রেলের পূর্বাঞ্চলে তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নামে দুদকের মামলা
প্রতি বছর বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাহিদাপত্র অনুযায়ী বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) প্রস্তুত করা হয়। এজন্য সিঙ্গেল এপিপি’র মাধ্যমে অধিকাংশ মালামাল কেনা হয়। পাহাড়তলী দপ্তরের এপিপি অনুমোদন করেন এডিজি (রোলিং স্টোক)। তবে পাঁচ লাখ টাকার নিচের এপিপি অনুমোদন করার এক্তিয়ার আছে ওই দপ্তরের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের নিজের। আর এরই সুযোগ নিয়ে মালামাল গ্রহণ না করে সরবরাহকারী ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে সরকারের ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাত করেন তারা।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকসহ রেলের তিন কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গত বুধবার মামলা করেছে।
চট্টগ্রাম দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় এ মামলা করা হয়েছে বলে জানান। এই মামলার বাদী দুদক চট্টগ্রাম প্রধান কার্যালয়ের উপ–পরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল কবীর পলাশ।
মামলায় বাংলাদেশ রেলওয়ে পাহাড়তলী দপ্তরের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ আহমেদ (৫৫), একই দপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলকর্তৃপক্ষের (বেজা) পাহাড়তলী দপ্তরের উপ–সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল আমিন (৪৮), পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস (৪৮) এবং চট্টগ্রামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির সত্ত্বাধিকারী এ এস এম ইকবাল মোর্শেদকে আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৩ মার্চ পাহাড়তলী ডিপো হতে ১৪৬ দশমিক ৯২৭ টনের কাঁচা লোহা ক্রয়ের চাহিদা প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠানো হয়। ওই অর্থবছরে বাজেট স্বল্পতার কারণে ১৪৬ দশমিক ৯২৭ টনের পরিবর্তে ৮৫ মেট্রিকটন ক্রয় করা যেতে পারে বলে ক্রয় পরিকল্পনার অনুচ্ছেদ ৫.১-এ উল্লেখ করা হয়। সেই অনুযায়ী প্রাক্বলিত ব্যয় নির্ধারণী কমিটি বাজার যাচাই করে প্রতি টন কাঁচা লোহার দাম ২ লাখ ৩৪ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করে। ওই মালামাল ক্রয়ের আনুমানিক সরকারি খরচ অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর এবং প্রতিবেদন দাখিল করা হয় একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর। সর্বশেষ মালামাল ক্রয়ের চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয় ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট।
মামলার বিবরণীতে আরও জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির প্রাক্কলন ব্যয়ের ৩১ শতাংশ কমে মালামাল সরবরাহের কথা বলেও মালামাল সরবরাহ না করে বিল নিয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠেছে আসে। ক্রয়ের প্রাক্বলন কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বাজার মূল্য ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ৬০০ টাকা। টেন্ডার কমিটির সদস্যরা ঠিকাদারের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে চাহিদাকৃত ১৪৬ দশমিক ৯২৭ টনের পরিবর্তে ৮৫ টন সরবরাহ দেখানো হয়। বাকি মালামাল সরবরাহ না করে সরকারের ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়।ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রাক্কলন ব্যয়ের ৩১ শতাংশ কমে মালামাল সরবরাহের কথা বললেও প্রতিষ্ঠানটি সেটি না মেনে উল্টো অর্ধেক মালামাল দিয়ে রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক এবং রেলের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহায়তায় সর্ম্পুন টাকা তুলে নেয়।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বিভাগ সিআরবি থাকাকালীন অবস্থায় স্ক্রাব কম মূল্য দেখিয়ে বিক্রি ও বিভিন্ন মালামাল ক্রয় অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।এই সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বিভাগ সিআরবিতে রয়েছে এক বিশাল ঠিকাদার সিন্ডিকেট।
দুদকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, মালামাল সরবরাহ না করে সরকারের ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অপরাধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এর ৫(২) ধারায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। তদন্তকালে এ ঘটনার সাথে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরকেও আইনের মুখোমুখি করা হবে বলেও তিনি জানান।