৬ নভেম্বর ২০২৫

স্কুলছাত্রীদের যৌন হয়রানি—অভিযুক্তকে বদলি করেই দায় সেরেছে চসিক

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারস্থ কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ অবরুদ্ধ করে উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ছাত্রী ও অভিভাবকরা।

এদিকে, কোনো রকম ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বদলি করেই দায় সেরেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

রবিবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদকে দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

যদিও চসিক সচিবের দাবি, এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।

এর আগে ২০১৩ সালের ১১ জুলাই ছবি সত্যায়িত করতে গেলে ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ করেন এক ছাত্রী।

এ নিয়ে তৎকালীন মেয়র মনজুর আলমকে লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। যৌন হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আহমেদকে ওই বছরের ১৭ জুলাই সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। একই সময় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় বিভাগীয় মামলা। কিন্তু ২ বছর পর অভিযোগকারী ছাত্রী বিদেশ চলে যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চাকরি ফিরে পান তিনি।

সচরাচর কোনও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠলে ওএসডি বা সাময়িক বরখাস্ত করলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় বা ্আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু একের পর এক অভিযোগ ওঠার করার পর কোনও ধরণের শাস্তি না হওয়ায় অপরাধে প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করেছেন সচেতন মহল।

এমন গুরুতর ঘটনা নিয়ে চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তাও কুলুপ এঁটেছেন মুখে। প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে চসিক সচিব খালেদ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান। যে কমিটিতে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে প্রধান করা হতে পারে।

ওএসডি বা বরখাস্ত না করে বদলি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি মূলত মেয়র মহোদয় এবং প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা দেখছেন। দায়িত্ব থেকে না সরিয়ে কেন বদলি করা হলো এর উত্তর আমার কাছে নেই। তবে তিনি যদি প্রকৃতপক্ষে অপরাধ করে থাকেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে রবিবার সকালে নগরের চকবাজারে কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রবিবার সকাল থেকে বিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং অভিবাবকরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় প্রধান শিক্ষক তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তাকে উপর্যপুরি বই খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ছুঁড়ে মারতে থাকে শিক্ষার্থীরা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় তিনি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে ওএসডি করে তদন্তের আশ্বাস দেন। এ আশ্বাসের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।

আন্দোলনকারীরা জানায়, শিক্ষক আলাউদ্দীন বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের হয়রানি করে থাকেন। অনেক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছাত্রীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ম্যাসেজও দিতেন। কিন্তু তার বিভিন্ন অসৎ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিতেন।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ