ksrm-ads

১৯ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

পোকখালীতে রাত হলেই শোনা যায় গুলির শব্দ, আতঙ্কে এলাকাবাসী

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

কক্সবাজারের ঈদগাঁওর পোকখালীতে রাত হলেই শোনা যায় গুলির শব্দ। আর এই গুলির শব্দের আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে কয়েক গ্রামের মানুষ। কয়েক যুগ ধরে চলে আসা একটি চিংড়ি ঘের দখল-বেদখল নিয়ে আবারও রক্তের ‌‘হুলিখেলা’ শুরুর ইঙ্গিত পেয়ে শংকায় দিনাতিপাত করছেন স্থানীয়রা।

সূত্রে জানা গেছে, একটি ভূমিদস্যু চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ ৪০০ একরের মত পরিমাপের একটি চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষাবাদের জমি দখলে নিতে বিভিন্ন স্থান থেকে ভাড়া করে সন্ত্রাসী জড়ো করেছে। তাদের হাতে রয়েছে বিশাল অস্ত্রের ভাণ্ডারও। যে কোনসময় ভূমিদস্যু চক্রটি পুরো এলাকা ঘিরে বেপরোয়া হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে সরজমিন গিয়ে। অস্ত্রবাজি বন্ধ ও জমি দখলের আশঙ্কা থেকে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে পোকখালীর ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের পূর্ব গোমতলীর একটি খোলা মাঠে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ওবায়দুল হক চৌধুরী গং। এসময় দিবালোকে অনেককেই গুলির স্প্রিন্টার গায়ে হাজির হতে দেখাগেছে। এতে করে আতংক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকাজুড়ে।

সংবাদ সম্মেলেনে ওবায়দুল হক চৌধুরীর ওয়ারিশ মো. শরিফ উদ্দিন শাহ নেওয়াজ অভিযোগ করে বলেন, সাবেক সাংসদ ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুর রহমান কাজলের ভাই মশিউর রহমান রাজনের নেতৃত্বে তাদের ৪শ একর জমি দখল করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে তারা বিভিন্ন এলাকার শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গোমতলীতে এনে জড়ো করেছেন।

শাহ নেওয়াজের দাবি, চক্রটি জমি দখলের পাশাপাশি মালিক পক্ষের যে কোন দুইজন বা কয়েকজন চাষিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। রাজন ছাড়াও এ চক্রের সাথে স্থানীয় মোজাহের, মো. ছৈয়দ, নূরুচ্ছফা, আমানু, নজরুল ইসলাম নকুসহ আরো কয়েক জন ভুমি দস্যু ও সন্ত্রাসী জড়িত।

তিনি আরও বলেন, এখন এ মুহুর্তেই আমাদের আশেপাশে অনেক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী উপস্থিত হয়েছেন। আমরা এ এলাকায় আর রক্তের হুলিখেলা চায় না। শান্তি চাই।

তার দেয়া তথ্যমতে, বিরোধপূর্ণ জমি ১৯৩০ সালের ২১ জুন ৫ বছরের জন্য ইলিয়াছ মিয়া গং দের (হাফেজ মিয়ার বাবা) কট বন্ধক রাখেন। পরবর্তীতে হাফেজ মিয়া মিথ্যা, ফেরাবী, জাল, নিলাম সৃজন করে উক্ত জমি নিলাম সম্পাদন করে নামে ও বেনামে নিলাম ক্রয় করে উক্ত সম্পত্তি কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা লিপ্ত হলে আমরা ওবাইদুল হক চৌধুরী এবং তৎ বোনদ্বয়ের ওয়ারিশগণ ১৯৬৬ সালে জমি পুণ:উদ্ধারের জন্য আদালতের ধারস্থ হয়।

এর পর নিম্ন আদালত ১৯৯১ সালের ৩১ জুলাই চৌধুরী ঘোনার মূল জমিদার ওবাইদুল হক চৌধুরী ও তার দুই বোন হুমুরা খাতুন ও হুমবুলারা খাতুনের পক্ষে রায় প্রদান করেন। পরবর্তীতে ইলিয়াছ মিয়া গং অর্থাৎ হাফেজ মিয়া গং রায়ের বিরুদ্ধে আপীল মোকাদ্দমা নং ৭৯/১৯৯৯ দায়ের করেন।

এর পর ২০০২ সালের ৫ আগস্ট নিম্ন আদালতের রায়কে বহাল রেখে যুগ্ম জজ আদালত ওবাইদুল হক চৌধুরী গং এর পক্ষে রায় ও ডিক্রি প্রদান করেন। পরবর্তীতে আবার হাফেজ মিয়া গং মহামান্য হাই কোর্টে ৪২৫/২০০৩ নিম্ন আদালত এবং যুগ্ম জেলা জজ আদালত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। উচ্চ আদালত দীর্ঘ পর্যালোচনার পরে ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল নিম্ন আদালত এবং যুগ্ম জেলা জজ আদালতের রায়কে পুনঃবহাল রেখে হাফেজ মিয়া গং দের আপিল খারিজ করে দেন।

শরিফ উদ্দিন শাহ নেওয়াজ বলেন, দীর্ঘ বিরোধের সুযোগ নিয়ে সাবেক এমপি কাজলদের পরিবার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও গায়ের জোরে এসব জমি জোরজবর দখলে রাখেন। ২০১৯ সালে আদালতের রায়ের পর তারা আমাদের দখলে থাকা ৪০০একর জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা আবারও অব্যাহত রেখেছেন।

এ কারনে আমরা মালিক পক্ষ বিভিন্ন সময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার পুলিশ সুপার, র‍্যাব-১৫রসহ বিভিন্ন তপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু টাকা ও পেশি শক্তির জোরে ভূমিদস্যুরা হামলা-মামলার হুমকি অব্যাহত রেখেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল হক চৌধুরী গংয়ের ওয়ারিশ মোজ্জামেল হক চৌধুরী, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ তালুকদার, জোয়ারিয়া নালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহান, সদরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লুতু মিয়ার ছেলে মো. শাহীন জাহান, মো. শরিফ নেওয়াজ, শাবেদ নুর চৌধুরী, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, কলিম উল্লাহ, রুকনুজ্জামান চৌধুরীসহ অন্যরা।

অভিযোগের বিষয়ে মশিউর রহমান রাজন বলেন, ওবায়দুল হক চৌধুরী গংদের ১৯০ একর জমি ছিল। কিন্তু তারা ২১০ একর জমি আমিসহ গ্রামের অন্যান্যদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এর ফলে তাদের আর জমি থাকার কথা নয়। আমার কাছে জমি ক্রয়ের সব কাগজপত্র রয়েছে।

সন্ত্রাসী ভাড়া করা বা হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, প্রশাসনিক অনুকম্পা পেতে এসব মিথ্যাচার করছেন তারা।

ঈদগাঁও থানার ওসি মো. আবদুল হালিম বলেন, এমন তথ্য পুলিশের কাছে ছিলো না। ছিলো না কোন অভিযোগও। আজকে যেহেতু মাইকেই এ তথ্য প্রচার পেয়েছে, রাতেও টহল জোরদার করা হবে। আর গোপনে বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ