মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) উন্নয়নের নামে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ৬৯৬ কোটি ৩৪ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অর্থায়নে প্রতিনিয়ত এই ফ্লাইওভারের লুপ রোডে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন চালকরা। সরু হওয়ার কারণে এবং পাশাপাশি দুটি গাড়ী চলতে না পারার কারণে বিশেষ করে সিএনজি চালিত টেক্সিগুলো এই লুপ রোডে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।

নগরীর বায়জীদ শিল্পাঞ্চল সড়ক থেকে ষোলশহর ২নং গেটের ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার ও জিইসি লুপ রোড ব্যবহার করতে হয়। এতে প্রায় ১০০ফুট উপর দিয়ে ছোট আকারের পরিবহনগুলো ঘোরাতে বাধ্য হচ্ছে । এই লুপ রোড ব্যবহার করেতে কষ্ট হচ্ছে মাঝারী ও বড় আকারের পরিবহন। কারণ পাশাপাশি দুটি গাড়ী প্রায় ১০ফুট প্রশস্থের লুপ রোডের শেষপ্রান্তে থাকা বাঁকটিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে উল্টো মুরাদপুরের দিকে যাচ্ছে পরিবহনগুলো।
প্রশ্ন উঠেছে, লুপ শতফুট উচ্চতায় তোলা এবং সরু করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। ষোলশহর এলাকায় কেন-ই বা লুপের শুরুতে পাইপের ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। আবার ভারি পরিবহন তথা বাস ও ট্রাক আকৃতির পরিবহনগুলো শুধুমাত্র লালখানবাজার থেকে বহদ্দারহাট ও বহদ্দারহাট থেকে লালখান বাজার চলাচল করতে পারে। কারণ বায়জিদ তথা বেবি সুপার মার্কেটের লুপ রোডের শুরুতে বড় গাড়ি চলাচলে বাধা হিসেবে ফ্লাইওভারের মুখে লোহার ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। ফলে বায়জিদ থেকে আসা বড় গাড়ী ফ্লাইওভারে উঠতে পারে না।

অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প পরিচালক, স্থপতি ও তত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠনের অজ্ঞতার কারণে সরকার ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিল ফ্লাইওভার ব্যবহারকারীদের। কারণ প্রাইভেট কার, মিনি পিকআপ, সিএনজি টেক্সি ও মোটরসাইকেল আরোহী ছাড়া আর কেউ এই লুপ রোড হয়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে পারবে না। এছাড়াও নকশাবর্হিভূত পরিমাপে ও ব্যাতিক্রমী এই লুপ রোড তৈরী করা হয়েছে।
চউক সূত্রে জানা গেছে, চউকের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে বায়জিদ সড়কের গাড়ী উঠার জন্য ষোলশহর বেবী সুপার মার্কেটের সামনে থেকে লুপ সড়ক তৈরী করা হয়েছে। মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৪ লেন বিশিষ্ট আকতারুজ্জামান ফ্লাইওভার ৩ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৬ দশমিক ৬ মিটার প্রশস্থ। এরমধ্যে ষোলশহর ২ নং গেট হতে বায়জিদমুখী বাহির ও প্রবেশের জন্য র্যাম্প এবং লুপ তৈরীর পরিকল্পনা করা হয় চর্তুমুখী ব্যবহারের জন্য।

আবার ফ্লাইওভারে উঠার জন্য উর্দ্ধমুখী র্যাম্প(লুপ) ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৬ দশমিক ৫ মিটার। নিম্নমুখী র্যাম্প(লুপ) এর দৈর্ঘ্য ৭৫০ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ মিটার। জিইসি জংশনে ৪টি বাহির ও প্রবেশের জন্য র্যাম্প(লুপ) তৈরীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এসব র্যাম্প ১ দশমিক ৪৪ কিমি. দৈর্ঘ্য ও ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্থ।
৬৯৬ কোটি ৩৪ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অর্থায়নে সরকারের পক্ষ থেকে ৬৭১ কোটি ৩৪ লক্ষ ৪৪ হাজার। বাকি ২৫ কোটি টাকা চউকের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। এরমধ্যে মূল ফ্লাইওভার নির্মানের ব্যয় প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা আর বাকি প্রায় ২৪৭ কোটি টাকা ষোলশহর ও জিইসির ৬টি র্যাম্প নিমার্ণের ব্যয়।

অভিযোগ রয়েছে, ষোলশহর থেকে বায়জীদমুখী র্যাম্প(লুপ) বড় গাড়ির জন্য ব্লক করতে বেবিসুপার মার্কেটের সামনে র্যাম্পে উঠার শুরুতেই সড়ক থেকে সাত/আট ফুট উঁচুতে লোহার পাটাতন দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। ফলে শুধুমাত্র মোটরসাইকেল, সিএনজি টেক্সি, প্রাইভেটকার ও মিনি পিকআপ চলাচল করতে পারছেনা। প্রতিবন্ধকতার কারনে ব্যববহার করতে পারছে না পাবলিক পরিবহন বাস, টেম্পু, লেগুনা ও মিনিবাস।
প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, বেবীসুপার মার্কেটের সামনে থেকে এই র্যাম্পে প্রায় ১০০ ফুট উপরে উঠতে হয়। এরপর ডান দিকে মোড় নিতে হলে অপ্রশস্থতার কারনে জীপ বা মাইক্রোকে থামিয়ে তারপর ঘুরাতে হয়। কারন প্রায় ১০ ফুট প্রশস্থের এই র্যাম্প অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ এই পর্যায়ে। এরপর নিম্নমুখী হলেই বেশিরভাগ গাড়ী র্যাম্পের উপরেই মোড় ঘুৃরিয়ে আবার মুরাদপুরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এতে প্রাণহাণির আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক চালক ও যাত্রী।

আরও জানা গেছে, এই র্যাম্প থেকে একদিকে ষোলশহর জংশন অতিক্রম করে একটি র্যাম্প ফ্লাইওভারে মিশেছে লালখান বাজার দিয়ে নামার জন্য আরেকটি র্যাম্প নাসিরাবাদ বয়েজ স্কুলের অপরপ্রান্তে তথা সানমার ওশান সিটি শপিংমলে বা ওআরনিজাম আবাসিক এলাকার সামনে নেমেছে। আর জিইসি মোড়ের চারটি র্যাম্পের পরিকল্পনা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করেনি চউক। এসব র্যাম্পের মাধ্যমে ওয়াসা মোড় থেকে জিইসি কনভেনশন হলের সামনে ও জিইসির ইফকো কমপ্লেক্সের সামনে থেকে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে উঠে মুরাদপুর যাওয়ার সুযোগ রাখার কথা ছিল যখন চউকের চেয়ারম্যান ছিলেন আবদুচ সালাম।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













