বোয়ালখালী প্রতিনিধি »
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোহাম্মদ মুছার পরিবার।
প্রায় অনাহারে অর্ধাহারে উপজেলার জ্যৈষ্ঠপুরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি কুঠিরে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী শাহাজাহান বেগম ছেলে-মেয়ে নিয়ে দিনাতিপাত করছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোহাম্মদ মুছা জীবদ্দশায় দিনমজুরী করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০০৯ সালে সরকার তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা (বহি নং-২২৮) দিলে এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মুখে হাসি ফুটে। ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল তিনি ৬৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করলে তাঁর স্ত্রী শাহাজাহান বেগম এই ভাতা পেয়ে আসছিলেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভাতা গ্রহণ করেন তিনি।
২০১৯ সালে ২৪ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত ১০০ সংখ্যক পরিপত্রে বর্ণিত তালিকায় মীর মোহাম্মদ মুছার নাম না থাকায় ভাতা স্থগিত করে দেয় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়।
ভাতা স্থগিত হওয়ায় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোহাম্মদ মুছার স্ত্রী শাহাজাহান বেগম ছেলে মেয়েদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি চলতি বছরের ২১ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সচিব বরাবরে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা স্থগিতের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেছেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ২ নভেম্বর বোয়ালখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই এর ‘ক’ প্রতিবেদন পুনঃযাচাইকরণ কমিটির সুপারিশকৃত ৩৯জন প্রার্থীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় অর্ন্তভূক্তির জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক বরাবরে সুপারিশের তালিকা প্রেরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন। ওই তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা মীর মোহাম্মদ মুছার নাম ৩৬ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোহাম্মদ মুছার স্ত্রী শাহাজাহান বেগম বলেন, ভাতা পাওয়ায় দুঃখের মাঝেও আলোর মুখ দেখেছিলাম। অন্ততঃ ছেলে মেয়ে নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছিলাম। গত ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভাতা পাচ্ছি না। অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছি। ২ ছেলেও বেকার। অনেক আবেদন করেও একটি চাকুরি মেলেনি। এখন কোথায় যাব ? কি করবো ? বুঝতে পারছি না এই বৃদ্ধ বয়সে।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোহাম্মদ মুছার (সাময়িক সনদ নং-১২৮৩৩৭) গেজেট না থাকার কারণে দীর্ঘ ১ বছরের বেশি সময় ধরে ভাতা স্থগিত থাকায় অন্ধকার নেমে এসেছে এ পরিবারের ওপর।
শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের আবদুল হাসেম ও মেহেরাজ খাতুনের ঘরে ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর জন্ম হয় মীর মোহাম্মদ মুছার। ১৯৭১ সালে তিনি দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৯৯ সালে ভিটেবাড়ি হারিয়ে সরকারের জ্যৈষ্ঠপুরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি কুঠিরে পরিবার নিয়ে ঠাঁই হয় তাঁর। দিনমজুরী করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। তাঁর ২ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে।
বাংলাধারা/এফএস/এইচএফ