আকাশ মামা মংসিং, বান্দরবান »
ঈদ মানেই আনন্দ। আর এ আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই ছুটেন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। এবারের ঈদে থাকছে দীর্ঘ ছুটি। সেই ছুটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি বান্দরবান দেখতে ছুটে আসবেন পর্যটকেরা। সেসময় পর্যটকের উপচে পড়া ভীড়। মন্দা কাটিয়ে আবারও পাহাড়ের পর্যটন অর্থনীতি কিছুটা উন্নতি হবে এমনটাই আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
গেল দুই বছর প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস কারণে বান্দরবান জেলায় পর্যটন খাতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল পর্যটন ও হোটেল মালিক সমিতিরা। করোনার প্রাদুর্ভাব কারণে দ্বিগুন লোকসানে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল পর্যটন কেন্দ্রসহ হোটেল মোটেলগুলো। করোনার কারণে পুরো জেলাজুড়ে পর্যটকের শূন্যতায় ভুগেছিল পর্যটন। তবে এ বছরের পর্যটনের প্রাণ ফিরবে- এমনটাই আশা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
শৈলপ্রপাত বিক্রেতা লিনিয়াম বম জানিয়েছেন, এবার ঈদে আশা করি ভালো বিক্রি হবে। নতুন ও বিভিন্ন রংঙের চাদর তৈরি করে রেখেছি। আশা করি, পর্যটকের কাছে দ্বিগুনভাবে বিক্রি হবে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত দুই বছরে মহামারি করোনা কারণে পর্যটনখাতে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। যার কারণে পর্যটন শিল্পের ক্ষতি কেউ এখনো পুষিয়ে উঠতে পারেনি। তাদের আশা, এ বছর ঈদকে সামনে রেখে পর্যটনের ব্যবসা কিছুটা উন্নতি হবে। সে আশাটিকে পুষে রেখে পর্যটকের জন্য হোটেলের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাচ্ছন্দভাবে সাজিয়েছেন হোটেল মালিক সমিতিরা।
বান্দরবান হোটেল হিলভিউ ম্যানেজার মো. রিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছেন, করোনা কারণে গত দুই বছরে লোকসান দ্বিগুন হয়েছে। তাই এবার ঈদকে সামনে রেখে হোটেলে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পর্যটকের জন্য সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পর্যটকরা অনলাইনের মাধ্যমে অগ্রিম রুম বুকিং দিয়ে রেখেছে। যা ২০ শতংশ মতন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক তথ্য অনুযায়ী, বান্দরবান জেলাতে ছোট বড় হোটেল-মোটেল সংখ্যা প্রায় ৭০টি। সেসব হোটেলের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে হোটেল কর্তৃপক্ষরা। যাতে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দভাবে থাকতে পারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় আবাসিক হোটেল-মোটেল রুমগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করছেন হোটেলের কর্মচারীরা। কক্ষের মধ্যে উন্নত মানে বেডসিট, বালিশ কভার ও বিছানায় সহ প্রত্যেক জিনিসপত্র ডিজাইনের সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে প্রাকৃতিক প্রেমিকরা দিন শেষে আগমনের ফলে তাদের স্বাচ্ছন্দ ভাবে থাকতে পারেন।
হিলটন হোটেলে ম্যানেজার এস এম আক্কাস উদ্দিন জানান, ৭২ টি রুমের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ বুকিং করেছে পর্যটকরা। ৫ হতে ৬ তারিখে মধ্যে সব রুম বুকিং হবে বলে আশা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহরের হোটেল মোটেল গুলোতে প্রায় অধিকাংশ কক্ষ আগাম ভাড়া হয়ে গেছে। যার হার ৫৫-৬০%। তবে ঈদের পরে বিশেষ করে ৫ ও ৬ তারিখ এ দুই দিন পর্যটকরা কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন আগাম।
পর্যটন হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, বান্দরবানে ৭০টি হোটেল মোটেল রিসোর্ট আছে। যার ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৫ হাজারের অধিক। এরই মধ্যে হোটেলগুলোতে ৪০-৫০% অধিক আগাম বুকিং হয়ে গেছে।
বান্দরবান জেলায় মধ্যে মেঘলা, নিলাচল,স্বর্ণ মন্দির, রামজাদী, শৈল প্রপাত, চিম্বুক ভিউ, নীলগিরি, প্রান্তি লেক ইত্যাদিসহ রয়েছে অধিক পর্যটন কেন্দ্র। সেসব কেন্দ্রগুলো সাজানো হয়েছে রংবেরঙে। আশে পাশে ঝোপঝাপ ও পরিষ্কার পরিচ্ছনতা করছেন পর্যটন কর্মীরা। শুধু কি তাই ঈদকে সামনে রেখে পর্যটকের আগমনে প্রহর গুনছেন তারা।

নিলাচল পর্যটন কেন্দ্রে টিকেট কাউন্টার অমিক চাকমা জানান, ঈদকে সামনে রেখে আগাম প্রস্তুতি রয়েছে। আশেপাশে জঙ্গল ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি পযটকের আকর্ষণ করতে সিড়িগুলোতে রঙ দেওয়া হয়েছে। আশা করছেন এইবার পর্যটকের সমাগম হবে।
অন্যদিকে দিকে পর্যটকদের কঠোরভাবে নিরাপত্তা রাখতে আইনশৃঙখলা বাহিনী রয়েছে সজাগ প্রস্তুতি। বিভিন্ন পর্যটনের কেন্দ্রগুলোতে আইনি নম্বর দিয়েছে প্রত্যেকটি পর্যটনজুড়ে। পাশাপাশি পর্যটকদের সমাগমে যেন কোন আপত্তিকর বিভ্রান্তিকর ও অস্থিরতা তৈরি না হয় সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ টিম প্রস্তুতি নিয়েছে।
বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশ উপ- পরিদর্শক ওসি মো. জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, ঈদের দিন পর্যটকের কোন সমস্যা না ঘটে সে জন্য প্রত্যেক স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন রাখা হয়েছে। এবং সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানিয়েছেন, এইবার দীর্ঘ ছুটিতে ঈদের পর্যটকের সমাগম হবে। তাই পর্যটকের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে।