শাহ আব্দুল্লাহ আল রাহাত »
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস আমদানি শুল্ক কর বাবদ ৩ হাজার ১৭ কোটি দেনা পাওনা থাকলেও তা পরিশোধ করছে না বাংলাদেশ অয়েল গ্যাস ও মিনারেল কর্পোরেশন-পেট্রোবাংলা। ৮ মাস ধরে এলএনজি (লিক্যুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানির শুল্ক কর বাবদ এই দেনা বাকি রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এলএনজি শুল্কায়ন শুরু করে ২০১৮ সালে থেকে। কাতার গ্যাস অপারেটিং কোম্পানি লিমিটেড কাতার থেকে আমদানি হওয়া প্রথম ৬১ হাজার ৭২৯ মেট্রিক টন এলএনজরি শুল্কায়ন হয় ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে। পেট্রোবাংলার কাছে হাজার কোটি টাকা দেনা থাকায় রাজস্ব খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
গত ১৮ মে পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যানকে এ বিষয় চিঠি প্রদান করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার ফখরুল আলম। চিঠিতে দৃষ্টি আর্কষণ করা হয় পেট্রো বাংলার পরিচালককে (অর্থ)। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয় বকেয়া শুল্ক কর পরিশোধ না করলে কাস্টম আইন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৮ মাসে ২৩ টি বিল অব এন্ট্রি এবং ৩০ টি আইজিএম এর বিপরীতে পেট্রোবাংলার কাছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস শুল্ক কর বাবদ পাবে ৩ হাজার ১৭ কোটি ১ লাখ টাকা।
এলএনজি খালাসের দায়িত্বে থাকা সরকারি সিএন্ডএফ এজন্টে রূপান্তরিত প্রাকৃতকি গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, কাতর এবং ওমান থেকে বাংলাদেশে এলএনজি আমদানি করে পেট্রোবাংলা। আমদানি মুল্যরে উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ২ শতাংশ এআইটিসহ (এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স) ১৭ শতাংশ শুল্ক কর আদায় করে কাস্টমস। প্রতিটি জাহাজে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার কিউবিট মিটার এলএনজি আমদানি করা হয়। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০টি জাহাজে এলএনজি আমদানি হয়ছে। তবে এর মধ্যে শুল্ক কর বাবদ প্রায় ১৯০টি জাহাজের শুল্ক কর পরিশোধ করা হয়েছে।
এদিকে পেট্রোবাংলার কাছে প্রতি মাসেই বাড়ছে কাস্টমসের পাওনা। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সর্বশেষ ২০২২ সালরে ১৮ মে র্পযন্ত ১০টি চিঠি দেয় কাস্টমস। চলতি অর্থবছর শেষে পাওনা আরো বাড়বে বলে বলছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
পেট্রোবাংলা র্কতৃক আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল গ্যাস পরবিহনকারী এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্ট্রাকচার রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) থেকে সরাসরি পাইপ লাইনরে মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সাধারণত পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর শুল্কায়ন শুরু হয়। কিন্তু এলএনজি গ্যাসের ক্ষেত্রে জাহাজ থেকে জাতীয় গ্রীডে সরাসরি যুক্ত হওয়ার পর শুরু হয় শুল্কায়ন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম বাংলাধারাকে বলেন, ‘পেট্রো বাংলার কাছে হাজার কোটি টাকা শুল্কায়ন বাবদ দেনা বাকি থাকায় রাজস্ব খাতে খুবই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া তিনি আরো চলতি অর্থ বছরে পেট্রোবাংলা যদি দেনা পরিশোধ না করে সেক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে পিছিঁয়ে পড়ার সম্ভবনা দেখা দিতে পারে।’ এই বিষয়ে পেট্রো বাংলার পরিচালককে (অর্থ) চিঠি দেওয়ার কথা জানান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার।
পেট্রোবাংলার নিজস্ব সিন্ডএফ এজেন্ট রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাংলাধারাকে এ বিষয়ে বলেন, ‘শুল্ক পরিশোধের বিষয়টি আসলে পেট্রোবাংলার হেড অফিস থেকে দেখা হয়। শুল্কায়ান প্রক্রিয়ার শুরু না হওয়ার কারণে মূলত শুল্ক পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। শুল্ক পরিশোধের বিষয়টি ধারাবাহিক পর্যায়ক্রমে শুল্ক পরিশোধ করা হবে।’