময়টুকুতে যাদের প্রয়োজন শুধু তাদের রাখার কথা বলেছেন কর্তৃপক্ষ।’

আরও পড়ুন